আমন ধান কাটার পর শুরু শীতকালীন চাষ। রবি মরশুমের এই সময়ে পশ্চিমবঙ্গে সারের চাহিদা সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছায়। ফলে গতবছরের চাহিদাকে সামনে রেখে চলতি বছরের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়। কৃষদের স্বার্থে তা মজুত করা হয়। বছরের পর বছর এভাবেই চলে আসছে। এটি কোনও নতুন তথ্য নয়। নতুন হল সারের আকালও এখন পশ্চিমবঙ্গে খবর।
জেলায় জেলায় সারের দাবিতে কৃষকদের বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী সার পাচ্ছেন না তারা। ফলে চাষ পিছিয়ে যাবে। ফলন মার খাবে। তারপর তারা ন্যায্য দাম পাবেন না। আরও ক্ষতির মুখে পড়বেন কৃষকরা।
কৃষি দপ্তর সূত্রেই জানা গেছে, এবার আলুচাষের মরশুমে ইফকো থেকে যে পরিমাণ সার আসার কথা ছিল, তা আসেনি। আদৌ আসবে কিনা তা নিয়েই সন্দিহান কৃষিকর্তারাও। এথেকেই বোঝা যায় কৃষকদের জন্য সরকার আদৌ আন্তরিক নয়। হলে সরকার আগে থেকেই তার দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকত। কৃষকরাও সঙ্কটে পড়তেন না। এখন গ্রামে গ্রামে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর শুধুমাত্র কেন্দ্রকে দোষ দিয়ে লাভ নেই।
দক্ষিণবঙ্গের আলুচাষের এলাকায় একেকটি ব্লকে সমবায়ে ৬০০ থেকে ৭০০টন সার প্রয়োজন হয়। সেই সারও পাওয়া যাবে কিনা সংশ্লিষ্ট আধিকারিকরা বলতে পারছেন না। অন্ধকারে কৃষকরা। রাজ্যে একটি সরকার চলছে! অভিযোগ যেটুকু সার মজুত ছিল, তা বেশিরভাগ স্থানে কালোবাজারিদের দখলে। প্রকৃত মূল্য থেকে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। কৃষকদের বাঁচাতে অসাধু ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। গ্রামে গ্রামে এখন আতঙ্ক শুরু হয়েছে। কোথায় যাবেন তারা? আলুবীজের কল বেরিয়ে গেছে। এখুনি বসাতে হবে। যখন কৃষকরা কাঁদছেন সেই সময় দাঁড়িয়ে পরিকল্পনা করছে রাজ্য। দূরদর্শিতার অভাব আরও একবার স্পষ্ট হলো।
কৃষকদের অভিযোগ, সমবায়ে সার থাকলেই তারা কিনতে পারতেন। বামফ্রন্ট সরকার থাকাকালীন যে সমবায় ছিল গ্রামোন্নয়নের অন্যতম হাতিয়ার। অল্প সুদে মরশুমি ঋণ নিয়ে চাষ করতেন কৃষকরা। সার, বীজ, কীটনাশক পেতেন ন্যায্য দামে। অভিযোগ পরিকল্পনা মাফিক সেই সমবায়গুলিকে ধ্বংস করা হয়েছে। লুট হয়েছে তার সম্পদ। মুখ থুবড়ে পড়েছে গৌরবের সমবায়। এখন প্রয়োজনে সারের সঙ্কট সামাল দিতে পারছে না রাজ্য। যখন ২.৩৬ লক্ষ মেট্রিক টন ডিএপি, ২.১৪লক্ষ মেট্রিক টন এমওপি এবং এনপিকে প্রয়োজন ৬.১৯ লক্ষ মেট্রিক টন। ১০ : ২৬ : ২৬সারের ৫০ কেজির এক বস্তার প্রিন্টেড দাম ১৭০০টাকা। এখন কিনতে হচ্ছে ২২০০টাকায়। বস্তাপ্রতি ৫০০ টাকা বেশি। কোথায় সরকার? কৃষকসভার অভিযোগ, রাজ্যে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে বর্ধিত দামে সার কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। সোজাসুজি দোকানে গেলে সার মিলছে না। বেশি দাম দিলেই পাওয়া যাচ্ছে।
সারের সঙ্কট এড়াতে পারল না তৃণমূল সরকার। অভিযোগ কেন্দ্র নাকি সার পাঠাচ্ছে না। কিন্তু রাজ্যে কীভাবে সারের জোগানকে নিশ্চিত করা যায় তা নিয়ে সরকার মুখে কুলুপ এঁটেছে। সিপিআই (এম), সারাভারত কৃষকসভা বরাবরই বলে আসছে কৃষক মারার নীতি নিয়ে চলছে মোদী ও মমতা সরকার। আবারো প্রমাণ হলো। কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সার বিক্রি করার সময়ও আধার কার্ড লিঙ্ক করে হাতের ছাপ দিয়ে কৃষককে সার বিক্রি করতে হবে। ভরতুকির টাকা তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। রান্নার গ্যাসের ভরতুকি কমানোর মতো সারেও ভরতুকি কমাতেই এই কৌশল বলছেন কৃষকরাই। ই-পজ মেশিনের মাধ্যমে ১০০শতাংশ সার ক্রয়-বিক্রয় বাধ্যতামূলক করলেও কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেনি রাজ্য। এখনো সব গ্রামে এই ব্যবস্থা কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। তাহলে বিকল্প কী হবে সরকারকেই বলতে হবে। তার আগে এখুনি সারের জোগান চাই। হাত গুটিয়ে থাকলে হবে না। ন্যায্য দামে সার সরবরাহ করতে হবে।
Editorial
ন্যায্য দামে সার দিতে হবে রাজ্য সরকারকে
×
Comments :0