প্রবন্ধ
মুক্তধারা
হে রাম!
কৃশানু ভট্টাচার্য
হ্যামলিনের বাশিওয়ালার মতন তিনি হাঁটছেন । এই ভারতের রুক্ষ মসৃণ মাটির উপর দিয়ে। ঠিক যেমনটি হেঁটে ছিলেন মীরাবাঈ শ্রীচৈতন্যদেব- এ দেশের সমাজ আর দিন বদলের ডাক দিয়ে। তিনি হেঁটে ছিলেন, হাঁটিয়েছেন।
তাঁর ডাকে সারাদেশ পথে নেমেছিল- একবার নয় ,বার বার! তিনি চিনিয়েছিলেন এই দেশকে, এই দেশের বাস্তবতাকে। সেই বাস্তবের অচেনা জমির উপর দাঁড়িয়ে এক অচেনা ঢঙে শুরু করেছিলেন দেশমাতৃকার শৃংখল মোচনের সংগ্রাম। সেই সংগ্রামের নানা নাম নানা রূপ। কখনো সেটা অহিংস অসহযোগ সত্যাগ্রহ আন্দোলন কখনো আইন অমান্য এবং সবশেষে ভারত ছাড়ো। কিন্তু বারে বারে এটাই প্রমাণিত হয়েছে তার ডাকে হাজার হাজার মানুষ রাজপথে নেমে সব ধরনের শারীরিক ঝুঁকি নিয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল। গণ আন্দোলনকে পরিচালনা করবার জন্য যে বিশেষ যোগ্যতার প্রয়োজন তা তার মধ্যে ছিল আর তাই তিনি নিজে হেঁটেছেন, সবাইকে হাটিয়েছেন।
তিনি পথ দেখিয়েছিলেন সারা পৃথিবীকে। শক্তির প্রদর্শনীর মধ্যে দিয়ে নয়, চিন্তা চেতনার বলিষ্ঠতার মধ্যে দিয়েই অর্জন করতে হবে যে কোন সংগ্রামের সাফল্য- একথাই তিনি বারে বারে বলেছেন, প্রমাণ করেছেন। সে কারণেই জাগতিক অনুপস্থিতির মধ্যেও আজও তিনি সারা পৃথিবীতে মানচিত্রের বেড়াজাল ভেঙে বিভিন্ন দেশে গণআন্দোলনের পথপ্রদর্শক। তিনি হেঁটেছেন, তিনি হাঁটিয়েছেন।
দুই উত্তরসূরীর আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব তাকে রক্তাক্ত করেছে। কাউকে তিনি গ্রহণ করেছেন কাউকে তিনি জাগতিক জীবনে বর্জন করলেও আজীবন স্নেহ এবং প্রশ্রয়ে লালন করেছেন। আবার সেই উত্তরসূরীদের মতের সঙ্গে তার অমিল প্রকাশ্যে কখনো বলেছেন, কখনো বলেননি। নি:সঙ্গ হয়েছেন, নিহত হয়েছেন। সে হত্যা কখনো মানসিক আর ৩০ শে জানুয়ারি ১৯৪৮ এ সে হত্যা জাগতিক। ১৪ ই আগস্ট ১৯৪৭ মধ্যরাত ই বোধ হয় তার প্রথম নিহত হবার দিন। আর বাকিটা সম্পূর্ণ হয়েছিল এর কয়েকমাস বাদে। সেদিন থেকে এদেশের মানুষের সামনে আর হ্যামলিনের বাশিওয়ালাও নেই, নেই বাশির সুর, বাঁশির ডাক । তখন থেকে একটাই শব্দ একটাই হা হুতাস।
হে রাম!
Comments :0