Manipur Violence

হিংসা থামছে না মণিপুরে, নিহত পুলিশকর্মী সহ ৫

জাতীয়

Manipur Violence


বিশ্বজিৎ দাস: গুয়াহাটি

ফের অশান্ত হয়ে উঠেছে মণিপুর। বুধবার রাজ্যের দুই জেলায় বড় ধরনের হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে। ভারত-বার্মা সীমান্তবর্তী টেঙনৌপাল জেলার জেলা সদর মোরে শহরে বুধবার সকাল দশটা থেকে টানা গুলির লড়াই চলে। বিকাল পর্যন্ত গোলাগুলি চলে। এতে এক মহিলা পুলিশ কর্মী সহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন। টেঙনৌপালের পুলিশ সুপার লুইখান লানমেও জানান, পরিস্থিতি শান্ত হলেও সীমান্তের ওপারে গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। 
এদিন কাঙপকপি জেলার সাপেরমেইনায় দুটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেন স্থানীয় কয়েকজন যুবক। জানা গিয়েছে, নাগাল্যান্ডের ডিমাপুর শহর থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের নিয়ে ৬৪টি বাস ইম্ফলের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। এরমধ্যে ৩৪টি বাস সিআরপিএফ’র। বাকি ৩০টি বাস মণিপুর সরকারের। জওয়ানরা কাঙপকপি জেলার সাপেরমেইনা বাজারে এসে দুপুরের খাবার খেতে গাড়ি দাঁড় করান। তখন এলাকায় গুজব ছড়ায় বাসে করে কুকি যুবকদের তুলে নেওয়া হচ্ছে। এই গুজব ছড়িয়ে পড়তেই প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষ বাসগুলি ঘিরে কুকি যুবকদের খোঁজ শুরু করেন। এরমধ্যে কয়েকজন যুবক মণিপুর সরকারের দুটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। তবে কেন্দ্রীয় বাহিনী পরিস্থিতির মোকাবিলা করায় কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

অবশ্য মোরে শহরে গোলাগুলির ঘটনার সূত্রপাত রাজ্য পুলিশের কয়েকজন কমান্ডোর ভূমিকাকে কেন্দ্র করে বলে অভিযোগ। কুকি নিবিড় টেঙনৌপাল জেলায় মেইতেই গোষ্ঠীর পুলিশ কমান্ডো মোতায়েন করা হয়েছে। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, মেইতেই কমান্ডোরা কুকিদের নানাভাবে হেনস্তা করে। বুধবার সকালে মোরে শহরের দোকানিরা বাজার খুলতে শুরু করলে কমান্ডোরা বাধার সৃষ্টি করে। কয়েকজন দোকানিকে মারধর করেন কমান্ডোরা। এই খবর পেয়ে প্রায় দুই হাজার মানুষ শহরে এসে কমান্ডোদের ঘিরে ধরেন। হঠাৎ করে গোলাগুলিও শুরু হয়। এতে চারজন সাধারণ মানুষ ও একজন মহিলা পুলিশ নিহত হয়েছেন। জখম অন্তত দশজন বলে জানা গিয়েছে। এই ঘটনায় উত্তেজিত জনতা মোরে শহরে থাকা বন বিভাগের কার্যালয় ও আবগারি বিভাগের কার্যালয় সহ প্রায় কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। আগুনে ৩০টি বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। তবে আরেক পক্ষ দাবি করেছে, নিহত চারজন কুকি উগ্রপন্থী। এই পক্ষের দাবি, বার্মা থেকে কুকি উগ্রপন্থীরা মোরে শহরে এসে পুলিশের সঙ্গে গুলির লড়াই শুরু করে। পালটা জবাব দেয় পুলিশও। কিন্তু এই দাবি যদি সত্যি হয়, তাহলে এনিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। কারণ, গত ২৯ মে চারদিনের রাজ্য সফরে এসে মণিপুরে ভারত-বার্মা সীমান্ত সিল করার নির্দেশ দিয়ে গিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ।

মণিপুরের আন্তর্জাতিক সীমান্ত উন্মুক্ত। মোরে শহরের বুক চিরে যাওয়া নদীর উপর একটি সেতু রয়েছে। এই সেতুটি দু-দেশের বন্ধুত্বের স্মারক হিসাবে পরিচিত। দু-দেশের সীমান্ত লাগোয়া গ্রামের মানুষরা ওই সেতু দিয়ে পারাপার করে বাজারহাট করেন। এজন্য পাসপোর্ট কিংবা ভিসার প্রয়োজন হয় না। শুধু খাতায় নাম-ঠিকানা লিখে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য যাতায়াত করা যায়। কিন্তু সাম্প্রতিক হিংসাত্মক ঘটনা শুরুর পর অমিত শাহর নির্দেশে সীমান্ত সিল করার পাশাপাশি সীমান্তে কড়া প্রহরা বসানো হয়েছে। সীমান্ত এলাকা ড্রোনে নজরদারি চলছে। প্রশ্ন উঠেছে, নিরাপত্তার ফাঁক গলে ওপার থেকে উগ্রপন্থীরা কী করে মণিপুরে ঢুকছে? তবে পুলিশের পক্ষ থেকে এখনও কিছু বলা হয়নি।

এদিকে, মণিপুরে মেইতেই উগ্রপন্থীদের হাতে অস্ত্র পাচার করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েছে নাগাল্যান্ডের এক পুলিশ কর্মী। তাঁর নাম মাইকেল ইয়ানথান। নাগাল্যান্ড পুলিশের ডিজি রুপিন শর্মা একথা স্বীকার করে বলেন, ইয়ানথান ২ হাজার ৪৮০টি অস্ত্র ও গোলাবারুদ মণিপুরের উগ্রপন্থীদের হাতে পাচার করেছে। ইয়ানথানের উপর সন্দেহ হওয়ায় তাঁর পেছনে গোয়েন্দা লাগানো হয়। এদিন সে হাতেনাতে ধরা পড়ে। ইয়ানথানকে সঙ্গে সঙ্গে চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পুলিশ তাঁকে জেরা করছে।
এদিকে, মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং রাজ্যের পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হয়ে নিজেই বেসামাল হয়ে পড়েছেন। রাজ্যের পরিস্থিতির দায় এতদিন কুকি উগ্রপন্থীদের উপর চাপিয়ে ছিলেন। মাঝখানে বার্মা ও চীনের উপর দোষ চাপিয়েছেন। এখন নিজের দলের বিধায়কদের উপর দোষ চাপানো শুরু করেছেন। বুধবার এক সরকারি অনুষ্ঠানে সিং বলেন, ‘বিজেপি’র এক বিধায়ক তাঁকে বদনাম করতে নানা ধরনের ভিডিও প্রকাশ করছেন। উনি মুখ্যমন্ত্রিত্বের লোভে আমার বদমাম ছড়াচ্ছেন। কিন্তু আমি সহজে মুখ্যমন্ত্রী পদ ছাড়বো না।’ কোনও বিধায়ককে উদ্দেশ্য করে বীরেন সিং মন্তব্য করেছেন, তা এখনও স্পষ্ট হয়নি। তবে নিজের দলের বিধায়কদেরও যে তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।


 

Comments :0

Login to leave a comment