জাপানের পরে প্রতিবেশি দক্ষিণ কোরিয়া। শেষ ষোলোয় আরেক এশীয় দল। তবে জাপান উঠেছে গ্রুপের শীর্ষে থেকে, পয়েন্টের বিচারেই। কোরিয়াকে উঠতে হয়েছে বেশি গোল দেবার সুবাদে।
পর্তুগালের বিরুদ্ধে ম্যাচের অতিরিক্ত সময় পেরিয়ে গিয়েছে। পরের পর্বে যোগ্যতা অর্জন করতে হলে অঙ্কের হিসেবে জিততেই হত দক্ষিণ কোরিয়াকে। স্কোর তখনও ১-১। দ্বিতীয়ার্ধে সেভাবেই খেলতেই পারেনি, যতটা প্রথমার্ধে তাঁদের খেলায় গতি ছিল।
ম্যাচের ৯১ মিনিটে পর্তুগালের কর্ণার শেষে নিজেদের বক্স থেকে প্রতি আক্রমণ শুরু দক্ষিণ কোরিয়া। নেতৃত্বে হিউন মিন সন। বেশ খানিকটা ছুটে বলটাকে ধরলেন। দু’জন পর্তুগালের ফুটবলার তাঁর পিছনে। ৭০ গজ দৌড়ানোর পর ডি বক্সের কাছাকাছি যেতেই তাঁকে ঘিরে ধরে তিনজন আ সেলেকাও ফুটবলার। অপেক্ষা করলেন কিছুক্ষণ। হাং হি-চান বক্সে ঢুকতেই সন তাঁর উদ্দেশ্যে ঠিকানা লেখা বল বাড়ালেন। এক ফুটবলারকে নাটমেগ করে। সামনে পর্তুগালের গোলকিপার দাঁড়িয়ে। ঠান্ডা মাথায় বল জালে জড়িয়ে দৌড় দেন হি-চান। কি অদ্ভুত সমাপতন! গত বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচে সনের একইরকম গোলে জার্মানিকে হারিয়েও পরের পর্বে যেতে পারেনি কোরিয়া। চার বছর পর সেই শেষ মুহূর্তের গোলে বিশ্বকাপে দ্বিতীয় রাউন্ডে যোগ্যতা অর্জন করল হিউন মিন সনের দক্ষিণ কোরিয়া। এক যুগ পর।
২-১ গোলে পর্তুগালকে হারিয়ে দেয় দক্ষিণ কোরিয়া। হেরেও গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে পরের পর্বে পর্তুগাল। যদিও প্রথমার্ধে ৪ মিনিটের মধ্যে রিকার্ডো হোর্তার গোলে এগিয়ে যায় পর্তুগাল। ২৭ মিনিটে সমতায় ফেরে কোরিয়া। কোরিয়ার হয়ে গোলটি করেন কিম ইয়ং-গন। পর্তুগাল দলে বেশ কয়েকটা পরিবর্তন করেছিলেন কোচ ফার্নান্দো স্যান্টোস। বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে খেলতে নেমেই গোল করলেন হোর্তা। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো না খেলার কথা থাকলেও শুরু থেকেই তিনি খেলেছেন। প্রথমার্ধে একটি ভালো সুযোগ পেয়েও গোলে পরিণত করতে পারেননি।
অন্যম্যাচে, উরুগুয়ে ঘানার বিরুদ্ধে ২-০ গোলে জিতেও শেষ ষোলোয় যেতে পারলো না। উরুগুয়ের হয়ে জোড়া গোল করেন জিওর্জিয়ান আরাসকেয়েটা। উরুগুয়ে এবং দক্ষিণ কোরিয়ার পয়েন্ট সমান, গোলপার্থক্যও সমান। নিয়ম অনুযায়ী এক্ষেত্রে যে দল বেশি গোল দিয়েছে উঠবে তারাই। দক্ষিণ কোরিয়া সেই নিয়মের সুবাদেই শেষ ষোলোয়।
রেফারির শেষ বাঁশি বাজার দুই মাঠে একই চিত্র। সন সহ দলের প্রত্যেক ফুটবলারের চোখে আনন্দাশ্রু। সন প্রথম ছুটে গিয়ে আলিঙ্গন করেন জয়সূচক গোল করা হি-চানকে। আসলে, তাঁদের বিশ্বাসই হচ্ছিল না, এভাবে খুলে যেতে পারে শেষ ষোলোর দরজা। আনন্দে কী করবেন বুঝতে উঠতে পারছিলেন না। গ্যালারিতেও দেখা গেল, কোরিয়ার একজন সমর্থককে পরের পর্বে যাওয়ার আনন্দে হাউহাউ করে কাঁদতে। সমর্থকদের অভিবাদন জানাতে ভোলেননি সনরা। অপরদিকে, স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণায় ডাগআউটে হাপুস নয়নে কাঁদছিলেন লুইস সুয়ারেজ। জার্সিতে মুখে ঢেকে। থামানো যাচ্ছিলো না। এক সাপোর্ট স্টাফ এসে সুয়ারেজকে এসে সান্ত্বনা দিলেও লাভ হয়নি। বিশ্বমঞ্চে আর কখনও দেখা যাবে না বর্ণময় তারকা সুয়ারেজকে।
Comments :0