সংসদের অচলাবস্থায় মোদীকে দায়ী করার বদলে রাহুল গান্ধীকেই আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। রাহুল গান্ধীর বিদেশে করা মন্তব্য নিয়ে হইচই পাকিয়ে ট্রেজারি বেঞ্চ থেকে সংসদ অচল করে রাখায় সারা দেশজুড়ে যখন মোদী সরকার ও বিজেপি’কে ধিক্কার জানানো হচ্ছে, তখন মমতা ব্যানার্জি বর্শাফলক তাক করেছেন কংগ্রেসের দিকে। রবিবার তিনি বলেছেন, রাহুল গান্ধী মোদীরই লোক, রাহুল গান্ধী থাকলে মোদীকে কেউ কোনোদিন হারাতে পারবে না।
সাগরদিঘির উপনির্বাচনে বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থীর কাছে তৃণমূল হারার পরে দিশাহারা মুর্শিদাবাদের তৃণমূল। জেলায় তৃণমূল নেতারা নিজেরাই মমতা ব্যানার্জিকে বলেছেন, ‘আমাদের দুর্দিন চলছে।’ এই অবস্থায় তৃণমূলকে চাঙ্গা করতে রবিবার বহরমপুরে তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা দপ্তরে দলের নেতা, বিধায়ক, সাংসদ ও জনপ্রতিনিধিদের ডাকা হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী বহরমপুরে না থাকলেও জেলা দপ্তরে ফোন লাউডস্পিকারে দিয়ে তৃণমূল নেতাদের উদ্দেশে ভাষণ দেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই তিনি সিপিআই(এম) এবং কংগ্রেসকে আক্রমণ করেন। টাকার খেলায় সাগরদিঘিতে তৃণমূলকে হারানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী থেকে রাহুল গান্ধীকে বিজেপি’র লোক বলে মন্তব্য করেন।
প্রায় রাইখস্ট্যাগের কায়দায় ভারতের সংসদে গণতন্ত্র হত্যায় দেশজুড়ে নিন্দার বর্শাফলক যখন মোদীর দিকে তখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা গেছে, ‘পার্লামেন্ট বিজেপি চলতে দিচ্ছে না কেন? কারণ রাহুল গান্ধীকে নেতা বানানোর জন্য। কারণ রাহুল গান্ধীর মুখটা থাকলে মোদীকে কেউ কোনোদিন হারাতে পারবে না। কারণ রাহুল গান্ধী হচ্ছে মোদীর সব থেকে বড়…, আর কিছু বললাম না বুঝে নিন। সবচেয়ে বড় টিআরপি।’
কিন্তু সাগরদিঘির মানুষ যেভাবে কংগ্রেস প্রার্থীকে জিতিয়েছেন, তৃণমূলকে হারিয়েছেন এবং বিজেপি’র জামানত জব্দ করিয়েছেন তাতে স্পষ্ট যে মানুষ তৃণমূল এবং বিজেপি’র সংযোগই ক্রমশ বুঝতে পারছেন। এই সংযোগ আড়াল করতে মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেছেন, আমি শুনেছি আপনাদের ওখানেও নানা কমিউনাল সুড়সুড়ি দিয়েছে, বলে বেড়াচ্ছে আমরা কেন উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ধনকড়ের বিরুদ্ধে ভোট দিইনি। কারণ জেনারেল পলিটিক্স, রিজিওনাল পলিটিক্স, জেলা পলিটিক্স আলাদা। প্রতিভা পাতিল যখন রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন তখন কিন্তু তিনি কংগ্রেসের প্রার্থী ছিলেন, তখন কিন্তু মহারাষ্ট্রের উদ্ধব ঠাকরেরা বিজেপি থাকা সত্ত্বেও তাঁকে ভোট দিয়েছিল, কারণ তিনি মহারাষ্ট্রের লোক ছিলেন। আমরা ধনকড়কে ভোট দিলেও জিতত, না দিলেও জিতত। তিনি আমাদের রাজ্যপাল ছিলেন। তিনি কম খারাপ কথা আমাদের বলেননি, এখনও বলছেন। তা সত্ত্বেও আমরা ওনার বিরুদ্ধে ভোট দিইনি। এখানে বিজেপি কংগ্রেস সিপিএম পরিকল্পিতভাবে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘুদের খেপিয়ে তুলছে। সংখ্যালঘুদের জন্য কী করেনি তৃণমূল! স্কলারশিপ, ইমাম ভাতা, মোয়াজ্জেম ভাতা থেকে শুরু করে কী করিনি!
সাগরদিঘিতে হেরে মমতা ব্যানার্জি যে বিপদ সংকেত চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছেন তা বোঝা গিয়েছিল আগের দিনেই। সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হয়ে যায় যে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মুর্শিদাবাদের তৃণমূল নেতাদের ভূমিকা নিয়ে রীতিমতো প্রশ্ন তুলেছেন। এদিন ফোনের ভার্চুয়াল সভাতে তৃণমূল নেতাদের সেই প্রসঙ্গ উত্থাপন করতে বলতে শোনা যায় ‘দিদি আমাদের সম্মানহানি হয়েছে।’
এরপরে মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে সাংবাদিকদের আক্রমণ করেন তাও নজিরবিহীন এবং কেবলমাত্র উত্তর প্রদেশের যোগীরাজত্বের সঙ্গেই তুলনীয়। মমতা ব্যানার্জি বলেন, একদল সাংবাদিক পে রোলে আছে, তারা মিথ্যা কথা রটিয়েছে। আমি এসব কিছুই বলিনি। আমরা হেরেছি, ঠিক আছে। তারপরে ইচ্ছাকৃতভাবে কাদা ছুঁড়েছে। এই ধরনের মিসলিডিং নিউজ করলে আপনারাও এফআইআর করতে পারেন। কোনও ভুল বোঝাবুঝি যেন না থাকে।
তৃণমূলের নেতাদের দুর্দশা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জন্য সাংবাদিকদের এভাবে হুমকি দিলেও মুর্শিদাবাদের তৃণমূলের ভিতরে দ্বন্দ্ব কোনও জায়গায় রয়েছে তারও ইঙ্গিত পাওয়া গেছে মুখ্যমন্ত্রীর কথাতেই। পঞ্চায়েত নির্বাচনে টিকিট বিলি নিয়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে মুর্শিদাবাদে কী কাণ্ড ঘটতে পারে তা বুঝে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘কেউ কেউ রটাবে যে তিনি পঞ্চায়েতে টিকিট দেবেন। কিন্তু ওটা আমি নিজে দেখবো।’
Comments :0