‘সোশিও ইকনমিক কাস্ট সেনসাস’, সংক্ষেপে এসইসিসি’র ভিত্তিতেই ঠিক হওয়ার কথা আবাস যোজনার টাকা কাদের দেওয়া হবে। এই আর্থ সামাজিক জাতভিত্তিক সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশ হয়নি। রাজ্যের সর্বত্র আবাস দুর্নীতির প্রতিবাদে
সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের রাজ্য সম্পাদক অমিয় পাত্রের ক্ষোভ, ‘‘এই জনসমীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশ হয়নি। অথচ এই রিপোর্টের ভিত্তিতেই আবাস প্রাপকদের তালিকা হওয়ার কথা। সেই কারণেই দেদার দুর্নীতি হয়েছে। যাঁদের আবাস যোজনায় ঘর পাওয়ার কথা, তাঁরাই বঞ্চিত।’’
আবাস যোজনা নিয়ে বিস্তর দুর্নীতির অভিযোগ আসছে পশ্চিমবঙ্গের সব জায়গা থেকে। পঞ্চায়েত, ব্লক অফিস ঘেরাও হচ্ছে। সিপিআই(এম) প্রতি গ্রামে আবাসের স্বচ্ছ তালিকার দাবিতে মিছিল করছে। টাকার বিনিময়ে পাকা ছাদের মালিকদের নাম ঢোকানো হয়েছে তালিকায়। আসল গরিব মানুষ বাদ। তৃণমূলের জালিয়াতি ধরা পড়েছে রাজ্যজুড়ে আন্দোলনে। সব গরিবের নাম আবাসের তালিকায় ঢোকানোর দাবিতে চলছে ঘেরাও, মিছিল।
সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অমিয় পাত্রের ব্যাখ্যা, ‘‘আমরা দীর্ঘদিনের ধরেই এসইসিসি রিপোর্ট প্রকাশের দাবি জানাচ্ছি। এই সমীক্ষা করলে বোঝা যায় যে কোন এলাকায় কত দরিদ্র মানুষ আছেন। তাঁদের আর্থ সমাজিক অবস্থান স্পষ্ট হয়। ফলে তার ভিত্তিতে আবাস যোজনায় কার বাড়ির প্রয়োজন আছে, আর কার নেই, সেটা পরিষ্কার হয়। বামফ্রন্ট যখন সরকারে ছিল তখন এই সমীক্ষা করা হয়েছে। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর ২০১৭-১৮ সালে ‘সোশিও ইকোনমি কাস্ট সেনসাস’ হলেও সেই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসেনি। ফলে কী জনগণনা হয়েছে, বা তাতে কে দরিদ্র আর কাকে দরিদ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি, তা স্পষ্ট নয়। তালিকা প্রকাশ্যে এলে তা সংশোধন করার জায়গা। কিন্তু রিপোর্ট প্রকাশ বা সংশোধন কোনটাই করেনি রাজ্য সরকার। ফলে দেদার দুর্নীতি হয়েছে। যাঁদের প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বাড়ি পাওয়া দরকার তাঁরাই বঞ্চিত।’
চারিদিকে যখন আবাস যোজনা নিয়ে দেদার দুর্নীতি ধরা পড়ছে তখন এসইসিসি’র রিপোর্ট প্রকাশের দাবি আরও জোরালো করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন পাত্র। তিনি বলছেন, ‘‘জনতাকে অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। তৃণমূল সরকার তাদের বঞ্চিত করছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সরকার সুপরিকল্পিত উপায়ে বঞ্চিত করছে। অধিকারের দাবিতে বামপন্থীদের সঙ্গে পথে নেমে আন্দোলনের আহ্বান তাই জানানো হচ্ছে সকলকে।
আবাস দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে রাজ্যে এসেছিল কেন্দ্রীয় গ্রামন্নোয়ন মন্ত্রকের প্রতিনিধি দল। বিভিন্ন জেলা থেক তথ্য সংগ্রহ করেছে। দরিদ্র নন, নিজের বাড়ি আছে এমন বহু লোকের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন জেলা থেকে ৪০ শতাংশেরও বেশি নাম বাদ গেছে। যারা অধিকাংশই তৃণমূল ঘনিষ্ঠ।
২০১৮ সালে যে এসইসিসি হয়েছিল, তৃণমূল সরকারের তত্ত্বাবধানে সেখানে ৫৩ লক্ষ ৮৬ হাজার ৪৮৩ জনের নাম নথিভুক্ত করা হয় প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায়। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার পর বাদ দিয়েছে ২৩ লক্ষ ২০ হাজার ০২৭ টি নাম। অর্থাৎ প্রায় ৪০ শতাংশ নাম বাদ গেছে গরমিলের জন্য। এখন ৩৩ লক্ষ ৬৬ হাজার ৪৫৬ জন প্রাপকের নাম নথিভুক্ত রয়েছে। যার মধ্যে প্রথম ধাপে ১১ লক্ষ ৩৬ হাজার ৪৮৮ জন আবাস যোজনায় বাড়ি পাবেন বলে জানাচ্ছে সরকার।
নিয়ম অনুযায়ী কেন্দ্রীয় প্রকল্পে সামাজিক নজরদারি থাকার কথা। তালিকা প্রকাশ হওয়ারও কথা। কিন্তু কেবল তালিকা প্রকাশের দাবি তুলে আন্দোলনে নামতে হচ্ছে। সিপিআই(এম)’র কর্মসূচিতে বেপরোয়া লাঠি চালিয়েছে পুলিশ। পার্টির বক্তব্য, সব গরিবের নাম তালিকায় না তোলা পর্যন্ত চলবে আন্দোলন।
Comments :0