Adani scam

কোন চাপে অন্য কর্পোরেট শেয়ার কিনেছে, উঠেছে প্রশ্ন

জাতীয়

আদানি-কাণ্ড ক্রমে ঘোরালো হতে থাকায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে এর হাত থেকে রক্ষার তাগিদে মুখ খুললেন স্বয়ং গৌতম আদানি। সংসদের ভেতরে-বাইরে আদানি-কাণ্ডে মোদীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।  আদানি গোষ্ঠীর চাঞ্চল্যকর উত্থানের পিছনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর সরকারের প্রত্যক্ষ অবদান নিয়ে আলোচনা নতুন নয়। মোদীকে চলতি কেলেঙ্কারির ছায়া থেকে বাঁচাতেই শুক্রবার গৌতম আদানি এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেছেন, মোদী ও তাঁর যোগাযোগ সম্পর্কে অভিযোগ ভিত্তিহীন। তাঁরা দু’জনেই গুজরাটের বাসিন্দা বলে এই অভিযোগ করা সহজ হয়।
২৪ জানুয়ারি হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টে আদানিদের শেয়ার লেনদেন, শিখণ্ডি সংস্থাকে দিয়ে কৃত্রিমভাবে শেয়ারের মূল্য বাড়ানোর কারবার ফাঁস হবার পর থেকেই শেয়ার বাজারে আদানিদের শেয়ারের দামে ধস নেমেছে। এ পর্যন্ত প্রায় ১০ লক্ষ কোটি টাকার লোকসান হয়েছে বিনিয়োগকারীদের। কিন্তু শুধু শেয়ার বাজারের মধ্যেই তার প্রতিক্রিয়া সীমিত নেই। আদানিদের কারবারে রাজনৈতিক যোগাযোগ সামনে আসছে। শেয়ার বাজারে ধসের পরেও আদানিদের ২০ হাজার কোটি টাকার ফলো আপ পাবলিক অফারে (এফপিও) শেয়ার বিক্রি হয়েছিল। দেখা গিয়েছিল, খুচরো বিনিয়োগকারী, মিউচ্যুয়াল ফান্ড না কিনলেও সব শেয়ার বিক্রি হয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য এই এফপিও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু অনুসন্ধানে সামনে এসেছে এই শেয়ারের বড় অংশ একেবারে শেষ মূহূর্তে কিনেছে দুই ভারতীয় রাঘববোয়াল কর্পোরেট সজ্জন জিন্দাল ও সুনীল মিত্তালের সংস্থা। প্রথমজন মূলত ইস্পাত, দ্বিতীয় জন মূলত টেলিকম ক্ষেত্রের বড় কর্পোরেট। কোনও এক মহলের নির্দেশে এক কর্পোরেটকে বাঁচাতে অন্য দুই কর্পোরেট এইভাবে শেয়ার কিনেছে। যদিও সাধারণভাবে তা বেনজির। আবুধাবির অর্থলগ্নি সংস্থা আইএইচসি-ও একেবারে শেষ মূহূর্তে ৪০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। সংবাদমাধ্যমে খবর, গৌতম আদানি স্বয়ং তাদের সঙ্গে কথা বলে রাজি করিয়েছিলেন। 
এই সঙ্গেই এই এফপিও-তে এমন সংস্থা বিনিয়োগ করেছে যাদের নাম হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টেই আছে। সেগুলি শিখণ্ডি সংস্থা এবং আদানিদেরই পয়সায় চলে। এলারা ক্যাপিটাল, মনার্ক নেটওয়ার্থ ক্যাপিটালের মতো সংস্থার মাধ্যমে আদানিরাই নিজেদের পাবলিক অফারের শেয়ার নিজেরা কিনেছে। আন্তর্জাতিক বাজারেও এই এফপিও-কে ‘রিগিং’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। 
দেশের মধ্যে প্রতিক্রিয়ায় মুখ খুলতে হয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে। আদানি গোষ্ঠীতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ঋণ নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ায় আরবিআই শুক্রবার জানিয়েছে, ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্র স্থিতিশীল রয়েছে। প্রত্যেক ব্যাঙ্কের ঋণের ওপরে আরবিআই’র নজরদারি আছে। বিভিন্ন মাপকাঠিতে এখনও পর্যন্ত স্থিতিশীলতার কোনও অভাব নেই। স্টেট ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, আদানি গোষ্ঠীকে দেওয়া তাদের ঋণের পরিমাণ ২৭ হাজার কোটি টাকা। যা তাদের মোট ঋণের এক শতাংশেরও কম। ব্যাঙ্ক অব বরোদা দাবি করেছে, আদানি গোষ্ঠীতে তাদের ঋণের পরিমাণ গত তিন বছরে কমে এসেছে।  
অন্যদিকে, আরও একটি বড় ধাক্কায় মার্কিন শেয়ার বাজারে আদানি গোষ্ঠীর মূল সংস্থা আদানি এন্টারপ্রাইজেসকে ‘সাসটেইনেবিলিটি সূচক’ থেকে সরিয়ে দিচ্ছে ডাউ জোনস। এর আগেই মার্কিন শেয়ার বাজারের পরিচালক ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ আদানির তিন সংস্থাকে ‘অতিরিক্ত নজরদারি ব্যবস্থার’ তালিকায় ফেলেছিল। ডাউ জোনস বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, শেয়ার লেনদেনের কারবারে অভিযোগের সংবাদ প্রকাশিত হতে থাকায় ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে এই সূচকে আদানিদের বাদ দেওয়া হবে। এই সূচক বিশ্বব্যাপী শেয়ার বাজারে একটি স্বীকৃত সূচক। 
আদানিদের নতুন মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহের চুক্তি। ২০১৭ সালে মোদীর সফরে এই চুক্তি সই হয়েছিল। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন পর্ষদ আদানি পাওয়ারকে চিঠি দিয়ে ওই চুক্তি পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে। ‘অতিরিক্ত দাম’ ধার্য করায় ওই চুক্তি নিয়ে পুনরায় আলোচনা চেয়েছে বাংলাদেশ। ঝাড়খণ্ডের একটি কয়লা-ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের ওই চুক্তিতে কয়লার দাম অতিরিক্ত ধরা হয়েছে বলে বাংলাদেশের অভিযোগ।
 

Comments :0

Login to leave a comment