July 9th Rally Maldah

অঝোরে বৃষ্টিতেও উত্তরবঙ্গের সব জেলায় নিবিড় প্রচার ধর্মঘটের

জেলা

বৃষ্টির মধ্যে ধর্মঘটের সমর্থনে মিছিল মালদহে।

ধর্মঘটের সমর্থনে উত্তরবঙ্গের জেলায় জেলায় চলছি মিছিল। কেন্দ্রের শ্রম কোড বাতিলের পাশাপাশি জনজীবনের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দাবিতে বুধবার, ৯ জুলাই, সারা দেশে ধর্মঘট। 
মঙ্গলবার মালদহে অঝোরে বৃষ্টির মধ্যে হয়েছে মিছিল। রাজ্যের প্রায় সর্বত্র বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু আটকে যায়নি ধর্মঘটের প্রচার। ১০ কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন এবং জাতীয় স্তরের কর্মী ফেডারেশন সমূহের ডাকে ধর্মঘট বুধবার। শ্রমকোড বাতিল, শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রোধ, কৃষকের ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নির্ধারণের জন্য আইন প্রণয়ন, সমস্ত ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্যকরী নীতি গ্রহণ করা, সকল প্রকার ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামকে জিরো জিএসটি-র আওতায় আনা, শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা সহ ১৭ দফা দাবিতে আগামী ৯ জুলাই দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘট। 
মঙ্গলবার বিকালে কোচবিহার-১ ব্লকের ধলুয়াবাড়ি এলাকায় মিছিল করে সিআইটিইউ। এই মিছিল ধলুয়াবাড়ি এলাকা থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা পরিক্রমা করে। মিছিলের নেতৃত্ব দেন সিআইটিইউ কোচবিহার জেলা সম্পাদক জগৎজ্যোতি দত্ত সহ শ্রমিক নেতৃবৃন্দ। এদিন কোচবিহার শহরেও ধর্মঘটের সমর্থনে মশাল মিছিল হয়। 
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা জুড়ে হয়েছে মিছিল ও পথসভা। এদিন তপনে মিছিল ও পথসভায় ছিলেন গণ আন্দোলনের নেতা নন্দলাল হাজরা সহ নেতৃবৃন্দ। বালুরঘাটে হাইস্কুল মাঠ থেকে বিশাল মিছিল বের হয়ে শহর পরিক্রমা করে। বুনিয়াদপুরে  শ্রমজীবীদের যৌথ মিছিল ও পথসভা হয়। এদিন পথসভায়  বুনিয়াদপুরে  সিআইটিইউ জেলা সম্পাদক গৌতম গোস্বামী বলেন, শ্রমিকদের উপর পেশাগত  ভয়ঙ্কর আইন লাগু করার চেষ্টা চালাচ্ছে কেন্দ্র সরকার। শ্রমকোড লাগু করে  শ্রমিকদের কাজের স্থায়িত্ব থাকবে না। দৈনিক বারো ঘন্টা কাজ করতে বাধ্য থাকবেন শ্রমিকরা। রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার যৌথ ভাবে কর্মসংস্থানকে সংকুচিত করছে। দেশের এক শ্রেণির ধনীরা আরো বিত্তশালী হচ্ছে অপর দিকে গরীব মানুষ আরো অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল হচ্ছে। রাজ্যে মহিলারা সুরক্ষিত নন। প্রতিদিন শাসক দলের নেতাদের দ্বারা লাঞ্ছিত হচ্ছেন। ধর্মঘট তার বিরুদ্ধে।
শিলিগুড়িতে একাধিক মিছিল, মশাল মিছিল,বাইক মিছিল, সভা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন ও ফেডারেশনগুলির ডাকে হিলকার্ট রোডে মশাল মিছিল হয়। মিছিলে নেতৃত্ব দেন মোহন পান্ডা,জয় চক্রবর্তী প্রমুখ। এদিন সকালে সিআইটিইউ দার্জিলিঙ জেলা কমিটির ডাকে রেগুলেটেড মার্কেট চত্বরে ও খালপাড়া, নয়াবাজার এলাকায় মিছিল হয়। এদিন বিকেলে শিলিগুড়ি শহরে বাইক মিছিল হয়। জলপাইমোড় থেকে মিছিল শুরু হয়।  পাহাড় থেকে তরাইয়ের সমস্ত চা বাগানেও ধর্মঘটের সমর্থনে মিছিল,সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এদিন পশ্চিমবঙ্গ পেনশনার্স ওয়েলফেয়ার সমন্বয় সমিতি এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ ওয়ার্কমেন্স ইউনিয়ন দার্জিলিং জেলা কমিটি শিবমন্দির এলাকায় বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানির শিলিগুড়ি সাব আর্বান ডিভিশনের সামনে ধর্মঘটের সমর্থনে সভা করা হয়। সভায় বক্তব্য রাখেন প্রদীপ কুন্ডু।
ধর্মঘটের সমর্থনে জলপাইগুড়ি শহরের বড় পোস্ট অফিস মোড় থেকে শ্রমিক কর্মচারী মেহনতি মানুষের এক বিরাট মিছিল শহর পরিক্রমা করে কর্মচারী ভবনে গিয়ে শেষ হয়। বিভিন্ন বামপন্থী  শ্রমিক, কর্মচারী, কৃষক সংগঠন ও অন্যান্য সংগঠনের নেতৃবৃন্দ মিছিলে প্রথম সারিতে উপস্থিত ছিলেন। মিছিলে নেতৃত্ব দেন কর্মচারী আন্দোলনের নেতা বাণীব্রত ঘোষ প্রমুখ। মিছিল বড় পোস্ট অফিস মোড় থেকে শুরু হয়ে থানা মোড়, মার্চেন্ট রোড, দিনবাজার, বেগুনটারি, কদমতলা, ডি বি সি রোড হয়ে কর্মচারী ভবনে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে শ্লোগান ওঠে, চা শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি অবিলম্বে চালু করতে হবে। ৮ ঘণ্টা কাজের দাবি সুরক্ষিত রাখতে ৯ জুলাই এর ধর্মঘট সফল করুন। জলপাইগুড়ি শহরে মশাল মিছিল করে এসএফআই ও ডিওয়াইএফআই।  
এদিন বিকালে মালদহ টাউন হল মাঠ থেকে মিছিল হয়। শ্রমিক, কর্মচারী, শিক্ষক, সহ ছাত্র-যুব-মহিলাসহ গণ-আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন কৌশিক মিশ্র, অম্বর মিত্র প্রমুখ। মিছিল ফোয়ারা মোড়ে শেষ হয়। মিছিল শুরু হওয়ার অল্পক্ষণের মধ্যেই প্রবল বৃষ্টি শুরু হলে বৃষ্টিতে ভিজেই মিছিল হয়। এদিন জেলার ধর্মঘট আহ্বানকারী সংগঠনসমূহের জেলা আহ্বায়ক দেবজ্যোতি সিনহা বলেন এই কয়দিন জেলার সর্বত্র প্রচার চলেছে। আগামীকাল সকাল থেকেই পথে নামা হবে। বিভিন্ন জায়গায় অবরোধ হবে। পুলিশ যদি ধর্মঘট ভাঙতে কোন শক্তি প্রয়োগ করে তবে পথে নেমেই তার মোকাবেলা হবে। 
উত্তর দিনাজপুর জেলার ৯৮ টি গ্রাম পঞ্চায়েতে চলল ব্যাপক প্রচার। রসাখোয়া থেকে মিছিল এসে পৌঁছায় করণদিঘিতে। করণদিঘিতে ধর্মঘটের সমর্থনে মিছিলে নেতৃত্ব আশিষ ঘোষ বলেন, বিড়ি শ্রমিকের অধিকারও খর্ব করেছে কেন্দ্র ও রাজ্যের সরকার। গরিব মানুষের সামাজিক সুরক্ষার দাবিতে প্রচার হয়েছে সর্বত্র। বুধবারের ধর্মঘটকে ঐতিহাসিক করে তুলতে, সর্বনাশা কালা কানুনের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটের, সাধারণ নাগরিক বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষের  বড় অংশ মিছিলে পা মেলানেন।

Comments :0

Login to leave a comment