US Election 2024

বাইডেনের প্রস্থান, হ্যারিসের উত্থানে বিপাকে ট্রাম্প

আন্তর্জাতিক

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি’র প্রার্থী পদ অর্জনের দৌড়ে এগিয়ে কমলা হ্যারিস। আগামী ১৯ আগস্ট শিকাগো শহরে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি’র জাতীয় কনভেনশন। ওই কনভেনশন থেকেই নভেম্বরে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দলের প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত হবে। কিন্তু তার আগেই দলের মধ্যে সমর্থন দ্রুত নিজের অনুকূলে নিয়ে আসছেন বর্তমানে উপরাষ্ট্রপতি কমলা হ্যারিস (৫৯)।
গত রবিবার আগামী রাষ্ট্রপতি ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না বলেই ঘোষণা করেন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন। তার পর থেকে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি’র বিপুল পরিমাণে অর্থ সাহায্য পেয়েছে। বাস্তবে যাকে বাইডেনের প্রস্থান এবং হ্যারিসের উত্থানের কারণে বলেই মনে করা হচ্ছে। অবশ্য রিপাবলিকান পার্টি আগেই ভোটে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রার্থী করেছে। 
এপর্যন্ত পরিস্থিতি একরকম ছিল। কিন্তু নির্বাচন পর্ব থেকে বাইডেন সরে দাঁড়াতে রিপাবলিকানরা বেশ চাপে পড়েছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন ভোট সমীক্ষায় হোয়াইট হাউসে প্রবেশের প্রতিযোগিতায় ট্রাম্প এবং হ্যারিসকে উনিশ-বিশের ফারাকেই রাখা হয়েছে। তুলনায় বাইডেনের বিরুদ্ধে ট্রাম্পকে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে রাখা হয়েছিল। 
৬-৭টি প্রদেশে উভয় প্রার্থীর মধ্যে প্রায় সমানে সমানে টক্কর। যেমন রয়টার্স/ইপসোসের প্রাক-ভোট সমীক্ষায় কমলা হ্যারিসকে ৪৪ শতাংশ এবং ট্রাম্পকে ৪২ শতাংশ দেওয়া হয়েছে। আবার পিবিএস নিউজ/এনপিআর সমীক্ষায় ৪৬-৪৫ শতাংশ পেয়ে ট্রাম্প হ্যারিসের চেয়ে এক ছুল এগিয়ে আছেন। এক্ষেত্রে ৯ শতাংশ ভোটদাতা কাকে ভোট দেবেন তা মনস্থির করতে পারেননি। 
অনেকটা সেই পূর্বাভাষের সঙ্গেই মিলে গেছে রিয়াল ক্লিয়ার পলিটিক্সের প্রাক-ভোট সমীক্ষাও। এক্ষেত্রে ধনকুবের রিপাবলিকান প্রার্থীকে কমলা হ্যারিসের থেকে ১.৬ শতাংশ বেশি ভোট দেওয়া হয়েছে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, যার নেপথ্যে রয়েছে শেষ সময়ে ডেমোক্র্যাটিকদের মধ্যে প্রার্থী পদ চূড়ান্ত করা নিয়ে গড়িমশি।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবারই সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ ডেমোক্র্যাটিক পার্টি’র নেতা চার্লস শুমার এবং প্রতিনিধিসভায় দলের নেতা হাকিম জেফরিস রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হিসেবে কমলা হ্যারিসকে সমর্থন জানান। অবশ্য প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ও ডেমোক্র্যাটিক শিবিরের প্রভাবশালি রূপে পরিচিত বারাক ওমাবা হ্যারিসকে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী করা নিয়ে কোন মতামত দেননি। ডেমোক্র্যাট পার্টির ঘনিষ্ট সূত্রে খবর, বর্তমানে দলে ওমাবার স্ত্রী মিচেলি ওবামার নাম নিয়েও গুঞ্জন আছে।
এরই মাঝে মঙ্গলবার মিলওয়াউকিতে দলীয় সভায় প্রায় ব-কলমে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হিসেবে হ্যারিস ভাষণ দেন। এই সভায় তিনি জানান, দেশের নাগরিকদের আগামী নির্বাচনে স্বাধীনতা অথবা নৈরাজ্যের মধ্যে কোন একটিকে বেছে নিতে হবে। একই সঙ্গে তিনি তুলে ধরেন বাইডেন-হ্যারিস সরকারের সময়ে সুলভ স্বাস্থ্য পরিষেবা, সাধ্যের মধ্যে শিশুদের প্রতিপালনের সুযোগ, পারিবারিক প্রয়োজনে সবেতন ছুটি এবং আত্মসম্মানের সঙ্গে অবসরের ব্যবস্থার মতো পদক্ষেপগুলি।
যদিও কমলা হ্যারিস ঘুনাক্ষরেও উল্লেখ করেনি বাইডেন-হ্যারিস সরকারের সময়ে সাম্রাজ্যবাদী বৈদেশিক নীতির জন্য সমাজিক ক্ষেত্রে ব্যায় ছাঁটাইয়ের কলঙ্কিত অধ্যায়। বাস্তবে এই মেয়াদেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ায় হামলা চালাতে ইউক্রেনকে ঢালাও ভাবেই অর্থ এবং অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করে চলেছে। গাজায় অসহায় প্যালেস্তিনীয়দের গণহত্যার জন্য যুগিয়ে যাচ্ছে উগ্র জায়নবাদী ইজরায়েলকে কাড়ি কাড়ি ডলার এবং অস্ত্রশস্ত্র। চেষ্টা করেছে ইরানের আগ্রাসন চালানোর। চীনকে চাপে রাখতে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সামরিক সমাবেশ গড়ে তোলার। 
বলাই বাহুল্য, ক্ষমতায় এসে কমলা হ্যারিস ওই নীতিগুলিকেই এগিয়ে নিয়ে যাবেন। যার জন্য সেন্ট্রাল ইনটালিজেন্স এজেন্সি(সিআইএ)’র মতো দেশের কুখ্যাত ও প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা তাঁর পাশেই আছে। বর্তমানে যে সংস্থাগুলির কাছে রিপাবলিকান জুটি ট্রাম্প-ভান্স খুব একটা গ্রহণযোগ্য না। তাঁদের কাছে ট্রাম্প বদমেজাজী এবং ভান্স তাঁর চাটুকার।
ঘটনাচক্রে বুধবার মার্কিন সংসদের যৌথ অধিবেশনে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানেয়াহুর প্যালেস্তাইন বিরোধী উগ্র ভাষণ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রকৃত অবস্থানকেই বেআব্রু করে দিয়েছে। এক্ষেত্রে রিপাবলিকান পার্টিও খুব একটা পিছিয়ে নেই।
এদিকে বুধবার প্রচার সভায় হ্যারিস রাষ্ট্রপতি হওয়ার পক্ষে উপযুক্ত না বলেই দাবি করেন ট্রাম্প। কিন্তু অতি দক্ষিণপন্থী রিপাবলিকান নেতা যাই বলুন না কেন, দেশের অশ্বেতাঙ্গ ও যুব সমাজের কাছে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হিসেবে বাইডেনের থেকে কমলা হ্যারিস ঢের বেশি গ্রহণযোগ্য। সিএনএন/এসএসআরএস সমীক্ষা অনুসারে, কৃষ্ণাঙ্গদের ৭৮ শতাংশ হ্যারিসকে সমর্থন করছেন। সেখানে ট্রাম্পের সমর্থক মাত্র ১৫ শতাংশ। আবার স্পেনীয় মূলের বা হিস্পানিকদের মধ্যে ৪৭ শতাংশ হ্যারিসের পক্ষে। ট্রাম্পকের পক্ষে ৪২ শতাংশ। কিন্তু এর পরেও কমলা হ্যারিসকে অনেকটা পথ চলতে হবে। কারণ, গত বার বাইডেনের চেয়ে প্রাক-ভোট সমীক্ষায় তিনি প্রায় ৫ শতাংশের তফাতে। পায়ের তলার মাটি শক্ত করতে হবে মিশিগন, পেনসেলভেনিয়া, উইসকনসিন এবং নেব্রাস্কার মতো দোলাচলে থাকা প্রদেশগুলিতে। 

Comments :0

Login to leave a comment