লাদাখের স্বশাসিত পার্বত্য পরিষদের নির্বাচনে বিজেপিকে কার্যত উড়িয়ে দিয়ে জয়লাভ করল বিরোধী রাজনৈতিক বিন্যাস ‘ইন্ডিয়া’। রবিবার নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হয়। ২৬টি আসনের মধ্যে ২১ আসনে জয়ী হয়েছে জম্মু-কাশ্মীর ন্যাশনাল কনফারেন্স-কংগ্রেস জোট। বিজেপি জিতেছে ২টি আসনে। বাকিগুলিতে জয়ী হয়েছেন নির্দল প্রার্থীরা। ২০১৯ সালে ৩৭০ ধারা বাতিলের পরে জম্মু-কাশ্মীর কিংবা লাদাখে এই প্রথম কোনও স্থানীয় নির্বাচন হল।
নির্বাচনে জয়ের পরে জম্মু কাশ্মীর ন্যাশনাল কনফারেন্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট তথা জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা বলেছেন, বিজেপির বিভাজনের রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন লাদাখের মানুষ। এই রায় ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট নেওয়া একতরফা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেও।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ নম্বর ধারা বাতিলের ঘোষণা করে বিজেপি। একইসঙ্গে জম্মু-কাশ্মীর রাজ্য ভেঙে লাদাখ এবং জম্মু-কাশ্মীর নামে দুটি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল তৈরি করা হয়। ২০১৯’র লোকসভা নির্বাচনে লাদাখ কেন্দ্র থেকে ১১ হাজার ভোটে জয়ী হয়েছিলেন বিজেপির জামিয়াং শেরিং নামগিয়াল। ২০২৪’র নির্বাচনের আগে সেখানেই ব্যাকফুটে বিজেপি।
জম্মু-কাশ্মীর ন্যশনাল কনফারেন্সের অভিযোগ, নির্বাচনে তাঁদের প্রার্থীদের চিরাচরিত লাঙল চিহ্নে প্রতিদ্বন্দিতা করতে বাধা দেয় লাদাখ প্রশাসন। সেই লড়াই গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে। আইনি লড়াইয়ের ফলে পার্বত্য পরিষদের নির্বাচন সেপ্টেম্বর থেকে পিছিয়ে অক্টোবরে হয়।
এনডিটিভি’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, লাদাখের সাধারণ মানুষ ৩৭০ ধারা বাতিল এবং জম্মু-কাশ্মীরকে ভেঙে দুটি পৃথক কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল তৈরির বিরুদ্ধে সরব। লাদাখের মানুষের অভিযোগ, রাজ্য পুনর্বিন্যাসের ফলে তাঁদের অস্তিত্ব হারিয়ে গিয়েছে। একইসঙ্গে তাঁদের ক্ষোভ, কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল তৈরির ফলে কর্মসংস্থান তলানিতে এসে ঠেকেছে। কোপ পড়েছে স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা পরিকাঠামোর উপরেও। এনডিটিভি’র প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, লাদাখের বহু মানুষ ফের পুরনো রাজ্য ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
ওমর আবদুল্লা আরও জানিয়েছেন, এই নির্বাচনের ৩৭০ ধারা বাতিলের বিরুদ্ধে গণরায়।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা জানাচ্ছেন, লাদাখে বড় সংখ্যক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানষের বাস। জম্মু-কাশ্মীর থেকে লাদাখকে আলাদা করে পাকাপাকি ভাবে সেই ভোট দখলের ছক করেছিল বিজেপি, অতি পরিচিত বিভাজনের রাজনীতিকে হাতিয়ার করে। কিন্তু বিজেপির সেই ছক লাদাখের সাধারণ মানুষ ভেস্তে দিয়েছে। বরং লেহ এবং কার্গিল জেলায় ন্যশনাল কনফারেন্স ও কংগ্রেস প্রার্থীদের বৌদ্ধ ও মুসলমান- উভয় সম্প্রদায়ের মানুষই সমর্থন জানিয়েছেন। এই বিন্যাসের ফলে স্বাভাবিক ভাবেই বিজেপির চিন্তা বেড়েছে।
Comments :0