Landslides in Darjeeling

দার্জিলিঙয়ে ধস, বিধ্বস্ত বাংলা-সিকিম লাইফ লাইন

রাজ্য

অনিন্দিতা দত্ত-  দার্জিলিঙ 
মুষলধারে বৃষ্টি, ধসে বিপর্যস্ত দার্জিলিঙ পার্বত্য এলাকা। দার্জিলিঙ, কালিম্পঙ, কার্শিয়াঙ সহ সর্বত্র নতুন করে বিপর্যয় নেমে এসেছে। ধস বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে বাংলা- সিকিম লাইফ লাইন ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। একাধিক জায়গায় ছোট বড় ধস, ভূমিধসে এবং রাস্তা জলে ডুবে যাওয়ার কারণে জাতীয় সড়কে যান চলাচল বন্ধ। ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক বন্ধ রাখা হয়েছে। অবিরাম বৃষ্টিতে পাহাড় কেটে রাস্তা সম্প্রসারণ ও বাংলা—সিকিম লাইফ লাইন সংষ্কারের কাজও প্রবল বৃষ্টিতে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। ১০নম্বর জাতীয় সড়কের কালিম্পঙের বিরিকদারা ও সেলফিদারার মাঝে নতুন করে ধস নেমেছে। রাস্তাটির বড় অংশ তিস্তার জলে ভেসে গেছে। 
এদিকে নর্থ সিকিম ও কালিম্পঙ পাহাড়ে এক নাগাড়ে বৃষ্টিতে তিস্তা নদী জলস্তর বৃদ্ধি পেয়ে ব্যাপকভাবে। তিস্তা নদী গর্ভে চলে গেছে মেল্লি বাজার যাবার রাস্তা। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে গোটা এলকায়। যে হারে বৃষ্টির পরিমান বাড়ছিলো পাহাড়ে। সেইজন্য আগে থেকেই পাহাড়ি রাস্তায় যানবাহন চলাচলে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছিলো প্রশাসনের পক্ষ থেকে। যদিও বিকল্প ঘুরপথে অত্যন্ত ধীর গতিতে যান চলাচল করছে। ঘুরপথে শিলিগুড়ির সাথে কালিম্পঙ ও সিকিমের সাথে যোগাযোগ ক্ষা করা হচ্ছে। কালিম্পঙ ও দার্জিলিঙের সংযোগকারী তিস্তাবাজার—পেশক—জোরবাংলো রাস্তাতেও জল দাঁড়িয়ে পড়েছে। তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে রয়েছে। প্রবল বস্তিতে তিস্তার জলচ্ছাসে ভেসে গেছে লালটঙ বস্তি। বালির বস্তা দিয়ে তিস্তার জল বস্তিতে যাতে না ঢোকে বস্তিবাসীদের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। নিরাশ্রয় হয়ে লালটঙ বস্তির প্রায় ৭৬টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে বৈকুন্ঠপুর জঙ্গলের উঁচু এলাকায়। বানভাসি মানুষদের প্রতি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। 
তিস্তার জল জাতীয় সড়কের ওপর দিয়ে বইছে। সেবক থেকে তিস্তাবাজার যাবার পথে জাতীয় সড়কের একাধিক জায়গায় তিস্তার জল উপছে পড়েছে। আবহাওয়া অনুকূল না হলে, বৃষ্টি না কমলে যে কোন সময় নতুন করে ধস নামার আশঙ্কা থাকছেই। দূর্ভোগ বাড়ছে। ইতোমধ্যেই কালিম্পঙ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সপ্তাহখানেক সময় লাগবে ১০নম্বর জাতীয় সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হতে। কিন্তু বৃষ্টি থামছেই না। তুমুল বৃষ্টিতে ধসে জেরবার হয়ে পড়েছে জাতীয় সড়ক। সেই কারনে ঠিক কবে নাগাদ জাতীয় সড়ক খুলবে তা স্পষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি আরো কঠিন হচ্ছে। 


শুক্রবার প্রবল বর্ষনের জেরে দার্জিলিঙ শহর লাগোয়া লেবং কার্ট রোডে বড় আকারের ধস নামে। যেকারণে লেবংকার্ট রোডটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ধসের মুখে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুটি গাড়ি। যদিও গাড়িগুলিতে যাত্রী ছিলো না। ফলে হতাহতের কোন খবর নেই। দার্জিলিঙের সাথে লোবং’র যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। অনেক পরে প্রশাসন ও পূর্ত দপ্তরের যৌথ প্রচেষ্টায় ধস সরিয়ে দেওয়া হলে লেবংকার্ট রোড যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। ১৯মাইলের শ্বেতীঝোরা থেকে চিত্রে এলাকা ধসের কারণে বন্ধ রয়েছে। রবিঝোরা থেকে তিস্তাবাজার এলাকায় ধস সরিয়ে রাস্তা মেরামতির কাজ চলার কারণে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে শিলিগুড়ি থেকে পানবু হয়ে কালিম্পঙ যাবার রাস্তা ও রঙপো থেকে লাভা হয়ে মানসঙ যাবার রাস্তাটিও খোলা রয়েছে। ধসের জন্য এন এইচ ৭১৭ আপাতত বন্ধ রয়েছে। 
ধস নেমে বড় গাছ চাপা পড়ে বৃহস্পতিবার সিঙ্কোনা বাগানের এক শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। জানা গেছে, মৃত শ্রমিকের নাম প্রকাশ থাপা। চালিশধুরার বাসিন্দা। মঙপু সিঙ্কোনা প্ল্যান্টেশনে কাজ করতেন। খবর পেয়ে মঙপু থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মৃতদেহটি উদ্ধার করে দার্জিলিঙ জেলা হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। 
উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা সহ দার্জিলিঙ পার্বত্য এলাকায় বেশ কিছু দিন ধরেই লাগাতার বৃষ্টি চলছেই। দার্জিলিঙ পাহাড় লাগোয়া সমতলের শিলিগুড়িতেও ধারাবাহিক বৃষ্টি চলছেই। শুক্রবার সারাদিন বিক্ষিপ্তভাবে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হয়েছে শহর ও গ্রামাঞ্চলে। মহানন্দা সহ বিভিন্ন নদীগুলিতে জলস্ফীতি ঘটেছে। যে কারণে স্বাভাবিক জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। যদিও আগামী ৪৮ঘন্টা উত্তরবঙ্গের পাঁচ জেলার পাশাপাশি দার্জিলিঙের উঁচু পার্বত্য এলাকাগুলিতে ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণের পূর্বাভাষ দেওয়া হয়েছে।

Comments :0

Login to leave a comment