শিলিগুড়ি পৌর কর্পোরেশনের দায়দায়িত্ব এড়িয়ে প্রসাধনী উন্নয়নে মাতোয়ারা তৃণমূল। শিলিগুড়ির মানুষই তৃণমূলকে ক্ষমতা থেকে টেনে রাস্তায় নামাবে, জনতার আদালতে তৈরি হচ্ছে চার্জশিট। শিলিগুড়িতে গণ অবস্থানে বললেন জেলা বামফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ।
তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত বোর্ডের গত এক বছর সময়ে শহর জুড়ে উন্নয়নের প্রশ্নে সার্বিক ব্যর্থতাকে তুলে ধরে মঙ্গলবার শিলিগুড়ি পৌর কর্পোরেশনের সংলগ্ন বাঘাযতীন পার্ক এলাকায় দার্জিলিঙ জেলা বামফ্রন্টের আহ্বানে গণঅবস্থান বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ১৮ফেব্রুয়ারি থেকে ২১দফা দাবির ভিত্তিতে শিলিগুড়ি পৌর কর্পোরেশন এলাকার নাগরিকদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান ধারাবাহিকভাবে চলেছে। ইতোমধ্যেই এই কর্মসূচিতে শহরের ৪৭টি ওয়ার্ডের প্রায় ৫৬ হাজার নাগরিকেরা সামিল হয়ে দাবিপত্রকে সমর্থন জানিয়ে সমগ্র দাবিপত্রে তাদের স্বাক্ষর করেছেন। এদিনের গণ অবস্থান বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষে বাঘাযতীন পার্ক থেকে কর্পোরেশন অভিমুখে বিরাট মিছিল বের হয়।
পুলিশ ব্যারিকেট দিয়ে মিছিল আটকে দেয়। এরপর বামফ্রন্টের প্রতিনিধি দল কর্পোরেশনে গিয়ে গণস্বাক্ষর সম্বলিত দাবিপত্র মেয়রের উদ্দেশ্যে কর্পোরেশনের কমিশনারের হাতে তুলে দেন। প্রতিনিধি দলে উপস্থিত ছিলেন জীবেশ সরকার, সমন পাঠক, নুরুল ইসলাম, জয় চক্রবর্তী, তাপস গোস্বামী, বিকাশ সেন রায় ও অনিরুদ্ধ বোস। নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন, গত ২৪ মার্চ চিঠি দিয়ে মেয়রের কাছে গণস্বাক্ষর সম্বলিত স্মারকলিপি দেবার আজকের দিন ধার্য করে চিঠি দেওয়া হলেও, নির্ধারিত দিনে এদিন মেয়র কর্পোরেশনে অনুপস্থিত ছিলেন। এদিন কর্পোরেশনের গেট সহ গোটা চত্বর বিরাট পুলিস বাহিনী দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছিলো।
সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য জীবেশ সরকার বলেন, মানুষের দাবিতে কর্পোরেশনে চার্জশিট দিতে এসেছি। শহরবাসীর অন্য অভিজ্ঞতা হয়েছে। ডবল ইঞ্জিনের কথা বলে ক্ষমতায় এসেছিলো। জল প্রকল্প, ভাতা সহ শহরের উন্নয়ন কোথায় গেলো? বেআইনী নির্মান চলছে শহর জুড়ে। শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। এক বছর সময় পেরিয়ে গেছে। বামফ্রন্ট পরিচালিত শিলিগুড়ি পৌর কর্পোরেশন নিজেদের সীমিত আর্থিক ক্ষমতায়, সীমাবদ্ধতা ও প্রতিবন্ধকতার মাঝেও নাগরিক অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজকর্ম করে সাফল্যের মুখ দেখছিলো। বাম বোর্ডের সময় বস্তি উন্নয়নের কাজে বিশেষভাবে জোর দেওয়া হয়েছিলো। এই সময়ে বস্তি উন্নয়ন দিশা হারিয়েছে। বামফ্রন্টের সময়ে শহরের অনুন্নয়নের এই ছবি শহরবাসী প্রত্যক্ষ করেননি।
এদিনের গণ অবস্থান বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতি তথা দার্জিলিঙ জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক সমন পাঠক বলেন, তৃণমূলের সীমাহীন ব্যার্থতা ও অপদার্থতার বিরুদ্ধে স্বাক্ষর সংগ্রহের উদ্যোগ লক্ষাধিক মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। বামফ্রন্টের সময়ে চালু সমস্ত ভাতা বন্ধ হয়েছে। রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা। কর্পোরেটমুখী বাজেট পেশ হয়েছে। বাজেটে গরীব মানুষের জন্য দিশা নেই। কঠিন পরিস্থিতি শিকার শহরবাসী।
পার্টি নেতা অশোক ভট্টাচার্য বলেন, একটা অপরিকল্পিত শহরকে পরিকল্পিত শহরে পরিনত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল সেই সময় কাল থেকেই। কিন্তু বর্তমান সময়ে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজগুলি কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে। পৌর পরিষেবা থেকে শুরু করে শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া সহ সমস্ত দিক থেকে এই বিগত বাম সময়ে শহর এগিয়ে গিয়েছিলো।
বক্তারা প্রত্যেকেই মুখ্যমন্ত্রীর সভাকে কেন্দ্র করে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে অবৈজ্ঞানিক খননকার্য চালানোর নিন্দা করেছেন। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম) কাউন্সিলার নুরুল ইসলাম, জয় চক্রবর্তী, মৌসুমী হাজরা, আরএসপি’র বিকাশ সেন রায়, ফরওয়ার্ড ব্লকের অনিরুদ্ধ বোস, সিপিআই’র অনিমেষ ব্যানার্জি প্রমুখ। প্রত্যেকেই এক বছর সময়ে শহরের পানীয় জল, ডেঙ্গু পরিস্থিতি, জঞ্জাল সাফাই, শিক্ষা ব্যবস্থা সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গণ অবস্থানে সোচ্চার হয়েছেন।
Comments :0