CPI-M Alipurduar district Conference

আলিপুরদুয়ার জেলা সম্মেলনে শ্রেণি আন্দোলন বিকশিত করার ডাক, সম্পাদক ফের কিশোর দাস

জেলা

রবিবার আলিপুরদুয়ার জেলা সম্মেলনে পর্যবেক্ষণমূলক ভাষণ দিচ্ছেন জিয়াউল আলম। ছবি: অমিত কর

ভবতোষ ভট্টাচার্য: ফালাকাটা,

মানুষই ঠিক করবেন আগামীদিনের ইতিহাস কী হবে। নির্দিষ্ট পরিস্থিতি বিচার করে সেই অনুযায়ী নির্দিষ্ট কর্মপন্থা গ্রহণ করতে হবে। সেই লক্ষ্যে শ্রেণি আন্দোলনকে বিকশিত করতে প্রস্তুত হোন। 
রবিবার কমরেড সীতারম ইয়েচুরি নগর (ফালাকাটা) এবং কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মঞ্চে (ফালাকাটা কমিউনিটি হল) অনুষ্ঠিত সিপিআই(এম) আলিপুরদুয়ার জেলা সম্মেলনে প্রতিনিধিদের উদ্দেশে এই আহ্বান জানান পার্টির রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য জিয়াউল আলম। 
শনিবার এই সম্মেলন শুরু হয়েছিল। ২২০জন প্রতিনিধি এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। গত দুদিন ধরে ৩৬জন প্রতিনিধি আলোচনা করেন। প্রতিনিধিদের আলোচনায় চা শ্রমিকদের সমস্যা, কৃষকদের ফসলে দাম না পাওয়া, পার্শ্ববর্তী ভূটান পাহাড় কেটে খনিজ সম্পদ আহরণের ফলে পরিবেশ, বিশেষ করে জঙ্গলে তার কী ধরনের বিরূপ প্রভাব পড়ছে, তা উঠে আসে। প্রতিনিধিরা বলেন, পুঁজিবাদ বিভিন্ন কায়দা কৌশল করে এগোচ্ছে। তারই ফলস্বরূপ জমি, জল, জঙ্গল, খনি লুঠেপুটে খেতে চাইছে। এর উপর জুটেছে বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তির বাড়বাড়ন্ত। এই ভাইরাস শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে বিষ ছড়াচ্ছে। 
জেলার জয়গাঁতে বহু অসংগঠিত শ্রমিক রয়েছেন। চা বাগান অধ্যুষিত এই অঞ্চলের মানুষ কাজ না পেয়ে পার্শ্ববর্তী ভূটানে চলে যাচ্ছেন কাজের আশায়। বেশ কয়েকজন প্রতিনিধি বলেছেন, এই আলিপুরদুয়ার জেলায় এক বড় অংশের মানুষ পেশাগতভাবে জড়িত চা-বাগিচায়। এছাড়াও রয়েছে কৃষক, নির্মাণ কাজে দৈনিক মজুরির শ্রমিক প্রচুর অসংগঠিত শ্রমিক। তাঁদের আজকে জীবনজীবিকা বিপন্ন। জঙ্গল, কৃষি জমি নষ্ট হচ্ছে। তাঁদেরকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। তাঁরা জ্বালা যন্ত্রণায় ভুগছেন। বালি, পাথর উত্তোলনে কর্পোরেট থাবা বসিয়েছে।অনেক মানুষ এর ফলে কর্মহীন হয়ে পড়ছেন। 
প্রতিনিধিরা উদ্বেগ নিয়ে বলেছেন, আগামীদিনে এই জেলায় চা শিল্পে সঙ্কট অবশ্যম্ভাবী। বনবস্তিবাসীদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। এই শ্রমজীবী মানুষ অসহায় হয়ে পড়ছেন। তবে এর পাশাপাশি একটা রূপালি রেখাও আছে। যতই বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি মানুষকে ভাগ করার চেষ্টা করুক না কেন, মানুষকে বিভ্রান্ত করে অশান্তি পাকানো চেষ্টা চালালেও এখনো পর্যন্ত এই জেলায় কোন অশান্তি হয়নি। মানুষ ধরতে পারছেন ওদের চালাকিটা। 
এপ্রসঙ্গে জিয়াউল আলম প্রতিনিধিদের উদ্দেশে বলেছেন, একসময় এখানকার বিভিন্ন জনজাতি এখানকারা চা বাগানগুলোকে নতুন চেহারা দিয়েছিল। আজ তাঁরা বিপন্ন। তাঁদের পাশে বামপন্থীদের দাঁড়াতেই হবে। 
জিয়াউল আলম বলেন, সমকালীন সময়ে পরিবেশ পরিস্থিতি থাকলেও সেভাবে বামপন্থী আন্দোলনের প্রসার ঘটছে না।  বক্তব্যকে সমকালীন করতে হবে। নয়তো সাধারণ মানুষের কাছে আমরা গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে পারব না। মতাদর্শগতভাবে বলীয়ান হয়ে বিকল্প ভাবনা ভাবতে হবে। বিজেপি- তৃণমূলকে টেনে নামাতে সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক শক্তিকে এক করে বামপন্থার পুনর্জাগরণ ঘটাতে হবে। 
দু’দিন ধরে সম্মেলনে প্রতিনিধি আলোচনা শেষে জবাবী ভাষণে কিশোর দাস বলেন, সাংগঠনিক ত্রুটি বিচ্যুতি কাটিয়ে উঠে মানুষের সঙ্গে জীবন্ত সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। 
সম্মেলন থেকে কিশোর দাস জেলা সম্পাদক হিসাবে পুনঃনির্বাচিত হয়েছেন। এই সম্মেলন থেকে সর্বসম্মতিক্রমে ৪০ জনের জেলা কমিটি নির্বাচিত হয়।
 

Comments :0

Login to leave a comment