প্রবন্ধ — মুক্তধারা, বর্ষ ২
উদাসীন থেকো না! সাড়া দাও
কৃশানু ভট্টাচার্য্য
১২ বছরের তৈমুর টিভির পর্দায় দেখতে পেল তার প্রিয় মাস্টার মশাই চিৎকার করে বলছেন, 'আমি যোগ্য'। ১৫ বছরের সুমিতা কোন এক সংবাদ মাধ্যমের সান্ধ্য তরজায় দেখতে পেল, তার প্রিয় জয়িতা দিদিমনি কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন আর তাকে বিদ্রুপ করার জন্য কোন এক অধ্যাপক চেঁচিয়ে বলছেন,' না না না না না! শেক্সপিয়ার বলেছিলেন,..." । চোয়াল শক্ত করে শিশু কিশোর গুলো বলে উঠছে," এ কোন সকাল- রাতের চেয়েও অন্ধকার!" বরফ শীতল গলায় কেউ বলছেন ,"কে বলেছে রাস্তায় থাকতে? বাড়ি যান ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত আপনি তো মাইনে পাবেন। আর যাদের একুল ওকুল দুকুল গেছে তাদের জন্য রিভিউ পিটিশন হবে। " বরফ শীতল গলায় তৈরি হচ্ছে প্রতিশোধের আগুন। কখন কোথায় কিভাবে জ্বলবে কেউ জানে না। এরাজ্যে চুরি দুর্নীতি কোন আলোচ্য বিষয় নয়। বিগত কয়েকটি নির্বাচন প্রমাণ করে দিয়েছে চুরি দুর্নীতি নিয়ে কথা বলে মানুষের মন জেতা যায়নি। বরং খুব বেশি করে বলতে হয়েছে ,বারেবারে মনে করিয়ে দিতে হয়েছে তুমি কে? এই মহাশূন্যে তোমার পরিচয় কি? তুমি হিন্দু? না তুমি মুসলমান? বারে বারে কে যেন কানে কানে বলে গেছে, তোমার ধর্ম তোমার জাত তাকে রক্ষা করতে পারলেই তোমার ভাতের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হবে। কিন্তু যখন এক্কাদোক্কা খেলতে খেলতে ভাতের থালাটাকেই কেউ কেড়ে নেয়, তখন ওই ধর্ম, ঐ জাত এই সমস্ত পরিচয় মুছে গিয়ে নামের আগে বসে 'বঞ্চিত চাকরিহারা ' বিশেষণ। দূরবীন কিংবা আতস কাঁচ দিয়ে চাল আর কাকর বাছাইয়ের কাজ শুরু হয় না, শেষও হয় না। যে মানুষ আজ ঘুমিয়ে আছে, নিশ্চিত থাকা যেতে পারে একদিন সে মানুষেরও ঘুম ভাঙবে। কারণ সময় ডাক দিয়েছে, জনসমুদ্র যেকোনো মুহূর্তে উত্তাল হবে। হতেই হবে। সে সমুদ্রের কলরোল পৌঁছে যাবে বন্দরে , বন্দরে। প্রশ্ন উঠবে শিক্ষা পরিকাঠামো উন্নতি করার জন্য কি কি করা উচিত ছিল ? তার কতটা করা হয়েছে। কোন পরিনামের দিকে গোটা রাজ্যকে কিম্বা রাজ্যের আগামী প্রজন্মকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে সে প্রশ্ন উঠবে। সবে আকাশে তারা দেখা যাচ্ছে। এরপর চাঁদও দেখা যাবে। অমাবস্যার চাঁদ নয়, ত্রয়োদশীর চাঁদ। নদীতে সমুদ্রে ডাক পাঠাবে জোয়ার। সেই ডাকে সাড়া দিতে হবে তোমাকেও , আমাকেও। উদাসীন থাকার দিন হয়তোবা শেষ হয়ে গেল।
মনে পড়ে যাচ্ছে কিশোর কবির সেই উচ্চারণ- " বেজে উঠল কি সময়ের ঘড়ি? ..."
Comments :0