Cyclone Dana

দানা'য় ক্ষতিগ্রস্ত গরিব প্রান্তিক মানুষ, শুনশান দীঘা, মান্দারমনি, শঙ্করপুর

রাজ্য জেলা

রাধাগোবিন্দ মান্না 


বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ঘূর্ণিঝড় দানা ল্যান্ড ফল করলেও বাংলার উপরে তার প্রভাব কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছিল। বৃষ্টি এবং ঝড়ের গতিবেগ আবহাওয়া দপ্তরের ঘোষণা অনুযায়ী অপেক্ষাকৃত কম ছিল। ফলে পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলীয় অঞ্চলের ভারি বৃষ্টির প্রভাব ছিল। পাশাপাশি বাতাসের বেগ ছিল। যার ফলে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার খেজুরি, নন্দীগ্রাম, মহিষাদল , দেশপ্রাণ ব্লক, মারিশদা , কাঁথি, রামনগর ১এবং ২ এগরার কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশ কিছু পুরোনো, কাঁচা বাড়ি, বাঁশের ছিটে বেড়া যেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত। তার বেশিরভাগের মালিক প্রান্তিক গরিব মানুষ। বেশির ভাগই উপকূলে মৎস্য শিকারের সঙ্গে যুক্ত। তাদের সহায় সম্বল হচ্ছে ছোট ডিঙি নৌকো এবং জাল যাকে আঁকড়ে রেখে সারা বছর সমুদ্র বা নদী পাড়ে বাস। জলের উপরেই রুটি রুজি। সেই গরিব প্রান্তিক মানুষগুলোরই ঘর নষ্ট হয়েছে। সরকারি বঞ্চনার ফলে এই গরিব মানুষগুলো প্রতিবছরই বর্ষাকাল কিংবা প্রবল দুর্যোগে ঘর হারায়। আবার ঘর বাঁধে বহু কষ্টে। আবাস যোজনায় আবেদন করে পাকার ঘরের স্বপ্ন দেখে শুধু। 

জেলার বেশ কিছু জায়গায় ইলেকট্রিক খুঁটি উপড়ে পড়েছে। কিছু গাছ পড়েছে। সরকারি কর্মীরা দ্রুত কাজ করেছেন।

বৃহৎ ক্ষতি হয়েছে কৃষক বন্ধুদের। মাঠের আধপাকা ধান, কাঁচা ধান নষ্ট হবে। সবজি বাগানে জল জমে গেছে। ফুল, পান চাষের প্রভাব বিস্তার করেছে। ফলে আগামী দিনে সবজির দাম আকাশ ছোঁয়া হবে রয়েছে আশঙ্কা। বৃষ্টি শুক্রবার সকাল থেকে রাত্রি পর্যন্ত কখনো ঝিরঝিরে কখনো ভারী বৃষ্টি আকার ধারণ করছে। দীঘা, মান্দারমনি, দাদন পাত্রবাড়, শংকরপুর প্রভৃতি পর্যটনকেন্দ্র গুলিতে দোকানপাট সমস্ত বন্ধ। শনিবার খোলার সম্ভাবনা আছে এরকমটাই জানালো দীঘার এক চা বিক্রেতা। সিবিচে যাওয়ার সমস্ত জায়গাগুলোতে গার্ডরেল এবং বাঁসের বেড়া করে দেওয়া হয়েছে। খাঁ খাঁ করছে উপকূলের পর্যটন কেন্দ্র দীঘা, মান্দারমনি, শঙ্করপুর। 

অপরদিকে ত্রাণ শিবির গুলোতে অল্প বিস্তর মানুষ অবস্থান করছেন। কিন্তু এদিন সকাল থেকে কোন কোন জায়গায় তাদের বাড়ি ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। বাড়ি ফিরে তারা কি করবে ? এখনও বৃষ্টি কমেনি। তাদের সেই কাঁচা মাটির বাড়ি উড়ে গেছে। বসে গেছে অথবা জল জমে গেছে। আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে খবর আরো দু একদিন বৃষ্টি হতে পারে। 

 সিপিআই(এম) নেতা হিমাংশু দাস বলেন, "জেলা প্রশাসন এক লক্ষ মানুষকে নাকি তুলে এনে তার ফ্লাড শেল্টার গুলিতে রেখেছেন বলে দাবি করছেন এবং বড় বড় কাগজওয়ালা ও মিডিয়াগুলোতে ভালো প্রচার চালাচ্ছে। বাস্তব অবস্থা তার উল্টো। হয়তো বা ক্ষয়ক্ষতির টাকা বিশাল আকারে দেখিয়ে ভাগ করতে সুবিধা হবে।গতকাল থেকে লক্ষ্য করা যাচ্ছে মুষ্টিমেয় ফ্লাড শেল্টার গুলিতে কোথাও লোক আছে, খাবার নেই ,জল নেই, আলো নেই। প্রশাসনের কোন ব্যবস্থাও নেই। বেশির ভাগ ফ্লাড শেল্টার গুলি যেমনটি ছিল তেমনটি আছে। খোলা ও হয়নি, জলা জঙ্গল, ভূতরেবাড়ি হয়ে পড়ে আছে।"

 গত দুদিন ধরে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এলাকা গত ভাবে বামফ্রন্ট ও রেড ভলেন্টিয়ারসদের পক্ষ থেকে প্রশাসনের নজরে আনার চেষ্টা করেও কাজ হয়নি। বৃহস্পতিবার খেজুরি -২ ব্লকের মতিলাল চকের স্কুলে প্রায় শতাধিক শিশু ও মহিলা সহ অসহায় পরিবারের লোকজনকে তুলে এনে রাখা হয়েছে। ভলেন্টিয়ার্সের পক্ষ থেকে সব রকম সাহায্য করা হচ্ছে। 

 

গতকাল থেকে "দানা" র প্রভাবের ফলে বিদ্যুৎহীন সমগ্র খেজুরী। এরসাথে একনাগাড়ে বৃষ্টিতে খেজুরির সমুদ্র উপকূবর্তী এলাকা গুলি বিশেষ করে নিজকশবা, পাঁচুড়িয়া, মতিলালচক, বারাতলা গ্রাম পঞ্চায়েতের পিরিজপুর, খেজুরী বটতলা, সাতশিমলী ও কলাগাছিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘোলাবাড় গ্রামগুলিতে মাটির কাঁচা বাড়ি ভেঙে পড়া শুরু হয়েছে। স্থানীয় পাকা বাড়ি ও স্কুল গুলিতে রেড ভলেন্টিয়ার্সদের উদ্যোগে অসহায় মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। অপরদিকে হলদিয়া মহাকুমার বিভিন্ন এলাকায় মাটির ঘরবাড়ি ছাড়াও রাস্তাঘাট ও মাঠের ফসল, শাক-সবজি, পুকুর, মাছের ভেড়ি সব ডুবতে শুরু করেছে। পরিস্থিতি ভয়ানক দিকে পরপর এগুচ্ছে। সরকার- প্রশাসন -পঞ্চায়েত নির্বিকার। গতকাল রাত্রি থেকে লাগাতার ভারী বৃষ্টির ফলে মহিষাদল, সুতাহাটা, হলদিয়া, নন্দীগ্রামের কয়েকটি অঞ্চল রাস্তাঘাট জলমগ্ন। বেশ কিছু কাঁচা বাড়ি বিপদজনক অবস্থায় রয়েছে। বিশেষ করে অমৃতবেড়িয়া অঞ্চল, কুকড়াহাটি অঞ্চল, টাউনশিপ, হোড়খালি শালুকখালি, নটপটিয়া সহ নদীর তীরবর্তী এলাকার মানুষ উদ্বিগ্ন অবস্থায় রয়েছে। কুকড়াহাটি প্রাথমিক স্কুলে সদারামচক, আনারনগর ৪ ও ৫ নম্বর বুথের ও গাজীপুর ১৪-১৫ নম্বর বুথের কয়েকশ মানুষ রয়েছে। গতকাল থেকে সুতাহাটা ব্লক প্রশাসন খাওয়ার ব্যবস্থা করলেও আজকে তাদের চলে যেতে বলে। কিন্তু প্রাকৃতিক পরিস্থিতি এখনো ঠিক না হয় অসহায় মানুষরা স্কুলে রয়েছেন। সিপিআই(এম)'র পক্ষ থেকে তাদের রাত্রের খাবার ব্যবস্থা দায়িত্ব নিয়েছে। সকাল থেকে হলদিয়া মহকুমার জলমগ্ন বিভিন্ন এলাকা পার্টি নেতৃত্ব সহ রেড ভলেন্টিয়ার্সের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতির খোঁজখবর নিচ্ছেন।

Comments :0

Login to leave a comment