ভিনজাতের ছেলের সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছে মেয়ে। এই ‘অপরাধে’ ছেলের বাবা-মা’কে পিটিয়ে মেরে ফেললো মেয়ের বাড়ির লোকজন। শুক্রবার নৃশংস ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর প্রদেশের সীতাপুর জেলায়। মাঝ বয়সি মুসলিম দম্পতিকে খুনের ঘটনায় রবিবার পর্যন্ত ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সীতাপুরের পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট চক্রেশ মিশ্র রবিবার জানান, নিহত দম্পতির নাম আব্বাস আলি এবং কামরুল নিশা। তাঁদের ছেলে সৌকতের সঙ্গে বহুদিন ধরেই প্রতিবেশী একটি হিন্দু পরিবারের মেয়ের সম্পর্ক ছিল। ২০২০ সালে একবার তারা দু’জনে মিলে পালিয়ে গিয়েছিল। তখন মেয়েটি সাবালিকা ছিল না। ফলে মেয়ের বাড়ির লোকজনের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তাদের খুঁজে বের করে সৌকতকে জেলে পাঠায়। এর মধ্যে চলতি বছরের গোড়ায় জোর করে অন্য জায়গায় মেয়েটির বিয়ে দেয় তার পরিবার।
তেরো মাসের কারাদণ্ড শেষে ২৮ বছর বয়সি সৌকত বাড়ি ফিরে এলে ফের একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়। ইতিমধ্যে ১৮ বছর পেরোনো সেই মেয়ে তার শ্বশুরবাড়ি থেকে পালিয়ে যায় সৌকতের সঙ্গে। মেয়ের বাড়ির লোকেরা চলতি বছরের এপ্রিলে আবারো এফআইআর দায়ের করে সৌকতের বিরুদ্ধে। পুলিশ ফের গ্রেপ্তার করে সৌকতকে। তবে এবার মামলা চলাকালীন আদালতে দাঁড়িয়ে মেয়েটি বিচারককে স্পষ্ট জানায়, সে সাবালক। সৌকতকে সঙ্গী করেই সে জীবন কাটাতে চায়। এরপরেই গত ১৬ আগস্ট সৌকত জামিনে ছাড়া পায়। তারপরেই দু’জনে মিলে অজানা কোনও জায়গায় চলে যায়।
এসপি জানান, এসবের মধ্যেই গত শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ মেয়ের বাবা সহ পাঁচ ব্যক্তি সৌকতের বাড়িতে ফের চড়াও হয়। সৌকতকে তাদের মেয়ের থেকে দূরে রাখার জন্য হুমকি দিতে থাকে তারা। অভিযোগ, এই সময়ে খানিকক্ষণ কথা কাটাকাটির পরে আব্বাস আলি ও কামরুল নিশার ওপর লোহার রড ও লাঠি নিয়ে চড়াও হয় মেয়ের পরিবার। রড ও লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধরে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ওই দম্পতি।
নিহত দম্পতির কন্যার অভিযোগের ভিত্তিতে হরগাঁও থানায় হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে জানিয়ে এসপি বলেন, এদিন পর্যন্ত শৈলেন্দ্র জয়সওয়াল, পাল্লু এবং অমরনাথ নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরও দু’জনকে খুঁজছে পুলিশ। গ্রামে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এফআইআরে নিহত দম্পতির মেয়ে বলেছেন, ‘‘অভিযুক্তরা বাড়িতে ঢুকেই আমার বাবা এবং মা’কে মারধর শুরু করে। তাদের মারেই শেষপর্যন্ত বাবা-মা মারা যান। ওরা আমাকেও মারতে চেয়েছিল, কিন্তু আমি পালিয়ে গিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছি। হামলার সময়ে আমি চিৎকার করে সকলকে ডাকার চেষ্টা করি। কিন্তু কেউই আমাদের বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসেনি। খুনের পরে বাবা-মা’র দেহ আমাদের বাড়িতে ফেলে রেখে ওরা চলে যায়।’’
উল্লেখ করা যেতে পারে, কেন্দ্রে মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশের নানা প্রান্তে পিটিয়ে খুনের ঘটনা বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে। সঙ্ঘ পরিবারের মদতে কখনো স্বঘোষিত গো-রক্ষকরা, কখনো বা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাবাজরা সংখ্যালঘু মানুষের ওপর প্রাণঘাতী আক্রমণ চালিয়েছে। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে সুপ্রিম কোর্টও এব্যাপারে প্রকাশ্যে উদ্বেগ জানিয়েছে। তবে আইন-আদালতকে তোয়াক্কা না করেই শাসকদলের প্রশ্রয়ে এখনো এই ধরনের হামলা চলছে।
গত বৃহস্পতিবার রাতেও রাজস্থানের আলোয়ার জেলার রামপুরে ওয়াসিম নামে ২৭ বছর বয়সি এক যুবককে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে একদল লোক। বেআইনিভাবে কাঠ কাটার অপবাদ দিয়ে দলবদ্ধ প্রহারে গুরুতর জখম হন ওয়াসিমের দুই সঙ্গীও।
Comments :0