WOMEN'S RESRVATION BILL MAMATA

মহিলা সংরক্ষণ নিয়ে প্রথম থেকেই টালবাহানা করেছেন মমতা

জাতীয়

WOMENS RESRVATION BILL MAMATA

প্রতীম দে

১২ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬। লোকসভায় মহিলা সংরক্ষণ বিল পেশ করলেন প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবেগৌড়া। ৮১ তম সংবিধান সংশোধনী। সিপিআই(এম) সাংসদ সোমনাথ চ্যাটার্জি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাংসদের অনুরোধে প্রশ্নোত্তর পর্ব বাদ দিয়ে ওই বিল পেশ করার অনুমতি দেন অধ্যক্ষ পিএ সাঙমা। 

সেই প্রথম লোকসভায় পেশ হয়েছিল মহিলা সংরক্ষণ বিল। যেখানে বলা হলো সংসদের দুই কক্ষ সহ রাজ্য বিধানসভা গুলিতে মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষণের করতে হবে।

সেইদিন লোকসভায় এই বিলের বিষয় আলোচনা করেন এ রাজ্যের সিপিআই(এম) সাংসদ সন্ধ্যা বাউড়ি। বাউড়ি বলেছিলেন, ‘‘বিভিন্ন রাজ্যে মহিলারা সব দিক থেকেই বঞ্চনার শিকার। সমগ্র নারী সমাজের ওপর অত্যাচার ও আক্রমণ নেমে আসছে। এই পরিস্থিতিতে তাঁদের সুরক্ষা অত্যন্ত জরুরি। এই সংশোধনী বিলটি ভারতীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নতুন মাত্রা যোগ করবে।’’ তিনি বলেন, ‘‘বিলটি শুধু পাশ করালেই চলবে না, এর প্রকৃত বাস্তবায়নও প্রয়োজন।’’ 

সিপিআই’র পক্ষ থেকে গীতা মুখার্জি বলেছিলেন, ‘‘গুরুত্বপূর্ণ এই বিল নিয়ে আলোচনার প্রশ্নই ওঠে না। উচিত বিলটিকে সরাসরি গ্রহণ করা।’’ 

সোমনাথ চ্যাটার্জি বলেন, ‘‘এদিনই এবং এখনই এই বিলটি পাশ করানো উচিত।’’

কিন্তু সেদিন লোকসভায় এই বিল পাশ করানো যায়নি। কারণ ওই দিন লোকসভায় কোরামের অভাবে বিল পাশ করাতে ব্যার্থ হয় দেবেগৌড়া সরকার। তারপর লোকসভা ভেঙেছে বিলটিও তার অস্তিত্ত্ব হারিয়েছে।

উল্লেখ্য সেদিন কংগ্রেস (আই) সাংসদ, যিনি বর্তমানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সরাসরি এই বিলের বিরোধীতা করেন। তিনি বলেন, ‘‘এইভাবে চক্রাকারে সংরক্ষণের আমি বিরোধী।’’ 

সেদিন যেই বিল দেবেগৌড়া সরকার এনেছিল সেই বিল পড়ে ইউপিএ সরকার এনেছে। সেই একই বিল আজ অন্য নামে লোকসভায় পাশ করিয়েছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। ১৯৯৬ সালে মমতা এই বিলের বিরোধীতা করেছিল। তখনও তৃণমূলের জন্ম হয়নি।

১৯৯৬ সালের পর কেটে গিয়েছে অনেক গুলো বছর। ১২ বছর পর ২০০৮ সালে রাজ্যসভায় এই বিল পাশ করায় ইউপিএ ১ সরকার। তখন মমতা ইউপিএতে নেই। 

২০০৯ সালে লোকসভা গঠন হওয়ার পর প্রথম ১০০ দিনে সরকার কোন কোন কাজ করবে সেই খতিয়ান দেওয়ার সময় ইউপিএ ২ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় যে তারা লোকসভায় মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশ করাবে। লোকসভা গঠনের পর প্রথম যৌথ অধিবেশনে তৎকালিন রাষ্ট্রপতি প্রতীভা দেবী পটেল মীরা কুমারের লোকসভার প্রথম মহিলা অধ্যক্ষ হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, দেশের সম্মান বাড়ল। এরপর মহিলা সংরক্ষণ বিল নতুন সম্মান জুড়বে।

২০০৯ সালের জুলাই মাসে লোকসভায় যেই সংবিধান সংশোধনী পেশ করা হয় তাতে বলা হয় যে, সংসদের দুই কক্ষ এবং রাজ্য বিধানসভা গুলোয় ৩৩ শতাংশ আসন মহিলাদের জন্য সরংরক্ষণ করা হবে। পঞ্চায়েত এবং পিরসভা গুলোয় ৫০ শতাংশ আসন সংরক্ষিত করা হবে। 

৫ জুলাই ২০০৯ সালের বিভিন্ন সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে লেখা হয়, সিপিআই(এম)র লোকসভার দলনেতা বাঁকুড়ার সাংসদ বাসুদেব আচারিয়া মহিলা বিল পাশ করানোর পক্ষে সরব হন। কিন্তু বিলের বিরোধীতা করেছিলেন যাদবত্রয়ী (লালু প্রসাদ যাদব, মুলায়েম সিংহ যাদব এবং শরদ যাদব)। তাদের দাবি ছিল সংরক্ষণের মধ্যে ওবিসি মহিলাদের জন্য সংরক্ষণ রাখতে হবে। 

ওই বছরই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নেয় যে, স্থানীয় স্তরে ৫০ শতাংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত করা হবে। 

২০১০ এর মার্চ মাসে রাজ্যসভায় যখন এই বিল সরকার পেশ করে তখন আলোচনায় অংশই নেয়নি তৃণমূল। রাজ্যসভায় তৃণমূলের দুজন সাংসদ মুকুল রায় এবং স্বপনসাধন বসু (টুটু বসু) গড়হাজির থেকেছেন অধিবেশনে। সেদিন রাজ্যসভাবয় হইহট্ট গোলের জেরে সাতজন সাংসদকে সাসপেন্ড করা হয়। মার্শাল নামিয়ে বিল পাশ করায় সরকার। বিলের পক্ষে ভোট পড়ে ১৮৬টি।

সেদিনের তৃণমূল সাংসদ রাষ্ট্রমন্ত্রী সুলতান আহমেদ সংবাদমাধ্যমের কাছে বলেছিলেন, তারা রাগ করে অধিবেশনে যোগ দেননি। সুলতানের কথায় সংখ্যালঘু মহিলাদের জন্য পৃথক সংরক্ষণ অর্থাৎ কোটার ভিতর কোটা না থাকার কারণে তারা অধিবেশনে যোগ দেননি। তবে দলের সাংসদের কথাকে মান্যতা না দিয়ে মমতা বলেছিলেন, যোগাযোগের অভাবের জন্যই তার দুইজন রাজ্যসভার সদস্য হাজির থাকতে পারেনি। সাফাইয়ের সুরে তিনি বলেছিলেন, ‘‘সংবিধান সংশোধনের পক্ষে রয়েছে তৃণমূল। রাজ্যসভায় আমাদের দুজন  সদস্য রয়েছেন, তাঁদের বলাই হয়নি রাজ্যসভায় বিল নিয়ে বিতর্ক বা ভোটাভুটি হবে। আমারা জানতাম না, অন্ধকারে ছিলাম। প্রধানমন্ত্রী শরিক দলগুলোকে বলেছিল সর্বদলীয় বৈঠক হবে। তাও হয়নি। যদি ঐ বৈঠক তহো তাহলে সেখানেই আমরা সংরক্ষণের প্রশ্নটি তুলতাম, যেহেতু সর্বদলীয় বৈঠক হয়নি এবং আমার আমাদের অবস্থান জানাতে পারিনি, তাই আমি রাজ্যসভার দুই সদস্যকে অধিবেশনে যেতে নিষেধ করেছিলাম।’’

 তৃণমূল নেত্রী এই কথা সেদিন বলেছিলেন অথচ তিনিই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে ৩৩ শতাংশ মহিলা সংরক্ষণের প্রতি নিজের সম্মতি জানান। সেই সময় গণশক্তি সহ একাধিক বাংলা দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী রাজ্যসভায় তৃণমূলের এই ভূমিকা বিষ্মিত করেছিল কংগ্রেস নেত্রী তথা ইউপিএ চেয়ারম্যান সোনিয়া গান্ধীকে। 

রাজ্যসভায় বিল পাশ করাতে পারলেও লোকসভায় সেই বিল আর পাশ করাতে পারেনি কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ। যার আক্ষেপ শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলনে করেছেন রাহুল গান্ধী।

Comments :0

Login to leave a comment