JALPAIGURI AWAS

ভাঙা ঘর, নাম নেই আবাসে, ক্ষোভের মুখে বাগান ছাড়লেন বিডিও

জেলা

মাটিতে শুয়ে শিশু। (ডানদিকে) ভাঙা ঘর দেখাচ্ছেন রুবিনা মুন্ডা। (নিচে) জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের বিডিও দেখছেন হাল।

 দীপশুভ্র সান্যাল, জলপাইগুড়ি 

কেউ আছেন প্লাস্টিক টাঙিয়ে,কারো কোলের বাচ্চা ভাঙা ঘরে মাটিতে শুয়ে। তবুও মেলেনি ঘর। আবাস যোজনার ঘরের তালিকা খতিয়ে দেখে শ্রমিকদের ক্ষোভ আঁচ করতে পেরে কার্যত বাগান ছেড়ে সরে পড়লেন বিডিও। সংবাদমাধ্যমকে বললেন, ‘যা বলার ডিএম (জেলাশাসক) বলবেন।’ আবাস যোজনার বঞ্চনা নিয়ে লাগাতার আন্দোলনের চাপে অবশেষে করলাভ্যালি চা বাগানে আসতে বাধ্য হন জলপাইগুড়ি সদরের বিডিও মিহির কর্মকার। মঙ্গলবার তিনি জয়েন্ট বিডিও সহ বিডিও অফিসের অন্যান্য আধিকারিকদের নিয়ে বাগানে পৌঁছান। সঙ্গে ছিল কোতয়ালি থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী। এদিন বাগানের সিপিআই(এম) পঞ্চায়েত সদস্য রুবিনা মুন্ডা সদর বিডিওকে বাগান এলাকার শ্রমিকদের ঘরগুলি ঘুরিয়ে দেখান। উপরে প্লাস্টিক টাঙানো মাটির ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে সবাই বিস্মিত হয়ে দেখেন এঁদের আবাস তালিকায় নাম নেই। এমন একাধিক ঘরে গিয়ে অস্বস্তিকর প্রশ্নের মুখে পড়েন বিডিও। তারপর সংবাদ মাধ্যমকে কার্যত এড়িয়ে এলাকা ছাড়েন তিনি। এর আগেই বাড়তে থাকা ক্ষোভকে প্রশমিত করতে জলপাইগুড়ি সদর বিডিও অফিসে ‘হেল্পডেস্ক’ চালু হয়েছিল। কাগজপত্র নিয়ে অভিযোগ জানাতে বিডিও অফিসে বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দাদের লম্বা লাইনও দেখা গিয়েছিল। আবাস নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের চা বাগান থেকে কৃষি বলয়, ক্ষোভ রয়েছে সর্বত্র। নতুন তালিকা সামনে আসতেই সদর ব্লকে আন্দোলন শুরু করেন করলাভ্যালি চা বাগানের শ্রমিকরা। সদর বিডিওকে স্মারকলিপি দেওয়ার পাশাপাশি দীর্ঘক্ষণ ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে রাখেন এই বাগানের চা শ্রমিকরা। উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। দ্রুত সদর বিডিও নিজে বাগানে গিয়ে সরেজমিনে শ্রমিক আবাসের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেওয়ার পর অবরোধ তুলে নেন শ্রমিকরা। সেই সূত্র ধরেই সদর বিডিও এদিন বাগানে পৌঁছান। জলপাইগুড়ি সদর বিডিওকে কাছে পেয়ে বাগান শ্রমিকরা ক্ষোভ উগরে দেন। তাঁরা জানান অরবিন্দ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ২০২২ সালের তালিকায় ১৯৩০ জনের নাম থাকলেও এবারে মাত্র ৯৭০ জনের নাম রয়েছে আবাসের তালিকায়। এ প্রসঙ্গে অরবিন্দ গ্রাম পঞ্চায়েতের করলাভ্যালী চা বাগানের সিপিআই(এম) পঞ্চায়েত সদস্যা রুবিনা মুন্ডা বলেছেন, ‘‘করলাভ্যালি চা বাগানে বসবাসকারী নাগরিকদের বেশিরভাগই চা বাগান শ্রমিক। যাঁদের বাগানে কাজ নেই তাঁরাও এই বাগানের বাইরে শ্রমিকের কাজ করেন। এই এলাকার প্রায় ২৫০ পরিবারের বেশিরভাগেরই ঘর মাটি, বাঁশ ও টিন দিয়ে তৈরি। অনেকেই প্লাস্টিক টাঙিয়ে বসবাস করেন। ফলে প্রায় প্রত্যেক পরিবারই আবাস যোজনায় ঘরের টাকা পাবার যোগ্য। কিন্তু এ বছরের তালিকায় মাত্র ৩৩ পরিবারের নাম রয়েছে। ফলে শ্রমজীবী জনতা ক্ষুব্ধ।’’ 

Comments :0

Login to leave a comment