আমেরিকার ৪৭তম রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নেবার পর একদিন কাটতে না কাটতেই ডোনাল্ড ট্রাম্প যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সরাকারি সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছেন তার অন্যতম একটি হলো রাষ্ট্রসঙ্ঘের অধীনস্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) থেকে আমেরিকাকে সরিয়ে নেওয়া অর্থাৎ হু-র সঙ্গে আমেরিকার সব রকমের সম্পর্ক ছিন্ন করা। এমন প্রশাসনিক নির্দেশ জারি অবশ্য অপ্রত্যাশিত ছিল না। নির্বাচনী প্রচারের সময় ট্রাম্প একাধিকবার তাঁর এই অবস্থানের কথা জানিয়েছিলেন। তাছাড়া ২০১৬ সালে রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হবার পরও তিনি এই অবস্থানে দৃঢ় ছিলেন। সেবারও সরকারি নির্দেশনামা জারি করে ‘হু’-র সদস্যপদ থেকে আমেরিকাকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। যদিও এই সরকারি সিদ্ধান্তের কথা রাষ্ট্রসঙ্ঘের মহাসচিবকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয় ২০২০ সালে। পরে জো বাইডেন রাষ্ট্রপতি হয়ে যথারীতি ট্রাম্প জমানার সরকারি সিদ্ধান্ত বদল করে আমেরিকাকে আগের মতো ‘হু’-র সঙ্গে যুক্ত করে দেন।
দ্বিতীয় দফায় রাষ্ট্রপতি হয়ে ফের ট্রাম্প তার পুরানো সিদ্ধান্তে ফিরে আসার কারণ হিসাবে জানিয়েছেন কোভিড অতিমারীর সময় ‘হু’ বিপথে চালিত করেছে, সংস্থার জরুরি প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং স্বাধীনভাবে পরিচালিত হতে অক্ষম হয়ে পড়েছে। অর্থাৎ ট্রাম্প মনে করছেন কোভিড অতিমারী মোকাবিলায় ‘হু’ ভুলভাল কাজ করেছে। পরিচালনার ক্ষেত্রে আমেরিকার প্রভাব অপেক্ষা অন্যান্য দেশ দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে। ফলে ‘হু’ স্বাধীনভাবে পরিচালিত হচ্ছে না। স্পষ্ট করে বললে ‘হু’ পরিচালনায় আর্থিক দায়ের একটা বড় অংশ যেহেতু আমেরিকা বহন করে তাই ‘হু’-কে চলতে হবে আমেরিকার পরামর্শ মেনে। অর্থাৎ ‘হু’-র নিয়ন্ত্রণ থাকবে আমেরিকার হাতে। স্বাস্থ্য বিষয়ে বিজ্ঞান ও যুক্তির নিরিখে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানীদের এবং বিভিন্ন দেশের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ‘হু’ পরিচালিত হোক এটা আমেরিকার অতি দক্ষিণপন্থী শক্তির নেতা মানতে নারাজ। এক্ষেত্রে তিনি হু-র উপর স্বৈরাচারী কায়দায় মার্কিন নিয়ন্ত্রণ চায়।
এ বিষয়ে সন্দেহ নেই আমেরিকাই হু-র তহবিলের সবচেয়ে বড় দাতা। তার পরেই আছে চীন। অবশ্য বিল গেটস-র ফাউন্ডেশনও মোটা অঙ্কের অর্থ দেয়। তাছাড়া মার্কিন দক্ষ কর্মী ও বিশেষজ্ঞরা হু-র প্রকল্প তৈরি ও রূপায়ণে গুরুত্বপূর্ণ সাহায্য করে। এখন আমেরিকা সরে গেলে প্রকল্প তৈরি ও অর্থের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। তাই অবশিষ্ট দেশগুলিকেই সেই ঘাটতি ভাগ করে পূরণ করতে হবে।
আমেরিকার এই সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বিপদে পড়বে গরিব দেশগুলি। সেখানে বিভিন্ন রোগের প্রতিরোধ, টিকাকরণে, স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে এবং পুষ্টির ঘাটতি পূরণে একাধিক প্রকল্প চালু আছে হু-র উদ্যোগে। ভারতেও এমন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প চলছে হু-র সহায়তায়। সব দেশেই প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলার এবং রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থা গড়ে তোলায় মূল্য বান দিশা দখোয় ‘হু’। মানব সভ্যতাকে স্বাস্থ্য বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে আমেরিকা স্বার্থপরের মতো পালিয়ে গেলেও অপরাপর অগ্রণী দেশগুলিকে বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
Editorial
আন্তর্জাতিক দায় অস্বীকার করছেন
×
Comments :0