সত্যব্রত ভট্টাচার্য: বিশাখাপত্তনম
নরেন্দ্র মোদী সরকারের শ্রমিক স্বার্থবিরোধী অর্থনৈতিক নীতির বিরুদ্ধে কীভাবে আগামী দিনের লড়াই সংগ্রাম আরও জোরদারভাবে দানা বাঁধবে, সেই বার্তা দিতে সিআইটিইউ মিলিত হচ্ছে সম্মেলনে। এই সম্মেলনকে ঘিরে সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত বিশাখাপত্তনম শহরও। বুধবার থেকে এখানেই শুরু হচ্ছে সিআইটিইউ ১৮তম সর্বভারতীয় সম্মেলন। সিআইটিইউ সভাপতি কে হেমলতা ও সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক তপন সেনের বক্তব্য, দেশজুড়ে প্রতিবাদ, প্রতিরোধের রাস্তার পাশাপাশি শোষিত-বঞ্চিতদের কাছে বিকল্পের কথা তুলে ধরতে হবে আমাদের, নিতে হবে আরও জোরদার লড়াইয়ের শপথ। রুখতে হবে জাতপাত-বিভাজনের রাজনীতি। এই সম্মেলন হবে তারই বার্তাবাহক।
একদিকে, দিগন্ত বিস্তৃত উদ্বেলিত সমুদ্র, অন্যদিকে, শহরজুড়ে অসংখ্য লাল পতাকার সমারোহ তৈরি করেছে এক অন্যরকম পরিবেশ। আর কে বিচের সামনেই অন্ধ্র প্রদেশ ইউনিভার্সিটি কনভেনশন সেন্টার, জমজমাট এলাকা। এখানেই এবার আয়োজিত হচ্ছে সিআইটিইউ সর্বভারতীয় সম্মেলনের। গোটা দেশ থেকে ১৩২০ জন প্রতিনিধি অংশ নিতে চলেছেন এবারের সম্মেলনে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে অংশ নেবেন ১৯২ জন প্রতিনিধি। সম্মেলনকে সফল করে তুলতে সম্মেলনস্থলে ইতিমধ্যে পৌঁছেছেন ওয়ার্লড ফেডারেশন অব ট্রেড ইউনিয়নস’র জেনারেল সেক্রেটারি পামবিস কাইরিসটিস।
সমুদ্রের ঢেউয়ের বিপরীতে দাঁড়িয়ে লাল পতকায় এবং ফুল দিয়ে মোড়া সম্মেলনের সুসজ্জিত তোরণ সাদর অভ্যর্থনা জানাচ্ছে সকলকে। এই সময়ে অসংখ্য পর্যটকের আনাগোনা বিশাপত্তনমে। আর কে বিচে ভ্রাম্যমান পর্যটকদেরও আকর্ষণ করেছে এই তোরণ সহ আলোকোজ্জ্বল গোটা ভবনটি। অনেকেই উৎসাহের সঙ্গে প্রবেশও করেছেন, হাত মেলাচ্ছেন শ্রমিক আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ ও কর্মীদের সঙ্গে।
১৮তম সর্বভারতীয় সম্মেলনস্থলের নাম হয়েছে কমরেড অনাথালাভত্তম আনন্দন নগর। মঞ্চ হয়েছে কমরেড এমএম লরেন্স এবং কমরেড বাসুদেব আচারিয়ার নামে। বুধবার সম্মেলনের পতাকা উত্তোলন করবেন কে হেমলতা। উপস্থিত থাকবেন সাধারণ সম্পাদক তপন সেন সহ বিভিন্ন রাজ্যের নেতৃবৃন্দ।
সম্মেলন উপলক্ষে সম্মেলনস্থলের অদূরে বৃহৎ পরিসরে আয়োজিত হয়েছে বিজ্ঞান প্রদর্শনী ও বইমেলা। প্রদর্শিত হচ্ছে শ্রমিক আন্দোলনের সংগ্রামের ইতিহাস সংবলিত নানা পোস্টার, শ্রমিক আন্দোলনের অবিসংবাদিত প্রয়াত নেতৃত্বের প্রতিকৃতি থেকে বিজ্ঞানী, মনীষীদের ছবি। এছাড়া ২৭ জানুয়ারি থেকে প্রতিদিনই চলছে ‘শ্রমিক উৎসব’— যেখানে থাকছে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থেকে বিভিন্ন আলোচনাচক্র।
সিআইটিইউ সর্বভারতীয় সম্মেলন উপলক্ষে গোটা দেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গেও গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন ক্ষেত্রের সংগঠিত ও অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকরা মিছিল, সমাবেশে অংশ নিয়েছেন। একইসঙ্গে প্রস্তুতি চলেছে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি দেশজুড়ে ধর্মঘটেরও। কে হেমলতা এদিন বলেন, শ্রমকোড ও পুঁজিবাদের আগ্রাসন এবং অতিরিক্ত মুনাফার প্রবণতা শ্রমিক শোষণের অন্যতম প্রক্রিয়া। শ্রমিকদের সংগঠিত হতে দেওয়া হচ্ছে না। এর বিরুদ্ধে আরও বেশি করে শ্রমিক সচেতনতা দরকার— যা সিআইটিইউ’র অন্যতম লক্ষ্য।
এই বিশাখাপত্তনমও লড়াইয়ের এক অন্যতম ক্ষেত্র। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিশাখাপত্তনম স্টিল প্ল্যান্ট বিক্রির চেষ্টা করছে মোদী সরকার। সেখানকার প্রায় ৪ হাজার কর্মীকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওদিকে, গঙ্গাভরম বন্দরকে তুলে দেওয়া হয়েছে আদানিদের হাতে। বিশাখাপত্তনম কেবল প্রতীক মাত্র, দেশ জুড়েই একই অবস্থা তৈরি হয়েছে। সিআইটিইউ সর্বভারতীয় নেতৃত্বের বক্তব্য, এর বিরুদ্ধে আমাদের আরও একজোট হতে হবে। এই সম্মেলন হবে তার রূপরেখা।
নেতৃবৃন্দের কথায় একটি সম্মেলন মানে শুধুই একটা মঞ্চ গড়ে সমাবেশ নয়, সম্মেলন মানে বহু শ্রমিকের পরিশ্রম, উদ্যোগ, প্রচেষ্টা, অর্থ সংগ্রহ থেকে ব্যবস্থাপনা- নিহিত রয়েছে। সিআইটিইউ’র ছাতার তলায় যে অসংখ্য সংগঠন রয়েছে তারা সহ সংগঠিত ও অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের উদ্যোগের ফসল এই সম্মেলন। গিগ ওয়ার্কার থেকে পরিযায়ী শ্রমিক সহ অসংখ্য শ্রমিকদের বঞ্চনার কথা তুলে ধরবে এই সম্মেলন, শ্রমিকরাই বলবেন, আলোচনা করবেন কিভাবে আগামী দিনে লড়াই আন্দোলন পরিচালিত হবে। জাতপাত বর্ণ বৈষম্য, বিচ্ছিন্নতাবাদের বিরোধিতা করে শ্রমিকদের আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী করার প্রয়াস নেবে এই সম্মেলন।
Comments :0