নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে আরএসএস-বিজেপি সরকার ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ভারতের বুকে নয়া ফ্যাসিবাদ কায়েম করতেই শুধু বদ্ধপরিকর নয়, একই সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিকাশমান অতি দক্ষিণপন্থী তথা নয়া ফ্যাসিবাদী শক্তির সঙ্গেও সম্পর্ক স্থাপনে নিবিড় প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। আর যেসব দেশে ইতিমধ্যেই অতি দক্ষিণপন্থী তথা নয়া ফ্যাসিবাদীরা ক্ষমতা দখল করেছে সেইসব দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক, স্ট্র্যাটেজিক, সামরিক তথা ভূরাজনৈতিক সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে মোদীরা সবচেয়ে সফল ইজরায়েলের জায়নবাদী অতি দক্ষিণপন্থী সরকারের ক্ষেত্রে। ইজরায়েলের বর্তমান নরখাদক সরকার গাজায় নরহত্যা চালিয়ে অর্ধলক্ষাধিক প্যালেস্তাইনিকে নিকেশ করলেও এবং গোটা গাজা ভূখণ্ডকে ভেঙে গুঁড়িয়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করলেও ও ২০ লক্ষ প্যালেস্তাইনবাসীকে ভিটে মাটি ছাড়া করলেও ইজরায়েলের সঙ্গে মোদী সরকারের সম্পর্ক এতটুকুও টাল খায়নি। বরং সম্পর্কের ভিত আরও মজবুত হয়েছে। গাজায় ইজরায়েলি সামরিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সরাসরি না হলেও অন্যান্য নানাভাবে ইজরায়েলকে সাহায্য ও সহযোগিতা করেছে মোদীর ভারত। গাজার বিরুদ্ধে, প্যালেস্তাইনিদের বিরুদ্ধে ইজরায়েলি নৃশংসতা, বর্বরতা, চরমতম অমানবিকতার মৃদু সমালোচনাও করেনি ভারত। পাশাপাশি যে আমেরিকার সক্রিয় সহযোগিতা ছাড়া ইজরায়েলের পক্ষে মানবতার বিরুদ্ধে এমন ভয়ঙ্কর হিংস্রতা সম্ভব ছিল না সেই আমেরিকার আনুগত্য পেতে মোদীর ভারত এতটাই লালায়িত যে আমেরিকার কোনও অন্যায়-অপরাধের বিরুদ্ধে মুখ খোলে না। এমনকি ভারতের নাম করে মার্কিন রাষ্ট্রপতি হুমকি দিলেও, যাচ্ছেতাইভাবে অপমান-অসম্মান করলেও নরেন্দ্র মোদী টু শব্দটিও উচ্চারণ করছেন না, নীরবে সব অপমান হজম করে যাচ্ছেন মার্কিন বদান্যতা পাবার আশায়।
নির্বাচনের আগে প্রচারের সময় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ভোটে জিতে রাষ্ট্রপতি হয়েই ট্রাম্প ঝাঁপিয়ে পড়েছেন প্রতিশ্রুতি পূরণে। সবচেয়ে বড় বাণিজ্যি সঙ্গী দুই প্রতিবেশী দেশ মেক্সিকো ও কানাডার পণ্যে চাপিয়েছেন ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক। তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য সঙ্গী চীনের পণ্যে দু’দফায় ২০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছে আমেরিকা। পাশাপাশি চীনে মার্কিন বিনিয়োগ এবং চীনে উচ্চ প্রযুক্তি রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে। একই সঙ্গে ইউরোপ, ভারত সহ অন্য সব দেশের রপ্তানিতেও শুল্ক চাপানো হয়েছে বা হচ্ছে এই শুল্ক যুদ্ধে ট্রাম্প বার বার ভারতের নাম উল্লেখ করে হুঙ্কার দিচ্ছেন। মেক্সিকো, কানাডা, চীন কড়া প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেও এবং পালটা শুল্কের কথা বললেও ভারতের মোদী মিউ মিউ শব্দও করছেন না। ট্রাম্পের ভয়ে স্বঘোষিত বিশ্বগুরুর ৫৬ ইঞ্চি ছাতি চুপসে গেছে। ট্রাম্পের একতরফা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়িয়ে মোদী সরকার ট্রাম্পকে খুশি করতে তাঁর ইচ্ছা পূরণ করায় জোর দিয়েছে। ইতিমধ্যে মাথানত করে কয়েক দফায় মার্কিন পণ্যে লাগু ভারতীয় শুল্ক প্রত্যাহার করেছে। ভারতের বাজারে মার্কিন গাড়ির অবাধে ঢোকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সস্তার রাশিয়ান ও আরব তেল কেনা কমিয়ে বেশি দামের মার্কিন তেল কেনা বাড়ানো হয়েছে। এখন আমেরিকা চাপ দিচ্ছে রাশিয়া থেকে সমরাস্ত্র কেনা বন্ধ করে সব অস্ত্র আমেরিকা থেকে কেনার। বাণিজ্য মন্ত্রী সদলবলে আমেরিকা সফর করে আমেরিকাকে তুষ্ট করে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করতে ব্যস্ত। তারই মধ্যে বাণিজ্য সচিব মার্কিন স্বার্থের কথা বার বার প্রকাশ্যে বলে চলেছেন। ট্রাম্প ফের হুমকি দিয়ে বলেছেন ভারত শুল্ক কমিয়ে ভারতের বাজারে মার্কিন পণ্য ঢোকার সুযোগ করে দিতে রাজি হয়েছে। এরপরও মোদীরা নীরব থেকে আত্মসমর্পণের পথ সড়গড় করছেন।
Silent Surrender
নীরবে আত্মসমর্পণের পথে

×
Comments :0