বিহার নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত জয় পেয়েছে এনডিএ জোট। নির্বাচনী প্রচারপর্বে বিরোধী জোট মহাগঠবন্ধনের সমর্থনে জনজোয়ার বিশেষ করে অল্প বয়সিদের উৎসাহ দেখে আশার সঞ্চার হয়েছিল যে এবার বিরোধীদের জয় হলেও হতে পারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। উলটে আগের থেকে অনেক বেশি আসনে জয়ী হয়েছে আর বিরোধী জোটের আসন কমেছে শোচনীয়ভাবে। এই অপ্রত্যাশিত পরাজয়ের পেছনে কারণগুলি এখনো স্পষ্ট না হলেও সাধারণভাবে মোদী-শাহদের বিভেদকামী প্রচার, বিপুল অর্থ ব্যয়, টাকা বিলি, নগদ টাকার লোভের আবহে বড় অংশের ভোটারের সমর্থন আদায় করতে সমর্থ হয়েছে।
ভোটের আগে দেড় কোটি মহিলাকে দশ হাজার টাকা দেওয়া এবং নানা প্রকল্পে নগদ টাকা বণ্টনের দেদার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার ফল সম্ভবত বিজেপি জোট ঘরে তুলেছে। পাল্লা দিয়ে বিরোধী জোটও সব পরিবারে একজনকে চাকরি দেবার এবং আর বেশি পরিমাণে নগদের প্রকল্পের প্রতিশ্রুতি দিলেও সেটা মানুষকে প্রভাবিত করতে পারেনি। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো বিরোধী জোট প্রচারে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছিল কর্মসংস্থান বৃদ্ধির দিকে। উন্নয়নের প্রশ্নে নিছক নগদ অর্থ দিয়ে সাধারণ মানুষের আয় বৃদ্ধির বদলে পরিকল্পিত বিনিয়োগে স্থায়ী সম্পদ সৃষ্টি, শিল্প-বাণিজ্যের বিকাশ, পরিকাঠামো উন্নয়নে জোর দেবার বিকল্প পথের কথা বলেছিল বিরোধীরা। ভোল সর্বস্ব সরকারি প্রকল্প বিকাশের ভিত তৈরি করে না। শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং কর্মসংস্থানমুখী প্রকল্পে বিনিয়োগ না হয়ে দীর্ঘ মেয়াদে উন্নয়নের ভিত্তি তৈরি হয় না। সাম্প্রতিককালে এই গাড্ডার মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে বিভিন্ন রাজ্য। একদা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নগদ বণ্টনের সরকারি প্রকল্পকে রেউডি সংস্কৃতি বলে বিদ্রূপ করেছিলেন, এখন তার দলই সেই সংস্কৃতিকে সবচেয়ে বেশি আপন করে নিয়েছে। মোদী নিজেই এখন আগ বাড়িয়ে এধরনের প্রকল্প ঘোষণা করছেন। গুজরাটেও চালু হয়েছে ভোটের আগে দেদার নগদ বিলির প্রকল্প ঘোষণা করে ভোট কেনার কৌশল। পশ্চিমবঙ্গের শাসক তৃণমূল এই কৌশলকে জেতার একমাত্র পথ হিসাবে গ্রহণ করেছে।
অর্থ দিয়ে ভেট পাবার জন্য মানুষকে প্রলোভিত করা এবং বিরাট অংশের মানুষের প্রলোভিত হওয়া বিকাশের পথে অগ্রগতির লক্ষণ নয়। এটা উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে পেছনের দিকে টেনে ধরে। রাজ্য ক্রমশ পিছিয়ে পড়তে থাকে। টাকার বিনিময়ে ভোট কেনার রাজনীতি পশ্চিমবঙ্গ কয়েক ধাপ পেছনে টেনে নামিয়েছে। বিহারেরও সেই হাল। এই পথে কাজের হাহাকার বাড়বে। রাজ্য ছেড়ে ভিন্ রাজ্যে যাওয়া বাড়বে। ক্ষমতার রাজনীতি অর্থনীতিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবে।
Editorial
বিহার কোন পথে?
×
Comments :0