আপাতদৃষ্টিতে নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রকের বরাদ্দ বৃদ্ধি দেখানো হলেও নানা ফাঁকফোকড়ে ধরা পড়ছে, এবারের কেন্দ্রীয় বাজেটেও মহিলা বা শিশুদের দুরবস্থা ঘোচানোর কোনও চেষ্টাই করেননি অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। একদিকে যেমন মূল বাজেটে অতি সামান্য অংশ দেওয়া হয়েছে লিঙ্গ ভিত্তিক বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে, তেমনই যে সামাজিক প্রকল্পগুলি নারী ও শিশু কল্যাণের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, সেখানে বরাদ্দ চোখে না দেখার মতোই। দীর্ঘ প্রতিবাদ-আন্দোলনের পরও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, সহায়িকা সহ কোনও প্রকল্প কর্মীরই ভাতা বৃদ্ধির কথা ঘোষণা হলো না শনিবার পেশ হওয়া সাধারণ বাজেটে।
সীতারামন এদিন বাজেট পেশের সময় ‘সক্ষম অঙ্গনওয়াড়ি’ এবং ‘পোষণ ২.০’ প্রকল্প নিয়ে লোকদেখানো প্রশংসাসূচক মন্তব্য করলেও ব্যয় বরাদ্দে কানাকড়ি বৃদ্ধি করেই ছেড়ে দিয়েছেন। ২০২৫-’২৬ অর্থবর্ষের প্রস্তাবিত বাজেট বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে, ২০২৩-২৪ সালে ‘সক্ষম অঙ্গনওয়াড়ি’ এবং ‘পোষণ ২.০’ প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ২১৮০৯.৬৪ কোটি টাকা। গত অর্থ বর্ষে বা ২০২৪-’২৫ সালে এই বরাদ্দ ছিল ২১২০০.০০ কোটি। আর এবার অর্থ মন্ত্রী ২১৯৬০.০০ কোটি বরাদ্দ করেছেন এই দুই প্রকল্পে। অর্থাৎ মাত্র ১৫০.৩৬ কোটি বাড়লো এবার। কিন্তু মুদ্রাস্ফীতির নিরিখে বিচার করলে স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, আসলে এবারের বাজেটে বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হলো। কারণ এই সময়ে টাকার দাম কমেছে, জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। শিশু, প্রসূতি এবং স্তন্যদায়ী মায়ের পুষ্টির বিষয়টিও স্বাভাবিকভাবেই উপেক্ষা করা হয়েছে। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, সহায়িকা এবং অন্যান্য প্রকল্প কর্মীরা প্রাথমিকভাবে দেশের ভিত্তি গঠনে নিরলস পরিশ্রম করেন, নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। শিশু ও মহিলাদের অপুষ্টি রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এই প্রকল্প কর্মীরা। তাঁদের প্রতি বঞ্চনা আখেড়ে মহিলা ও শিশুদেরই উপেক্ষা করা। এই প্রকল্পে বহু মহিলার কর্মসংস্থানের জোগানও হয়। অথচ দীর্ঘদিন তাঁদের ভাতা বাড়ে না, যেটুকু ভাতা পাওয়ার কথা তা-ও অনেকসময়ই পান না।
এই খাতে বরাদ্দ পর্যালোচনা করলে অত্যন্ত গুরুতর যে বিষয়টি দেখা যাচ্ছে, তা হলো শিশু পিছু পুষ্টিমানের খরচ বাড়ানো হয়েছে মাত্র পাঁচ পয়সা! অতিরিক্ত পুষ্টির জন্য ব্যয় বিধি শেষ সংশোধিত হয়েছিল ২০১৭ সালে। সাত বছর পর এবার সেই বিধি ফের সংশোধিত হয়েছে। যদি ১০ কোটি উপভোক্তার বিচারে হিসাব করা হয়, যার মধ্যে আট কোটি শিশু এবং বছরে তিনশো দিনের হিসাবে দু’কোটি অন্তঃসত্ত্বা ও স্তন্যদায়ী মা, তাহলে রুঢ় বাস্তবই উঠে আসছে। যেখানে সরকারের পরিসংখ্যানই বলছে, দেশে সদ্যোজাত থেকে ৬ বছর বয়সি শিশুদের ৩৭ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ছ’কোটির চেহারা খর্বকায় এবং ১৭ শতাংশ বা ২ কোটি ৭৯ লক্ষের ওজন কম, সেখানে কি করে এই অবহেলা সম্ভব? কীভাবে এত অমানবিক হতে পারছে সরকার? প্রশ্ন তুলেছে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী এবং সহায়িকাদের সংগঠন। নেতৃবৃন্দ বলেছেন, ‘মৌলিক পরিষেবা প্রকল্পগুলিতে বরাদ্দ না বাড়ানো হলে বিকশিত ভারত কখনোই সম্ভব হবে না।’
যে বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও প্রকল্প নিয়ে বুক বাজিয়ে প্রচার চালায় মোদী বাহিনী, কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রকের অধীনস্ত সেই প্রকল্পেও এক টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হয়নি। মোট বাজেট বরাদ্দের মাত্র ০.৫৩ শতাংশ দেওয়া হয়েছে এই মন্ত্রককে। প্রস্তাবিত বাজেট বরাদ্দের মাত্র ২ শতাংশ বরাদ্দ হয়েছে মহিলা ভিত্তিক প্রকল্পগুলির জন্য। সংশোধিত হিসাব থেকে জানা যাচ্ছে, মহিলাদের নির্যাতন প্রতিরোধী, নির্যাতিতাদের সুরক্ষা এবং পুনর্বাসনের জন্য ‘মিশন সম্বল’ ও ‘সামর্থ্য’ প্রকল্পের প্রকৃত ব্যয় প্রায় ৫০ শতাংশ কমেছে। সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি অত্যন্ত ক্ষোভের সঙ্গে বলেছে, ‘আগের বাজেটগুলির মতোই এবারেও মহিলাদের সমস্যায় কোনও গুরুত্বই দেওয়া হয়নি। রেগাতেও বরাদ্দ বাড়েনি। নরেন্দ্র মোদীর সরকার বিজ্ঞাপন দেওয়ার চেষ্টা করলেও বাস্তবে সেই ফাঁকিই দেওয়া হয়েছে।’
Budget 2025: women and children
মা ও সন্তানদের পুষ্টি নিয়ে ভাবনা নেই, বরাদ্দ নাম মাত্র
×
Comments :0