প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহর প্রিয় পাত্র মণিপুরের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং বছরের শেষ দিনে সরাসরি রাজ্যবাসীর কাছে রাজ্যের ও রাজ্যবাসীর দুঃসহ পরিস্থিতির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। আর এই ক্ষমা প্রার্থনার মধ্য দিয়ে তিনি নিজেই কার্যত স্বীকার করে নিলেন রাজ্য সরকার পরিচালনায় তিনি নিতান্তই অযোগ্য ও অপদার্থ। আর সে কারণেই নিজের যোগ্যতা সম্পর্কে আত্মোপলোব্ধি হতে ১৯ মাস সময় কেটে গেছে। এই ১৯ মাসে গোটা মণিপুর তছনছ হয়ে গেছে। জাতি দাঙ্গার আগুনে ঝলসে মণিপুর আড়াআড়িভাবে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে গেছে। একদিকে ইম্ফল উপত্যকার সমতলে মেইতেই অন্যদিকে পাহাড়ি অঞ্চলে কুকি জনজাতিরা। এতকাল উভয় গোষ্ঠীর মানুষই সমতল ও পাহাড়ে বিশেষ করে পাহাড়-সমতলের সংলগ্ন এলাকায় বসবাস করলেও বীরেন সিংয়ের নেতৃত্বে বিজেপি সরকার তাদের ভাগ করে আলাদা করে দিয়েছে। উভয় গোষ্ঠীকেই পরস্পরের শত্রু বানিয়ে দিয়েছে। আরএসএস-বিজেপি’র বিভাজনের রাজনীতির পথ ধরে সংখ্যাগুরু মেইতেইদের কুকিদের বিরুদ্ধে মেরুকরণ করে ভোটে জেতার জমি উর্বর করেছে বীরেন সিংয়ের সরকার। সেই জন্যই হিংসাদীর্ণ রাজ্যে খুন-সন্ত্রাসের অবাধ রাজত্ব প্রতিষ্ঠা হলেও শতশত মানুষের জীবনহানি হলেও, হাজার হাজার মানুষ ভিটে মাটি ছাড়া হলেও মোদী-শাহর চোটে বীরেনের নম্বর কমেনি। সমস্ত বিরোধী, রাজ্যের মানুষ, এমনকি বিজেপি’র ভেতর থেকেই বীরেনের অপসারণের জোরালো দাবি উঠলেও তিনি মুখ্যমন্ত্রী পদে বহাল রয়ে গেছেন শুধুমাত্র মোদী-শাহর সৌজন্যে। আসলে বীরেন সিং স্বাতন্ত্র্য ও স্বকীয়তা নিয়ে সরকার চালানোর ক্ষেত্রে যতটা উপযুক্ত তার থেকে অনেক বেশি যোগ্য কাঠের পুতুল হয়ে মোদী-শাহর সুতোর টানে নাচতে। বীরেন সিং ছাড়া দ্বিতীয় কেউ নেই যার উপর মোদী-শাহরা ভরসা করতে পারেন। তাই রাজ্য রসাতলে গেলেও বীরেন সিং থেকে গেছেন নিজের জায়গাতেই। বীরেনের অযোগ্যতা এবং অপদার্থতার দায় তাই মোদী-শাহর উপরই বর্তায়। তাই বীরেন সিংয়ের ক্ষমা চাওয়া প্রকারান্তরে মোদী-শাহদের ক্ষমা চাওয়ারই শামিল। তবে কি মোদী-শাহরাই বীরেন সিংকে দিয়ে নিজেদের দায় ঝেড়ে ফেলার ব্যবস্থা করলেন।
মণিপুরে গত ১৯ মাস ধরে যা চলছে তাতে সেখানে কোনও সরকার বা প্রশাসনের অস্তিত্ব আছে বলেই মনে হয় না। সমস্ত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান অকেজো হয়ে গেছে। এক বছরে বিধানসভার অধিবেশন বসেছে মাত্র একবার তাও মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য। রাজ্য সরকারের বেশিরভাগ মন্ত্রকই ঝাঁপ বন্ধ করে বসে আছে। অনেক মন্ত্রী দপ্তরে আসাই বন্ধ করে দিয়েছেন। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। সরকারের উপর আস্থা নেই শাসক দলেরই একাংশের। রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে মন্ত্রী-বিধায়করাই নিরাপদ নন। খোদ মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতেই হামলা হয়েছে একাধিকবার। এমন একটি ব্যর্থ ও অপদার্থ সরকারের অধীনে ব্যর্থ রাজ্য মণিপুর ধ্বংসের কিনারায় এসে পৌঁছেছে। ১৯ মাস ধরে হিংসার আগুনে জ্বলতে থাকলেও মোদীরা নীরব। চোখের সামনে মণিপুরের মানুষ বিপন্নতায় ডুবতে থাকলেও কেন্দ্র কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। অর্থাৎ মণিপুরকে হিংসার উন্মত্ততায় ছেড়ে দিয়েছে বীরেন সিংকে সামনে রেখে নরেন্দ্র মোদীরাই। তাই সব বিষয়ে কথা বললেও মণিপুর নিয়ে মোদী কোনও কথা বলেন না। দেশের সর্বত্র ঘুরে বেড়ালেও এবং পরপর বিদেশ ভ্রমণ করলেও ১৯ মাসে তার কয়েক ঘণ্টা সময়ও হয়নি মণিপুরে পা রাখার। যদিও মণিপুরে শান্তি প্রতিষ্ঠায় মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস ফেরানোর দায়িত্ব শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রের। তাই ক্ষমা চাওয়া দরকার প্রধানমন্ত্রীর। এবং তাকে ক্ষমা চাইতে হবে মণিপুরে গিয়েই।
Manipur
মণিপুরে গিয়ে ক্ষমা চান মোদী
×
Comments :0