Editorial

অবশেষে সেই চীনে

সম্পাদকীয় বিভাগ

কথায় বলে ঠেলার নাম বাবাজি। ঠেলায় পড়লে গর্জন ছে‍‌ড়ে বাঘও বেড়ালের মতো মিউ মিউ করে। সাত বছর আগে চীন সফরে যাবার মনস্থ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সাত বছর আগে চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিঙ  আদিখ্যেতা কম করেননি। সবরমতী নদীর কুলে দোলনায় দুলেছিলেন, নিজের হাতে চা পরিবেশন করে খাইয়ে ছিলেন জিনপিঙকে। কোলাকুলি গলাগলি তো ছিলই। চীন সফরে গিয়ে শি-কে নিয়ে নৌকাবিহার করেছিলেন। ভাবখানা জিনপি‍ঙের মতো বন্ধু হয় না। তারপর সব কিছু ওলট পালট হয়ে গেল। চীন হয়ে গেল ভারতের সবচেয়ে বড় শত্রু। চীনের সঙ্গে সম্পর্ক কার্যত শূন্য হয়ে যায়। চীনের পণ্য বয়কটের ডাক দেওয়া হয় মোদী সরকার ও বি‍‌জিপি’র তরফ থেকে। ভারতে চীনের বিনিয়োগ কার্যত নিষিদ্ধ হয়ে যায়। ভারতে কর্মরত চীনের সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে তল্লাশি-ধরপাকড় শুরু হয়। চীনের ইঞ্জিনিয়ার ও অন্যান্য কর্মীদের চীনে ফেরত পাঠানো হয়। চীনের লোকদের ভারতে আসার ভিসায় কড়াকড়ি করে কার্যত আসা বন্ধ করে দেওয়া হয়। দু’দেশের মধ্যে সরাসরি বিমান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। চীন থেকে পণ্য আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি সহ নানা ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। আর প্রতিদিন নেতা মন্ত্রীরা পালা করে চীনের বিরুদ্ধে হুঙ্কার দিয়ে এমন ভাব দেখাতো যে ভারতের কাছে চীন নিতান্তই গুরুত্বহীন ও অপ্রাসঙ্গিক হয়েছে। নরেন্দ্র মোদী নেতৃত্বে এবং আমেরিকার বদান্যতায় ভারত এখন বৃহৎ শক্তিশালী দেশ। মোদী এখন বিশ্ব গুরু। দুনিয়া ভারতকে সমীহ করে চলে।
এমন মনোভাব বেড়ে যায় আমেরিকা যখন চীনের বিরুদ্ধে কার্যত বাণিজ্য যুদ্ধ ঘোষণা করে। পশ্চিমী উন্নত দুনিয়াকে সঙ্গে নিয়ে আমেরিকা চীনের এমন বিধিনিষেধ আরোপ করে যাতে চীনের অর্থনীতি ধসে যায়, এক ঘরে হয়ে যায়। মোদী-শাহরা ভাবেন তাদের শত্রু চীনকে আমেরিকা যখন খরচার খাতায় ছুঁড়ে ফেলতে উঠে পড়ে লেগেছে তখন বিশ্বে দ্বিতীয় হয়ে ওঠার রাস্তা ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেনে সামরিক হামলা শুরু করার পর রাশিয়া তেল কেনায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে পশ্চিমী দুনিয়া। বাইডেন সরকারকে ধরে রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কেনার ব্যবস্থা করে ভারত।
কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে সব পাশা উলটে দিয়েছেন। ক্ষয়িষ্ণু মার্কিন অর্থনীতি ও বিশ্ব আধিপত্যকে রক্ষা করতে ট্রাম্প বিশ্ব অর্থনীতি ও বাণিজ্য ব্যবস্থাকে পালটে দিতে আসরে নেমেছেন। তার জেরে ভারতও তার কুনজরে পড়েছে। মোদী যতই ট্রাম্পকে তার প্রাণের বন্ধু বলে জাহির করুন ট্রাম্প কিন্তু প্রতিদিন মোদী ও ভারতকে অপমান অপদস্থ করে যাচ্ছেন। ভারতের পণ্যে শুল্ক চাপিয়েছেন ৫০ শতাংশ। চীন সহ বেশ কয়েকটি দেশ ট্রাম্পের এমন জুলুমের বিরুদ্ধে পালটা ব্যবস্থা নিলেও মোদীরা নীরব। পাক-ভারত যুদ্ধ নিয়েও মোদীকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়ছেন ট্রাম্প। মোদী কিছুই বলতে পারছেন না।  নীরবে মুখ বুজে সব অপমান সহ্য করে যাচ্ছেন। এদিকে আমেরিকার বিরুদ্ধে পালটা ব্যবস্থা হিসাবে চীন যে পদক্ষেপ নিয়েছে তাতে বিপদে পড়েছে ভারতও। বিরল খনিজ রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ করায় ভারতে গাড়ি, ইলেকট্রনিক্স, সৌর বিদ্যুৎ, প্রতিরক্ষা উৎপাদন থমকে গেছে। চীনের পুঁজি, প্রযুক্তি, যন্ত্রাংশের অভাবে ভারতের উৎপাদন মার খাচ্ছে। ভারতের কর্পোরেট চাপ দিচ্ছে চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করা। এরপর মোদীর সফরে না গিয়ে উপায় কি।

Comments :0

Login to leave a comment