দশ বছর পেরিয়েছে, সারদা-রোজভ্যালি-এমপিএস সহ ৪১টা চিট ফান্ড সংস্থার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত চার্জশিট ইডি-সিবিআই। ১৪-১৯’ দুটি লোকসভা ভোটের প্রচারেই প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন বিজেপি আসলে দুর্নীতিগ্রস্তদের জেলে পোরা হবে। ঘটনা পরম্পরা বলছে বিজেপি-সরকারই আসলে তৃণমূলী দুর্নীতির রক্ষাকবচ
 আট বছর পরেও নারদ ঘুষ কেলেঙ্কারিতে চূড়ান্ত চার্জশিট দায়ের করা গেলো না কেন? 
নারদ ঘুষ কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্তকে প্রধানমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গেই দেখা যায়। নারদ কাণ্ডে অভিযুক্তরা ২০১৯, ২০২৪’রও তৃণমূলের প্রার্থী। ইডি-সিবিআই দুই সংস্থাই এফআইআর রুজু করার পরও বর্তমান বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী থেকে তৃণমূল নেত্রী কাকলি ঘোষদস্তিদার, সৌগত রায়দের গ্রেপ্তার করা গেলো না কেন? অমিত শাহ চিট ফান্ড কাণ্ড হুমকি দিচ্ছেন, প্রধানমন্ত্রীও ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস শোনাচ্ছেন, অথচ প্রধানমন্ত্রীর হাতে থাকা মন্ত্রকই গত চার বছর ধরে নারদ ঘুষ কাণ্ডে অভিযুক্ত তৃণমূলের চার সংসদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরুর সিবিআই’র আবেদন আটকে রেখেছে। আবেদন করার পরেও সিবিআই’কে তদন্তে পরবর্তী ধাপে পৌঁছানোর কোনও সঙ্কেত দেওয়া হয়নি।
 সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্সের রিপোর্টের ভিত্তিতে পাঁচ বছর ধরে শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্তে আইনি প্রক্রিয়া শুরুর সিবিআই’র আবেদনও এখন বকেয়া রয়েছে কেন? সিভিসি’র রিপোর্ট বলছে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত গোটা দেশে একাধিক দূর্নীতির মামলায় (ব্যাঙ্ক, এমনকি সরকারি দপ্তরের দূর্নীতি) জনপ্রতিনিধি ও সরকারি আধিকারিক সহ ১১০ জনের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরুর সম্মতিটুকু পর্যন্ত আটকে রেখেছে কেন্দ্রীয় কর্মীবর্গ, জন-অভিযোগ মন্ত্রক। তালিকায় পশ্চিমবঙ্গের শাসক তৃণমূলের এবারও তিন প্রার্থী সৌগত রায়, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় ,কাকলি ঘোষদস্তিদার ও বর্তমান বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী রয়েছেন।
 কয়লা পাচার কাণ্ডে বিদেশে টাকা পাচারের নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তদন্তে শ্লথতা কেন? লুক আউট নোটিস জারির পরেও বিদেশে গা ঢাকা দিলো কীভাবে কয়লা কাণ্ডে অভিযুক্ত অভিষেক ব্যানার্জির ঘনিষ্ঠ যুব তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক বিনয় মিশ্র?খোদ বাঁকুড়া থানার এক পুলিশ আধিকারিকের মাধ্যমেই কয়লার নগদ টাকা পৌছে দেওয়া হতো দক্ষিণ কলকাতায়। পুলিশ আধিকারিককে জেরা করলেও দক্ষিন ণ কলকাতার সেই ঠিকানা মালিক কেন অধরা?
 দিল্লির নিম্ন আদালতে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসে কয়লার টাকা ঘুরপথে ঢুকেছে, দেড় বছর আগে ইডি তা দাবি করার পরেও সংশ্লিষ্ট সংস্থার বিরুদ্ধে কয়লা কাণ্ডে তদন্ত হলো না কেন? লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসে নিয়োগ দুর্নীতির টাকা ঢুকেছে বলার পরেও কেন তদন্তে অনীহা ? 
 ইডি’র প্রাথমিক রিপোর্টে অভিষেক ব্যানার্জির একটাও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুঁজে না পাওয়া, তাঁর বাড়ির হদিশ না পাওয়ার পিছনে রহস্য কী? আদালতের নির্দেশের আগে পর্যন্ত লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের সম্পত্তির হদিশে তদন্ত হলো না কেন? নিয়োগ দুর্নীতিতে তৃণমূল নেতা, বিধায়ক সহ ২৫জন গ্রেপ্তার। তারপরেও মাথায় পৌঁছানো যাচ্ছেনা কেন? কুন্তল-শান্তনু-কালীঘাটের কাকুতেই কেন আটকে সিবিআই?ইডি’র চার্জশিটে দাবি মানিকের কাছে টাকা দেওয়া অযোগ্যদের পাশ করিয়ে দেওয়ার বার্তা নিয়ে যেতেন কালীঘাটের কাকু, অভিষেকেরই ‘বার্তাবাহক’ ছিল কাকু! তারপরেও কেন কড়া পদক্ষেপ নয়?
 চিট ফান্ডের কাণ্ডের তদন্ত ছটি পর্যায়ে এসেছিল মুখ্যমন্ত্রীর প্রসঙ্গ। ক)সরকারি গ্রন্থাগারে চিট ফান্ডের কাগজ রাখার নির্দেশ। খ) সারদার অ্যাম্বুলেন্স জঙ্গল মহলের প্রকল্পে। গ) ২০১২’র মার্চে কালিম্পঙের ডেলোতে একই দিনে সুদীপ্ত সেন ও গৌতম কুণ্ডুর সঙ্গে গোপন মিটিং। ঘ) রেলমন্ত্রী থাকাকালীন আইআরসিটিসি’র সঙ্গে ভুঁইফোঁড় সারদা ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস লিমিটেড সংস্থার চুক্তি। ঙ) বিধানসভার ভোটে নগদে আর্থিক লেনদেন। চ) সারদা-রোজভ্যালি ছাড়াও একাধিক শেল কোম্পানির মাধ্যমে ছবি বিক্রি। তারপরেও মুখ্যমন্ত্রীকে একটিবারের জন্য তলব বা জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারলো না কেন সিবিআই? ২০২০’র জানুয়ারিতে রাজভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের পরেই তড়িঘড়ি সারদা-রোজভ্যালি ও নারদার তদন্তকারী আধিকারিকদের বদলি করা হলো কেন?
 
                                         
                                    
                                 
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                    
Comments :0