মুক্তধারা
কবিতা
নভেম্বর ট্রিলজি
-------------------------
চয়নিকা বিশ্বাস
-------------------------
১২ নভেম্বর ২০২৫, বর্ষ ৩
১. ধর্মতলায় এক সন্ধ্যে
ধর্মতলা আজ
মফস্বলের মতো শান্ত।
ট্রামের লোহার গায়ে
দিনের পুরোনো রোদ শুকিয়ে আছে।
একটা বুড়ো লোক—
পান চিবোতে চিবোতে—
বলে উঠলেন,
“জানো তো, নভেম্বর একসময়
মানুষকে বদলে দিত,
এখন শুধু ক্যালেন্ডার বদলায়।”
তার পাশে
এক ছাত্র
চশমার ভেতর থেকে
ইতিহাস মাপছিল—
কতটাটা জায়গা আজও
মানুষের দুঃখে ফাঁকা পড়ে আছে।
আর আমি—
দু’জনের মাঝখানে
নিজের ছায়াটাকেই দেখে ফেললাম—
খুব পুরোনো,
কিন্তু আশ্চর্যভাবে
কোনো পতাকার রং উত্তেজিত করছে না তাকে।
শুধু বাতাসে
একটা লাল পতাকা হঠাৎ
স্বপ্নের মতো দুলে উঠল;
কেউ যেন বলল
“এখনও সব শেষ হয়নি”—
কিন্তু কে বলল জানা গেল না,
ট্রামের ভেতরের আলো হঠাৎ জ্বলে উঠল।
২. স্বপ্নের গলিতে
গত রাতে
হঠাৎ স্বপ্নে
আমি লেনিনগ্রাদ গিয়েছিলাম।
বাড়িগুলো
গভীর জলের মতো কালো।
কোথাও হালকা, কোথাও বেগুনি
আলোয় ঘিরে রেখেছে শহরটাকে
সেই শহরটা
নিজেকে আঁচড়ে কামড়ে বলছে,
“আমি টিকে আছি,
কিন্তু ইতিহাসের নখের ওপর
ভালোই লাগছে।”
একটা বালতি হাতে
এক নারী দাঁড়িয়েছিলেন—
বালতিটাতে
জল নেই,
খালি।
আমি বললাম,
“আপনি জল নিতে এসেছেন?”
তিনি মৃদু হেসে বললেন,
“না—
ভবিষ্যৎ নিতে এসেছি।
জল তো
সোভিয়েত ভেঙে যাওয়ার দিন থেকেই
শুকনো।
ভবিষ্যৎটাই কেবল
অদ্ভুতভাবে ভেজা রয়ে গেছে।”
হঠাৎ
বালতির ভিতর থেকে
একটা মাছ লাফ দিয়ে উঠল—
কংক্রিটের রাস্তায়
আলো ছিটকে পড়ল।
আমি ভয় পেয়ে জেগে উঠলাম।
বালতির শব্দটা
এখনও মনে আছে।
মাছটার আলো
তার চাইতেও বেশি।
৩. একটা ব্যঙ্গাত্মক সকাল
আজ সকালে
স্টক এক্সচেঞ্জের গ্রাফটা
হঠাৎ চিৎকার করে উঠেছিল—
যেন লোহার পাত
হৃদয়ের গায়ে ঘষছে।
বাজারের মাঝে
দাঁড়িয়ে আছে
এক জনহীন ছায়া।
কারও নয়;
তবু সবার।
মানুষগুলো তাকে
দেখেও দেখল না।
ছায়াটা
একটানা একই কাজ করছিল—
চুপচাপ
শুধু
একটা দরজার সামনে দাঁড়াচ্ছিল,
যেটা
খুলতেই চাইছিল না।
দরজার ওপারে
একটা লাল আলো
হয়তো টিমটিম করছিল,
কিন্তু
সেটা নিশ্চিত কিনা
কেউ জানে না।
আমি হাঁটতে হাঁটতে ভাবলাম—
বিপ্লব মানে কি
শেষমেশ এটাই—
একটা ছায়া,
একটা দরজা,
একটা আলো—
যেটাকে
কেউ চোখে দেখে না
কিন্তু
হৃদয় অনবরত খুঁজে ফেরে?
রাস্তার ওপরে
একটা পুরোনো পোস্টার
হাওয়ায়
শব্দ না করে ছিঁড়ে গেল—
তার ছেঁড়া দাগে
আমি দেখলাম
নতুন রং।
নামহীন।
কিন্তু ভবিষ্যতের মতো
ধৈর্যশীল।
Comments :0