ভীমা কোরেগাঁও মামলায় জামিন পেলেন দুই সমাজকর্মী ভার্নন গঞ্জালভেস এবং অরুণ ফেরেইরা। শুক্রবার তাঁদের জামিন মঞ্জুর করে দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
ভীমা কোরেগাঁও মামলায় ২০১৮ সাল থেকে জেলবন্দী রয়েছেন দুই সমাজকর্মী ভার্নন গঞ্জালভেস এবং অরুণ ফেরেইরা। শুক্রবার বিচারপরতি অনিরুদ্ধ বোস ও বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়ার বেঞ্চ শর্ত সাপেক্ষে তাঁদের জামিন মঞ্জুর করে। আদালত নির্দেশ দিয়েছে দুজনকে তদন্তকারী সংস্থা এনআইএর’ত সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে।
এর আগে বম্বে হাইকোর্টে জামিনের আবেদন জানিয়েছিলেন গঞ্জালভেস এবং ফেরেইরা, কিন্তু তা খারিজ হয়। তারপরেই তাঁরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন।
২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি মহারাষ্ট্রের ভীমা কোরেগাঁও-তে হিংসার ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনায় প্রথম থেকেই বুদ্ধিজীবীদের নিশানা করে সেরাজ্যের তৎকালীন বিজেপি সরকার। প্রাথমিক ভাবে মহারাষ্ট্র পুলিশ ৫ সমাজকর্মীকে গ্রেপ্তার করে। ম্যারাথন তল্লাশি চালানো হয় পুনে, মুম্বই, নাগপুর এবং দিল্লিতে। সেই অভিযানে আটক হন দলিত আন্দোলনের বিশিষ্ট কর্মী সুধীর ধাওয়ালে, আইনজীবী সুরেন্দ্র গাডলিং, সমাজকর্মী মহেশ রাউথ, অধ্যাপিকা সোমা সেন এবং সমাজকর্মী রোনা উইলসন।
পরবর্তীকালে এই মামলায় ‘মাওবাদী যোগাযোগের’ তত্ত্ব হাজির করে মহারাষ্ট্র সরকার। যুক্ত করা হয় প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার যড়যন্ত্রের অভিযোগও। সেই অভিযোগকে হাতিয়ার করে একের পর এক মুক্তমনা এবং হিন্দুত্ববাদ বিরোধী বুদ্ধিজীবী ও সমাজকর্মীকে গ্রেপ্তার করা শুরু হয়। ধৃতের তালিকায় নাম ওঠে সাংবাদিক গৌতম নাভলাখা, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হানি বাবু, অধ্যাপক আনন্দ তেলতুম্বড়ে, সমাজকর্মী সুধা ভরদ্বাজ, কবি ভারভারা রাও, সমাজকর্মী ভার্নন গঞ্জালভেস, অরুণ ফেরেইরা, ভীমা কোরেগাঁও শৌর্য দীন প্রেরণা অভিযানের কর্মী জ্যোতি জগতপ, সাগর গোরখে এবং সমাজকর্মী রমেশ গাইচোরের।
এই মামলাতেই মাঝরাতে রাঁচির বাড়িতে হানা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় বৃদ্ধ স্ট্যান স্বামীকে। তাঁর দাবি ছিল, তিনি জীবনে কখনও ভীমা কোরেগাঁওয়েই যাননি। করোনার প্রথম প্রবাহের মধ্যেই তাঁকে গ্রেপ্তার করে জেলবন্দি করা হয়। স্ট্যান স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়, তিনি মাওবাদীদের সঙ্গে ঘনিষ্ট যোগাযোগ রেখে চলেন।
মহারাষ্ট্রে বিজেপি সরকারের পরিবর্তনের পরে এই মামলা চলে যায় এনআইএ’র হাতে। তারপরে গ্রেপ্তার হন আরও কয়েকজন বুদ্ধিজীবী। এখনও পর্যন্ত ভীমা কোরেগাঁও মামলায় ‘চার্জশিট’ দেওয়া হয়েছে ৮ জনের বিরুদ্ধে। বাকিদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করেছে এনআইএ। অভিযুক্তদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে ইউএপিএ ধারায় মামলা রুজু হয়েছে।
যুদ্ধকালীন তৎপরতায় গ্রেপ্তারি চালানো হলেও, এই মামলায় মহারাষ্ট্র পুলিশ ও পরে এনআইএ সময়ের মধ্যে চার্জশিট দাখিল করতে পারেনি। একাধিকবার সময় বাড়ানো হয়েছে। আইনী জটিলতাকে হাতিয়ার করে গুরুতর অসুস্থদেরও জামিনের আবেদন নাকচ করা হয়েছে। তারফলেই জেলের মধ্যে প্রাণ হারাতে হয় ৮৪ বছর বয়স্ক স্ট্যান স্বামীকে। পার্কিনসনস্ রোগে আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে জেলের মধ্যে ন্যূনতম চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হয়নি।
Comments :0