অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের বিক্ষোভের মুখে পড়লেন রাজ্যের মন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাতো। শনিবার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গড়বেতায় সিডিপিও-র কাছে স্মারকলিপি দিতে গিয়েছিলেন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা। তাদের বিক্ষোভ ডেপুটেশন চলাকালিন তাদের সামনে এসে কৈফিয়ত চাওয়ায় বিক্ষোভের মুখে পড়েন এলাকার তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাত। একের পর এক বঞ্চনার তথ্য তুলে পাল্টা কৈফিয়ত চাওয়ায় মন্ত্রীর মেজাজ নিমেষেই ফিকে হয়ে যায়। হাসি মুখে বিক্ষোভ স্থল ছেড়ে পালিয়ে যান মন্ত্রী। ঘটনা গড়বেতা ৩ নম্বর ব্লক দপ্তর চন্দ্রকোনারোডের সিডিপিও দপ্তরের সামনে।
বিক্ষোভকারী আইসিডিএস কর্মীরা বলেন, এই সরকার তাদের প্রতি সীমাহীন বঞ্চনা যেমন করছে তেমনি কাজের বোঝা বাড়িয়ে দিনে দিনে ১০-১২ ঘন্টা কাজ করাতে বাধ্য করছে। এর আগেও সমস্যাগুলি নিয়ে বারে বারে ডেপুটেশন দেওয়া হলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সেই কারণে শনিবার সিডিপিও আধিকারীককে ডেপুটেশন দেওয়ার কর্মসূচি চলাকালিন হঠাৎ মন্ত্রী হাজির হয়ে প্রশ্ন করেন কেনো বিক্ষোভ করছেন এখানে। এসব আর চলবে না। শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে কাজে মন দেওয়ার কথা বলেন, হুমকির সুরে। মন্ত্রী দাবি করে বলেন রাজ্য সরকার ও মুখ্যমন্ত্রী অনেক কিছু করেছে।
বিক্ষোভকারীরা পাল্টা বলেন, এখনও কি মোবাইল রিচার্জ ১৬৬ টাকায় করা যায়, যাহা সরকার আমাদের দেয়। আপনার জানা থাকলে সেই কোম্পানির নাম বলুন। পশন ট্রেকারের দৈনিক তথ্য পাঠানো কাজে ফাইব জি মোবাইল দরকার। কেন্দ্র সরকার সেই বাবদ ২০১৯ সালে ৮ হাজার এবং পরে ২০২৩ সালে ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ করে প্রতিটি অঙ্গন ওয়াড়িকর্মীর জন্য। রাজ্য সরকার কেনো আজ প্রর্যন্ত সেই মোবাইল কেনার বরাদ্দ টাকা না দিয়ে কাজের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে হেনস্তা করছে, সময় মতো তথ্য না পৌঁছানোতে। এমনকি নেট ওয়ার্ক দূর্বল থাকার কারণে সেই তথ্য সময় মতো না পৌঁছালে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের মাস মাইনে থেকে বেতনও কেটে নিচ্ছে। বিধায়ক মন্ত্রীদের ভাতা বাড়ে আর আমাদের ৬ হাজার ৫৫০ টাকা থেকে ৭ হাজার ১০০ টাকার মাইনে দিয়ে কাজ করায়। বিক্ষোভ কারীরা বলেন, আপনি আমাদের এলাকার বিধায়ক ও মন্ত্রী। চলুন গ্রামে আইসিডিএস কেন্দ্র গুলি কেমন পরিকাঠামো দেখবেন। ব্লকের ১৩২টি কেন্দ্রের মধ্যে ৭২টি কেন্দ্রে রান্নার ঘর নেই। কেন্দ্রের উঠানে বা কারোর বাড়ির উঠানে ত্রিপল টাঙ্গিয়ে এই বর্ষায় মিড ডে মিলের রান্না করতে হয়। বহু কেন্দ্রে সবার বসে ক্লাস করার মতো পরিকাঠামো নেই।
পশ্চিমবঙ্গ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ইউনিয়নের লিফলেট দেখিয়ে মন্ত্রীকে বলা হয়, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, কেরালা, তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যে বেতন ১২-১৪ হাজার করে বেতন দেওয়া হয়। আমাদের রাজ্যে তার অর্ধেক বেতন দিয়ে কাজের বোঝা চাপিয়ে বঞ্চনা করা হচ্ছে এবং ফোনের বরাদ্দ টাকাও বাইপাশ করেছে সরকার।
অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা দাবি করে বলেন, তাদের সরকারি গ্রুপ ডি কর্মচারি হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক। ন্যূনতম বেতন ২৬০০০ টাকা দিক। এছাড়া তারা সিপিডিও আধিকারীকের কাছে কৈফিয়ত চান ৫০কেজি চালের বস্তা সরকারি সিল থাকা অবস্থায় তাতে ৮-১২ কেজি করে চালের পরিমান কম থাকছে। ৫ কেজি ডালের ব্যাগে এক থেকে দেড় কেজি পরিমান কম থাকছে। শিশু ও প্রসূতির পুষ্টির খাদ্যে এমন দুর্নীতি, বাজারদর অনুযায়ী বরাদ্দ বাড়ানো এবং জ্বালানি খরচের বরাদ্দ বাড়ানোর দাবিতে সরব হন। মন্ত্রীকে সরাসরি অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের প্রশ্ন, সরকারি আধিকারিকদের হাত-পা বাঁধা! কি করছেন আপনি মন্ত্রী হয়ে। আর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কেনো নীরব। যদিও মন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাতো বলেন, আমাকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখায়নি। ওদের কাছে আমি নিজেই গিয়ে ওদের সমস্যার কথা জানতে চেয়েছিলাম। ওরা ওদের কথা বলেছে। তাতে ক্ষোভ ছিলো।
এই ঘটনার পর গড়বেতা ৩ নম্বর ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি চিন্ময় সাহা সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘অঙ্গনওয়াড়িদের খুব সাহস হয়েছে। সমস্ত অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র যদি আমরা ভিজিট করি ওরাই বিপদে পড়বে। কেউ ওদের বাঁচাতে পারবে না। কাজ হারাবে আর জেলের ঘানি টানবে বলে হুমকি দেন।
Minister Srikanth Mahat
গড়বেতায় বিক্ষোভের মুখে মন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাত

×
Comments :0