Fall of rupee

দ্বিগুণ গতিতে টাকার মূল্যপতন হচ্ছে

সম্পাদকীয় বিভাগ

দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের সময় যখন মার্কিন ডলারের তুলনায় ভারতীয় টাকার দ্রুত অবমূল্যায়ন হচ্ছিল তখন আজকের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-কে অত্যন্ত কুরুচিকরভাবে ব্যঙ্গ করে বলেছিলেন টাকার মূল্য যে গতিতে কমছে তাতে খুব শ্রীঘ্রই তা প্রধানমন্ত্রী বয়সকে অতিক্রম করে যাবে। শেষ পর্যন্ত মনমোহন জমানার দশ বছরে টাকায় ডলারের বিনিময় মূল্য তাঁর বয়সের ধারে কাছেও পৌঁছাতে পারেনি। তবে নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর টাকার মূল্যপতনের গতি এতটাই বেড়ে গেছে যে তা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বয়সকে অতিক্রম করে আরও বহুদূর এগিয়ে গেছে। অর্থনীতির মাঠে মোদী যেভাবে ব্যাট করছেন তাতে প্রতি মার্কিন ডলারের ৯০ টাকা ছুঁতে বেশি সময় লাগবে না। তেমন হলে সেঞ্চুরিও করে ফেলতে পারেন। তাঁর নেতৃত্বে নাকি দেশ শক্তিশালী হচ্ছে, তিনি বিশ্বগুরু হচ্ছেন অথচ টাকার মূল্য হু হু করে কমে যাচ্ছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে টাকা যথার্থ অর্থেই নিছক ছেঁড়া কাগজে পরিণত হচ্ছে।
২০১৪ সালে মোদীর নেতৃত্বে আরএসএস-বিজেপি যখন কেন্দ্রে ক্ষমতা দখল করে তখন ডলারের মূল্য ৬০ টাকার আসে পাশে। এখন সেই ডলারের মূল্য এসে ঠেকেছে সাড়ে ৮৫ টাকায়। মোদী দায়িত্ব নিয়ে দশ বছরের মধ্যে ডলারের মূল্য ২৫ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন অর্থাৎ বছরে আড়াই টাকা করে ডলারের দাম বেড়েছে। তার অর্থ দাঁড়ায় বছরে আড়াই টাকা করে ভারতীয় মুদ্রার মূল্যপতন ঘটেছে। স্বাধীনতার পর যেকোনো সরকারের তুলনায় মোদী সরকার সর্বাধিক হারের টাকার মূল্যপতন ঘটিয়েছে।
আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে টাকার বিনিময় মূল্য কমলে সাধারণ মানুষের কিছু আসে যায় না। কিন্তু যে অর্থনীতি শক্তিশালী‍‌ হতে চায় তার মুদ্রার মূল্য যদি জলের দর হয়ে যায় তার মর্যাদা বলে কিছু থাকে না। টাকার মূল্য কমলে বিদেশে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা মেলে বটে তবে আমদানিতে বাড়তি অর্থ গুণতে হয়। ভারতের অর্থনীতি যেহেতু রপ্তানি নির্ভর নয় তাই রপ্তানি থেকে যে সুবিধা মিলবে তার থেকে অনেক বেশি গুণাগার দিতে হবে আমদানির জন্য। ভারতে পণ্য উৎপাদনের অনেক কাঁচামালই আমদানি করতে হয়। ফলে দে‍‌শের মধ্যে পণ্যমূল্য বেড়ে যায়। সমস্যা বাড়ে সাধারণ মানুষের।
উদারনীতির দৌলতে ১৯৯১ সাল থেকে টাকার মূল্য খোলা বাজারে জোগান নির্ভর। অর্থাৎ তত্ত্বগতভাবে টাকার মূল্য ওঠানামায় সরকারের হস্তক্ষেপ করার কথা নয়। কিন্তু বাস্তবে প্রবলভাবে হস্তক্ষেপ করে সরকার। বাজারে ডলার সরবরাহ বাড়লে টাকার মূল্য বাড়ার কথা। তেমনি ডলার ঘাটতি হলে টাকার মূল্য কমার কথা। সরকার দাবি করছে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ এবং শেয়ার বাজারে নাকি বিদেশি মুদ্রার ছড়াছড়ি। যদি তাই হয় তবে তো টাকার মূল্য না বাড়লেও অন্তত স্থির থাকার কথা। অথচ অতীতের যেকোনও সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ-তিনগুণ হারে টাকার মূল্য পতন ঘটছে। তাহলে সরকারের মধ্যেই লুকিয়ে আছে মিথ্যার ফানুস। তথ্য পরিসংখ্যানে প্রসাদ লাগিয়ে সাজিয়ে গুছিয়ে, ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে অর্থনীতিকে প্রচারের আলোয় উজ্জ্বল করা হচ্ছে। বাস্তবে ভেতরটা যে ফাঁপা টাকার মূল্য পতন সেটা বুঝিয়ে দিচ্ছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment