CPIM South Dinajpur

দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা সম্মেলন: সমাবেশে জনতার ঢল

রাজ্য জেলা

ছবি- দিলীপ সেন।

অপূর্ব মণ্ডল ও সুমিত বন্দোপাধ্যায়: হরিরামপুর

আঁকাবাঁকা পথে মিছিলের শেষ লাল ঝান্ডাটা তখনো অনেক দূরে। উৎসুক মানুষ রাস্তার দু' ধারে দাঁড়িয়ে শ্লোগানে শুনছেন, ‘আবাস যোজনার বাড়ি চাই, একশো দিনের কাজ চাই, শিক্ষান্তে কর্মসংস্থান চাই, আরজি করের ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের শাস্তি চাই, ফসলের ন্যায্য মূল্য দিতে হবে, সারের কালোবাজারি বন্ধ করতে হবে, পরিযায়ী শ্রমিকদের নিরাপত্তা দিতে হবে, পঞ্চায়েতের দুর্নীতিবাজদের হটাতে হবে।’ 
গত চোদ্দ বছর শিল্পবিহীন দক্ষিণ দিনাজপুরের মানুষ বড়ো দুর্দশায় আছেন। জেলার হাজার হাজার শিক্ষিত বেকার চাকরি না পাওয়ার হতাশায় নিমজ্জিত। খেতমজুর ও শ্রমিকদের একশো দিনের কাজ উঠে গিয়েছে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের যৌথ উদ্যোগে। 
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজ্যের যুবক যুবতীরা ভিন রাজ্যে চলে যাচ্ছেন হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে। তাঁদের অবস্থাও ভালো নয়। হারিয়ে যাচ্ছে অনেকেই, বিচ্ছিন্ন হয়ে অসহায় পরিবার। শাসক দলের পরিচালিত পঞ্চায়েত ও পৌরসভা সাধারণ মানুষের দুর্দশার কথা শুনতে চায়নি আবার নেতাদের রক্ত চক্ষুর ভয়ে অনেকেই মুখ খোলেনি। কিন্তু লাল ঝান্ডার মিছিলে তাদের অন্তরের দাবির শ্লোগান শুনে শাসক দলের নেতাদের চোখরাঙানি উপেক্ষা করে সাহস দেখিয়ে রাস্তার মোড়ে মহিলারা মিছিলে শুধু পুষ্পবৃষ্টিই করলেন না, দৃপ্তকন্ঠে বললেন, ‘এগিয়ে চলো কমরেড আমরাও আসছি সমাবেশে।’
ছোট গ্রাম ও পাড়া থেকে থেকে আলপথ ধরে লাল ঝান্ডা হাতে সরু লম্বা মিছিল ক্রমশ জুড়ছে বড়ো রাস্তায় মূল মিছিলে। গ্রাম ছাড়িয়ে  মিছিল যত এগোচ্ছে মিছিলের শেষটা ক্রমশ বড়ো হচ্ছে,  শ্লোগানের তেজও বাড়েছে। 
দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুরে কমরেড মহিউদ্দিন আহমেদ ও মাগদালিনা মুর্মু নগরে এবং  কমরেড নারায়ণ বিশ্বাস মঞ্চে সিপিআই(এম)দক্ষিণ দিনাজপুরের ২৪ তম জেলা সম্মেলন উপলক্ষে প্রকাশ্য সমাবেশের উদ্দেশ্যে বিশাল মিছিল এগিয়ে চলে হরিরামপুর বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন প্রাঙ্গণে। মিছিল সমাবেশ প্রাঙ্গণ ছুঁতেই মাইকে গণসংগীতের আবহে শ্লোগান যেন আরো প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। ছাত্র, যুব, মহিলা, কৃষক, শ্রমিদের মিলিত উচ্চস্বর শোনা যাচ্ছে। মিছিল শেষে না হতেই সমাবেশের মাঠে তিল ধারণের জায়গা নেই। কিন্তু মানুষ সুশৃঙ্খল ভাবে দাঁড়িয়ে নেতৃত্বের কথা শুনতে চান,  শুনতে চান আগামীতে সিপিআই(এম)’র লড়াইয়ের বার্তাও। 


হরিরামপুরের মানুষ এতো বড়ো সমাবেশে আপ্লুত। প্রকাশ্য সমাবেশের শুরুতেই প্রাক্তন জেলা সম্পাদক মানবেশ চৌধুরীর লেখা বই "কমিউনিস্ট আন্দোলনে দিনাজপুর" উদ্বোধন করে প্রকাশ্যে আনেন সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যা দেবলিনা হেমব্রম। প্রকাশ্য সমাবেশের ভাষণে বলেন, শিক্ষা, বাসস্থান, কর্মসংস্থান, মত প্রকাশের অধিকার সহ মূল অধিকারগুলি থেকে বর্তমান কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার ক্রমাগত বঞ্চিত করছে জনগণকে। ৩৪ বছর সরকারে ছিল বামফ্রন্ট। ২০১১ সালে রাজ্যে তৃণমূল সরকার হয়। মানুষ বুঝেছেন ‘১১ সাল থেকে ‘২৫ সাল, এই চোদ্দ বছরে তাঁরা কী কী হারিয়েছেন। শিক্ষা থেকে বঞ্চিত এই রাজ্যের  ছেলে মেয়েরা। স্বাস্থ্য থেকে রেশন ব্যবস্থা সবেতেই দুর্নীতির যোগ রয়েছে শাসক দলের নেতা থেকে মন্ত্রীদের। তৃণমূল সরকারের ১৪ বছরে কটা কলকারখানা নতুন করে তৈরি হয়েছে আর কটা বন্ধ হয়েছে মানুষ সেটা দেখেছেন। 
তিনি বলেন, ‘কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ’। প্রয়াত কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে বামফ্রন্ট সরকারের সেই লক্ষ্য হারিয়ে গেছে মমতা ব্যানার্জির রাজত্বে। তৃণমূলের নেতা মন্ত্রীরা দুর্নীতির দায়ে জেলে রয়েছেন। আর আমাদের গর্ব হয় যে আমরা বামপন্থী, আমরা সিপিআই(এম) করি। আমরা মাথা উঁচু করে চলি, আমাদের কেউ বলে না ‘চোর’। তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী বলছেন কন্যাশ্রী, লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা দিচ্ছেন। কিন্তু সেই টাকা তিনি তাঁর জমিদারির থেকে দিচ্ছেন না। আমাদের পরিশ্রমের টাকা, আমাদের অধিকারের টাকাই আমাদের দিচ্ছে। তিনি বলেন, লড়াই করেই আমরা ন্যায্য অধিকার বুঝে নেব। 
মঞ্চে যুব নেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জি বলেন, গরিব মানুষকে পঞ্চায়েতের মাধ্যমে কথা বলার অধিকার দিয়েছে বামফ্রন্ট। পঞ্চায়েতে তাঁরাও যে অংশগ্রহণ করেছেন এবং নেতৃত্ব দিয়েছে, তা-ও করেছে বামফ্রন্ট।  শাসক দল শুধু বড়লোক ও দুষ্কৃতীদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে পঞ্চায়েত। গরিব মানুষের স্থান নেই সেখানে। ভাগের বখরা নিয়ে খুন খারাপি প্রতিদিন ঘটছে। কাজ না পেয়ে দিনাজপুরের একটা বিরাট অংশ পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে বাইরে কাটাচ্ছেন। পরিবারগুলি অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। ট্যাক্সের টাকা আমরা দিই কিন্তু স্বাস্থ্যক্ষেত্রে পরিষেবা পান না সাধারণ মানুষ। দুর্নীতিতে ভরে গিয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তর। এদিন বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এবং কলকাতা জেলা সম্পাদক কল্লোল মজুমদার, মালদহের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন জেলার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক নন্দলাল হাজরা।

Comments :0

Login to leave a comment