R G KAR SWASHTHYA BHAWAN

স্বাস্থ্যভবন সব জানে’, দাবি চিকিৎসক, অধ্যক্ষদের

রাজ্য

 কী জানতে পেরেছিলেন আর জি কর হাসপাতালে নিহত তরুণী ট্রেনি চিকিৎসক? তাঁর ধর্ষণ, খুনের ঘটনায় এই প্রশ্নটির জবাব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
সিবিআই’র কাছে তা গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ, চিকিৎসকরা। বুধবার সেই অধ্যক্ষদের ১৫জন এক বৈঠকে বসেছিলেন। সেই বৈঠকে তাঁরা সাম্প্রতিককালের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা আলোচনা করেছেন। বৈঠকে উপস্থিত এক অধ্যক্ষ বলেন, ‘‘এক অধ্যক্ষকাকে ফোন করে রাজ্যের শাসক দলের কর্মী এক চিকিৎসক লুম্পেনদের ভাষায় গালি দিয়েছে। সেই বিবরণ এদিনের বৈঠকে ওই মহিলা জানিয়েছেন। আমরা শুনেছি আর ভেবেছি পশ্চিমবঙ্গ কোথায় পৌঁছেছে।’’
সেই মহিলা চিকিৎসক দক্ষিণবঙ্গের একটি হাসপাতালের অধ্যক্ষা। তিনি এদিনের বৈঠকে জানিয়েছেন যে, রাজ্যের মেডিক্যাল কাউন্সিলরের এক প্যানেল এবং এথিকাল কমিটির সদস্য ফোন করে বলেছিলেন, ‘‘তোর ছেলেমেয়ে কী করে বাইরে বেরোয় দেখে নেবো।’’ দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাটানগরে একটি ফ্ল্যাটের বাসিন্দা ওই চিকিৎসক তৃণমূলের এবং আর জি কর হাসপাতালের অপসারিত অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের অত্যন্ত ঘনিষ্ট। এদিনের বৈঠকে ওই অধ্যক্ষা জানান, এই ঘটনা কিছুদিনের আগের। সেই চিকিৎসকের রেগে যাওয়ার কারণ, সে অধ্যক্ষার কাছে কিছু অন্যায় দাবি করেছিলেন। অধ্যক্ষা তার কথা শুনতে চাননি। ফোন রাখার আগে অধ্যক্ষাকে একটি অশ্লীল গালি দিয়েছিল ওই চিকিৎসক। 
এই ঘটনার পূর্ণ বিবরণ এদিন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য কমিটির অভিযোগ পত্রে বিস্তৃতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
কিন্তু মমতা ব্যানার্জিতে নিবেদিতপ্রাণ দুর্বিনীত চিকিৎসকরা কী কী করেছে? অধ্যক্ষ, চিকিৎসকদের বড় অংশ মনে করছেন যে, এরা, এই চক্র রাজ্যের মেডিক্যাল এডুকেশন সিস্টেমকে তোলা আদায়ের অন্যতম কেন্দ্র করে তুলেছে। কেমন? এক অধ্যক্ষর কথায়, ‘‘পরীক্ষার আগেই ছাত্রদের একাংশর হাতে প্রশ্নপত্র পৌঁছে দেয় এই চক্র। ছাত্রদের একাংশকে মোবাইল, কখনও কখনও ল্যাপটপ খুলে পরীক্ষা দিতে বসতে দিয়েছে এই দুর্নীতিগ্রস্তরা। এদিনের বৈঠকে উপস্থিত উত্তরবঙ্গের একটি মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ জানিয়েছেন, তাঁর কলেজের এক শিক্ষক পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষা শুরুর আগেই প্রশ্ন পৌঁছে দিয়েছেন। এই টোকাটুকির প্রতিবাদ করায় উত্তরবঙ্গেরই আর একটি কলেজের এক শিক্ষককে স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশে পরীক্ষা চলাকালীন ইনভিজিলেটরের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, ওই প্রতিবাদী শিক্ষককে কয়েকদিনের মধ্যেই দক্ষিণবঙ্গে বদলি করে দেওয়া হয়। কী মারাত্মক এই চক্রের প্রভাব তা এ থেকে অনেকটা স্পষ্ট।’’ 
এই চক্রেরই অন্যতম স্তম্ভ হওয়ায় আর জি কর হাসপাতাল থেকে দু’বার সরিয়েও ২১দিনের বেশি অন্য হাসাপাতালে রাখা যায়নি সন্দীপ ঘোষকে। রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এসবের কিছুই জানতেন না, চিকিৎসক, অধ্যক্ষরা তা মনে করছেন না। তাঁদের অনেকেরই সন্দেহ এই ধরনের দুর্নীতিগুলির অন্যতম কেন্দ্র ছিল আর জি কর হাসপাতাল। খুন হয়ে যাওয়া তরুণী চিকিৎসক মেধাবী ছিলেন। এই ধরনের দুর্নীতির বিরোধী ছিলেন। ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায় একাধিকবার জানিয়েছে যে, ওই ট্রেনি চিকিৎসক ‘বড় চিৎকার করতো।’ সঞ্জয় রায় ছিল এই চক্রের একটি অংশ, মূলত সন্দীপ ঘোষের হয়েই সে কাজ করতো বলে অভিযোগ। নিহত চিকিৎসক চিকিৎসা বিজ্ঞানের শিক্ষায় এই দুর্নীতির কিছু জানতে পেরেছিলেন, চিকিৎসকদের একাংশ তাই মনে করেছেন। প্রতিবাদও করেছিলেন কিছু ক্ষেত্রে, তাঁর খুনে যে নৃশংসতা দেখা গেছে তা থেকে এই ‘অ্যালিবাই’ অনেকটা স্পষ্ট। খুনীরা অত্যন্ত প্রতিশোধপরায়ণ, তারা ওই চিকিৎসকের উপর মারাত্মক রেগে ছিল। আর জি করের কয়েকজন ছাত্রও এই দুর্নীতি চক্রে জড়িয়ে ছিলেন বলেই আশঙ্কা। চিকিৎসক, অধ্যক্ষদের দাবি স্বাস্থ্যভবন এবং স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে দুর্নীতিগ্রস্তদের বসিয়ে রাখা হয়েছে। 
কে রাখলো? রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের মন্ত্রী কে? বুধবারও রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় নানা পেশায় যুক্ত মানুষ আর জি কর হাসপাতালের নৃশংসতার বিচার চেয়ে মিছিল করেছেন। সেই মিছিলে এদিনও দাবি উঠেছে—স্বাস্থ্য মন্ত্রীর পদত্যাগ চাই। 
 

Comments :0

Login to leave a comment