Editorial

টাকা সেঞ্চুরির পথে

সম্পাদকীয় বিভাগ

টাকার মূল্য পতন অর্থাৎ মার্কিন ডলারের তুলনায় টাকার মূল্যহ্রাস নিয়ে নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার আগে যতটা সরব ও আক্রমণাত্মক ছিলেন ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর তিনি ততটাই নীরব হয়ে গেছেন। গত দশ বছর প্রধানমন্ত্রী হিসাবে টাকার বিনিময়মূল্য দ্রুত কমে গেলেও তাঁকে সেটা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে বা ব্যাখ্যা দিতে শোনা যায়নি। ঘটনাচক্রে মোদীর আগে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মনমোহন সিং। দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের শেষ দিকে মোদী যখন গুজরাটের নেতা থেকে জাতীয় নেতা হয়ে উঠছেন এবং আরও পরে দলের মধ্যে প্রধানমন্ত্রিত্বের দাবিদার হয়ে উঠছেন তখন থেকেই তিনি মনমোহন সিং সরকারের আগ্রাসী সমালোচক হয়ে ওঠেন। সেই সময় বি‍‌শেষ করে লোকসভা নির্বাচনের আগে তাঁর আক্রমণের প্রধান বিষয় ছিল দুর্নীতি এবং অর্থনীতির শ্লথতা। এইসব প্রসঙ্গ নিয়ে ইউপিএ সরকারের বিরোধিতা করতে গিয়ে তিনি শালীনতার গণ্ডি ছাড়িয়ে অত্যন্ত কদর্য ভাষায় সরাসরি আক্রমণ করেন মনমোহন সিংকে। কুরুচিকরভাবে তিনি মন্তব্য করেন ডলারের মূল্য টাকায় এত দ্রুত গতিতে বাড়ছে যে খুব শীঘ্রই তা প্রধানমন্ত্রীর বয়স অতিক্রম করে যাবে। মোদী যখন এমন নিম্নরুচির পরিচয় দিচ্ছেন তখন ডলারের মূল্য ৭০ টাকার কাছাকাছি আর মনমোহন সিংয়ের বয়স ৮০-র কাছাকাছি।
অতপর ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হন নরেন্দ্র মোদী। মোদী জমানার দশ বছরে মোদীর সমালোচনার ভাষ্য অনুযায়ী অর্থনীতির বৃদ্ধির গতি ইউপিএ জমানার থেকে অনেক বেশি হবার কথা। শিল্পে বিনিয়োগ বাড়ার কথা। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ার কথা। কর্মসংস্থান বাড়ার কথা। মানুষের আয় বৃদ্ধির কথা। জিনিসপত্রের দাম কমার কথা। এমনকি ডলারের তুলনায় টাকার মূল্য অনেক বেড়ে যাবার কথা। বাস্তবে তার কিছুই হয়নি। বরং প্রতিটি ক্ষেত্রেই মনমোহনের জমানা থেকে মোদী জমানা অনেক পিছিয়ে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়েনি। জিনিসপত্রের মূল্য দ্বিগুণ হারে বেড়েছে। কর্মসংস্থান বাড়েনি। বেকারি রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।
পদে পদে ব্যর্থতা যখন প্রকট হয়ে উঠছে তখন নিজের সাফল্য দেখাতে তথ্য-পরিসংখ্যান তৈরি পদ্ধতি, সমীক্ষার নিয়ম, গণনা ইত্যাদি সব কিছু বদলে দিয়ে সাফল্য দেখানোর চেষ্টা হয়। তার জেরে অনেক রিপোর্ট প্রকাশের আগেই বাতিল করে দেওয়া হয়। অনেক সমীক্ষার কাজ দীর্ঘদিন বন্ধ করে রাখা হয় যাতে সরকারি ব্যর্থতা ধরা না পড়ে। অনেক গণনায় ভিত্তি বর্ষ বদলে দেওয়া হয়। মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে অনেক পণ্যকে বাদ দেওয়া হয়। এইভাবে এক ধরনের কারচুপি করে দেখানোর চেষ্টা হয় মোদী জমানায় দে‍‌শের দারুণ অগ্রগতি হচ্ছে। কিন্তু টাকার মূল্য নিয়ে কারচুপি করার সুযোগ সরকারের হাতে সবটা নেই। তাই টাকার মূল্য পতনের রাশ মোদীরা টানতে পারছেন না। প্রতি ডলারের মূল্য মনমোহন জমানায় যত টাকা বেড়েছে মোদী জমানায় তার থেকে অনেক বেশি বেড়েছে। মনমোহনের প্রয়াণের পরদিন টাকার মূল্য পতন সর্বকালীন রেকর্ড সৃষ্টি করে প্রায় ৮৬ টাকা ছুঁয়ে ফেলেছে। মোদীর তৃতীয় দফায় ডলারের মূল্য সেঞ্চুরি করে ফেলবে নিশ্চয়ই।

Comments :0

Login to leave a comment