Kanyashree Portal

সুরক্ষা নেই কন্যাশ্রী পোর্টালেও, জেলাশাসকদের সর্তক করল রাজ্য

রাজ্য

ট্যাবের পর কন্যাশ্রী! 
রাজ্য সরকারের কন্যাশ্রী পোর্টালের সুরক্ষা নিয়েও প্রশ্ন উঠল। কেন্দ্রীয় সরকারের ইলেকট্রনিক্স ও ইনফর্মেশন টেকনোলজি মন্ত্রকের অধীন এনআইসি (ন্যাশনাল ইনফর্মেটিক্স সেন্টার) রাজ্য সরকারকে ইতিমধ্যেই কন্যাশ্রী পোর্টালের সুরক্ষা নিয়ে সর্তক করছে। অবিলম্বে কন্যাশ্রী পোর্টালকে সুরক্ষিত না করলে উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্ট বিপদে পড়ার আশঙ্কার কথাও জানিয়ে দিয়েছে এনআইসি। 
কেন্দ্রীয় সংস্থার কাছ থেকে সতর্কবার্তা পাওয়ার পরেই নড়েচড়ে বসে রাজ্য সরকার। ট্যাবের টাকা বণ্টনে কেলেঙ্কারির পরে এখন কন্যাশ্রী প্রকল্পে দুর্নীতি ঠেকাতে নির্দেশিকা জারি করল রাজ্য সরকার।
নারী ও শিশু কল্যাণ দপ্তর থেকে রাজ্যের সব জেলাশাসকদের জন্য একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা এনআইসি’র থেকে সর্তকতা পাওয়ার পরই রাজ্যের তরফে জেলাশাসকদের কাছে কন্যাশ্রী প্রকল্পে পোর্টালের জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশিকাতে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
নারী ও শিশু কল্যাণ দপ্তরের বিশেষ কমিশনার জেলাশাসকদের কাছে কন্যাশ্রী পোর্টালকে সুরক্ষিত করার জন্য ছয়টি পর্যায়ের রক্ষাকবচের নির্দেশ পাঠিয়েছেন। জেলাশাসকদের চিঠি দিয়ে এনআইসি’র তরফ থেকে আসা সর্তকবার্তার কথা জানিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার জন্য জেলাশাসকদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। 
কন্যাশ্রী পোর্টালকে সুরক্ষিত করতে ছয় দফা সর্তকতার মধ্যে প্রথমেই সন্দেজজনক সমস্ত অ্যাকাউন্টের অবিলম্বে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। অপরেটিং সিস্টেম, ব্রাউজার, প্লাগ ইনস সহ সফটওয়্যার সম্পর্কিত সব কিছুই সর্বশেষ ভার্সনকে আপডেট করে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পোর্টালকে বিপদে ফেলতে পারে এমন সমস্ত অবৈধ সফটওয়্যারকে এখনই বিচ্ছিন্ন করার কথা জানিয়ে দেওয়ার নিয়মিত সিস্টেমকে স্ক্যান করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 
রাজ্যের এক আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘রাজ্য সরকারের তরুণের স্বপ্ন প্রকল্পে ট্যাবের টাকা দেওয়ার থেকেও ঢের বেশি উপভোক্তা যুক্ত সরকারের কনাশ্রী প্রকল্পে। কন্যাশ্রীতে বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তর থেকে ছাত্রীদের অ্যাকাউন্টে টাকা দেওয়া হলেও নোডাল দপ্তর হিসাবে কাজ করে নারী ও শিশু কল্যাণ দপ্তর। তাই সর্তকবার্তা পাওয়ার পরই দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে।’’ 
ঘটনা হলো, ট্যাব কেলেঙ্কারি নিয়ে তোলপাড়ের মাঝে এনআইসি’র তরফে কন্যাশ্রী পোর্টালের সুরক্ষা সামনে আসায় বিড়ম্বনায় রাজ্য সরকার। ঘটনা হলো, এই সময়ই কন্যাশ্রী পোর্টালে বিদ্যালয় থেকে ছাত্রীদের যাবতীয় তথ্য আপলোড করা হয়ে থাকে। কিন্তু নারী ও শিশু কল্যাণ দপ্তর থেকে জেলাশাসকদের কাছে নির্দেশিকা পাঠানো হলেও বিদ্যালয়ের কাছে এখনও কোনও বার্তা দেওয়া হয়নি। রাজ্যের এক সরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান,‘‘ এই সময়ই কন্যাশ্রী পোর্টালে অষ্টম শ্রেণিতে পাঠরত থেকে সব ছাত্রীদের কন্যাশ্রীর তথ্য আপলোড করার হচ্ছে। কিন্তু ট্যাব কেলেঙ্কারির পর সর্তকতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে কী পদক্ষেপ নিতে হবে তার কোনও নির্দেশিকা এসে পৌঁছায়নি।’’
এরাজ্যে ২০১৩ সাল থেকে কন্যাশ্রী প্রকল্প চালু করে সরকার। অষ্টম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ‘কন্যাশ্রী ১’ ও দশম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পাঠরতা ছাত্রীদের কন্যাশ্রী ২ এইভাবে আর্থিক অনুদানের টাকা তুলে দেওয়া হয়ে থাকে। বিপুল সংখ্যায় ছাত্রীদের কন্যাশ্রী ১ প্রকল্পে সব মিলিয়ে ১০ হাজার টাকা ও কন্যাশ্রী ২ প্রকল্পে এককালীন ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়ে থাকে। বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কন্যাশ্রী পোর্টাল থেকে আবেদনপত্রের মাধ্যমে ছাত্রীদের কাছ থেকে বেশ কিছু তথ্য চেয়ে নেওয়া হয়। ১৮টি তথ্যের মধ্যে ছাত্রীর ব্যাঙ্কের নাম, শাখা, অ্যাকাউন্ট নাম্বার ও আইএএফএসসি কোড গুরুত্বপূর্ণ। এরসঙ্গে ছাত্রীর বাবার ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, ছাত্রীর জন্মের শংসাপত্র ও অভিভাবক(বাবা)কে দিয়ে অবিবাহিত শংসপত্র নেওয়া। বিদ্যালয় শিক্ষকদের অভিজ্ঞতা, অধিকাংশ এলাকা থেকে গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানরা অবিবাহিত থাকার সার্টিফিকেট লিখে দেন। সেখানে ছাত্রী বিবাহিত হলেও লিখিত সার্টিফিকেটে অনেক সময়ই অবিবাহিত লেখা থাকে। এক প্রধান শিক্ষকের কথায়, ‘‘ কন্যাশ্রী ক্লাব থেকে তথ্য যাচাই করতে গিয়ে ধরা পড়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক চাপে বিষয়টি বেশিদূর এগোয়নি।’’
বহু বিদ্যালয়ের শিক্ষকের কন্যাশ্রীর তথ্য যাচাই করতে গিয়ে কার্যত হয়রানির মধ্যে পড়ার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। মূলত আধার কার্ড ও ব্যাঙ্কের পাসবইতে নামের বানান ভিন্ন হওয়া থেকে সমস্যার শুরু হয়। হাওড়ার এক প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য,‘‘ দিনে ৮০ রকমের কাজ করতে হয়। ক্লাস থেকে শিক্ষকদের বাইরে রেখে কন্যাশ্রীর পোর্টালের জন্য তথ্য যাচাই করার কাজ করাতে হচ্ছে। বিদ্যালয়ে গ্রুপ ডি পদ ফাঁকা পড়ে আছে। করণিক পদে লোক নেই। ক্লাস না করিয়ে শিক্ষকদের দিয়ে কাজ করাতে গিয়ে বিপত্তির মুখে পড়তে হচ্ছে।’’
 

Comments :0

Login to leave a comment