ডাঃ ফুয়াদ হালিম
দিনটা ছিল ২৭ এপ্রিল, ১৯৪০। মুসলিম লিগের পাকিস্তানের দাবিতে ভারত ভাগের বিরুদ্ধে দিল্লিতে শুরু হলো অল ইন্ডিয়া আজাদ মুসলিম কনফারেন্সের ডাকে সর্ববৃহৎ জমায়েত ও সভা। ২৭ এপ্রিল থেকে টানা ৩ দিন ধরে ৫ লক্ষ মানুষের সমাগমে সরগরম ছিল দিল্লি, রীতিমতো এক জনসমুদ্র হয়ে ওঠে। সর্বভারতীয় ১৪টি সংগঠন এতে অংশ নেয়। প্রতিবাদ আন্দোলনের ঢেউ এমনই তীব্র হয়ে ওঠে যে শেষ পর্যন্ত আরও একটা দিন বাড়াতে হয় বিক্ষোভ সমাবেশের। ভারতবর্ষের মধ্যে দ্বি-জাতি তত্ত্বের বিরোধিতা এখানে করা হয়েছিল।
মূলত ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ মুসলিম লিগের লাহোর অধিবেশনে পাকিস্তান প্রস্তাব গৃহীত হয়। এ কে ফজলুল হক প্রস্তাবটি পেশ করেন। এই ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই ভারতবর্ষের দেশপ্রেমিক মুসলমানেরা অল ইন্ডিয়া আজাদ মুসলিম কনফারেন্সে যোগ দেন। প্রসঙ্গত ১৯২৯ সালে মুসলিম লিগের বিরুদ্ধে তৈরি হয় এই সংগঠনটি অর্থাৎ অল ইন্ডিয়া আজাদ মুসলিম কনফারেন্স। যে ১৪টি সংগঠন নিয়ে এটি তৈরি হয়, তা হলো, সিন্ধ ইত্তেহাদ পার্টি, জমিয়তে উলেমা-ই-হিন্দ, মজলিস-ই-আহরার-উল-ইসলাম, সর্বভারতীয় মোমিন সম্মেলন, অল ইন্ডিয়া শিয়া পলিটিক্যাল কনফারেন্স, খুদাই খিদমতগার, কৃষক প্রজা পার্টি, আঞ্জুমান-ই-ওয়াতান বেলুচিস্তান, নিখিল ভারত মুসলিম মজলিস, জমিয়তে আহলে হাদিস, আসাম ভ্যালি পার্টি, ইউনয়িস্ট পার্টি, অল ইন্ডিয়া সুন্নি জমিয়তে উল উলেমা, মুসলিম ইন্ডিপেন্ডেন্ট পার্টি।
ভারতের অভ্যন্তরে দ্বি-জাতি তত্ত্বের বিরোধিতা করেছিল অল ইন্ডিয়া আজাদ মুসলিম কনফারেন্স। তার কিছু ঐতিহাসিক কারণ ও প্রেক্ষাপট রয়েছে। ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের সময়কালে এর ধারাবাহিকতা শুরু। ভারতের মানুষ, ভারতের তখন ইংরেজ রাজত্বের মারাত্মক কুফল অনুধাবন করতে শুরু করেছেন। অত্যাচারিত হচ্ছেন ইংরেজদের হাতে। এবং একইসঙ্গে ইংরেজ শাসনহীন একটি রাজনৈতিক ভূখণ্ডের ধ্যান ধারণাও তখন তৈরি হতে শুরু করেছে। সেই উপলব্ধি থেকেই বাহাদুর শাহ জাফর-কে ভারতের শাহেনশা ঘোষণা করা হয়েছিল। ঠিক হয়েছিল বাকিরা তাঁদের নিজস্ব ক্ষেত্রে বিরাজ করে লড়াইটা এগিয়ে নিয়ে যাবেন। ঠিক হয়েছিল ব্রিটিশরা চলে যাওয়ার পর একটাই দেশ থাকবে যে যেখানে ছিলেন তাঁদের নিজস্বতা বজায় থাকবে।
ফলে এর পরের ইতিহাস সেইভাবেই প্রতিফলিত হয়েছিল। অযোধ্যাতে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করার দায়িত্বে ছিল হনুমানগাডি মন্দিরের পুরোহিত রামচন্দ্র দাস এবং সেখানকার একটি মসজিদের ইমাম আলি’র ওপরে। ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের সময়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে সংগঠিত করার দায়িত্ব ছিল তাঁদের ওপরে। সেই যুদ্ধ তাঁরা চালিয়ে গেছেন। এরপর একসময়ে ইংরেজরা তাঁদের পরাস্ত করে বন্দি করে এবং তাঁদের মৃত্যুদণ্ড দেয়। ফয়জাবাদ জেলে টিলার ওপর একটি তেঁতুল গাছের ডাল থেকে দু’জনকে একসঙ্গে ফাঁসি দেওয়া হয়।
ওদিকে দিল্লির পশ্চিমের রাজারাও ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছিলেন। জানা গেছে গণিতে পারদর্শী দুই বন্ধুকে তাঁরা দায়িত্ব দিয়েছিলেন এই ব্যাপারে। তাঁদের একজনের নাম হুকুমচাঁদ জৈন, অপরজন মুনির বেগ। মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছিলেন তাঁরা, ফার্সি ভাষার ওপর ভালো দখল ছিল। এঁরা ইংরেজদের ১৮৫৭ থেকে ১৮৫৯- প্রায় ৩ বছর ধরে ঠেকিয়ে রেখেছিলেন। এরপর ইংরেজরা পরাজিত করে তাঁদের বন্দি করেন। ইংরেজ শাসনে চূড়ান্ত নৃশংসতার নজির তৈরি হলো যখন এই দু’জনকে ফাঁসিকাঠে ঝুলিয়ে মেরে ফেলার পর হুকুম চাঁদ জৈনের মৃতদেহ কবর দিল এবং মুনির বেগের মৃতদেহকে শ্মশানে পাঠিয়ে দিল দাহ করার জন্য। ইংরেজদের উদ্দেশ্য ছিল দেশপ্রেমী ভারতবাসীর হৃদয় যাতে খণ্ডবিখণ্ড হয়, যাতে আর বিদ্রোহের চেষ্টা না করা হয়।
দিল্লির জামা মসজিদের কর্তৃপক্ষকে ইংরেজ শাসকরা ১৮৯৭ সালে ধর্ম নিরপেক্ষ ঐক্যের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করানোর জন্য মরিয়া প্রচেষ্টা চালিয়েছিল। কিন্তু মসজিদ কর্তৃপক্ষ তা গ্রহণ করেননি। ইংরেজরা দিল্লিতে ফিরে আসার পর দিল্লির জামা মসজিদকে বেদখল করে প্রায় ১২ বছর কোনও নামাজ সেখানে পড়তে দেয়নি। উদাহরণ আরও আছে। গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোডের দু’দিকে সারি দিয়ে বহু দেশপ্রেমী হিন্দু মুসলমান শিখদের ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। এবং ইংরেজ সরকারের নির্দেশ ছিল যে ওই শরীরগুলি পচে গলে দুর্গন্ধ ছড়ানো পর্যন্ত নামানো যাবে না। অর্থাৎ ওই রাস্তায় পথ চলতি মানুষ ওই ঝুলন্ত দেহ এবং সে দেহ থেকে দুর্গন্ধ আসা অনুভব করে কোনোদিন ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে না— এটা নিশ্চিত করতে চেয়েছিল ইংরেজরা।
যখন ওই দেহগুলো একেবারে পচন শেষ হয়ে গলে গিয়ে দুর্গন্ধ ছড়ানোও বন্ধ করে দিল তখন অনুমতি দেওয়া হয়েছিল দেহগুলি নামিয়ে শেষকৃত্য সম্পন্ন করার। গ্রামের মানুষ তাঁদের প্রিয়জনকে নামিয়ে যাঁরা হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছিলেন, তাঁদের শ্মশানে শেষকৃত্য করেছেন। আর মৃতদের মধ্যে যাঁরা মুসলমান ছিলেন তাঁদেরকে শ্রদ্ধা জানিয়ে রাস্তার ধারে ওই জমিতে গাছের নিচে বা নিজেদের গ্রামে মাজার তৈরি করেন। ওই মাজারগুলি ওই এলাকার হিন্দু মুসলমান সব সম্প্রদায়ের মানুষের সংগ্রামের নিদর্শন হিসাবে গড়ে উঠেছে। হিন্দুরাও সেখানে গিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অবদানের কথা স্মরণ করেন।
এই নৃশংস ধারাবাহিকতাকে বজায় রেখে জালিনওয়ালাবাগের ঘটনা ঘটেছিল। তারও আগে ঘটেছিল আরও এক ঘটনা। তখন নানা আন্দোলন শুরু হয়েছে এবং তা ছড়িয়ে পড়ছে ধীরে ধীরে। সেই সময়কালে ১৯১৯ সালের ২৯ মার্চ দিল্লিতে এক প্রতিবাদ কর্মসূচি হয়েছিল ইংরেজদের বিভিন্ন অন্যায়ের প্রতিবাদে। সেখানে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের ওপরে জোর দেওয়া হয়। এর ফলে সাধারণ মানুষের ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে ব্রিটিশরা, এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ধাওয়া করে নিয়ে যায়। এরপর ৫০ জনের ওপর সাধারণ মানুষকে গুলি করে মারে, বহু হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ নিহত হন। এই ঘটনার পর ৪ এপ্রিল একটি শোকসভা হয় শহীদদের স্মরণে। দিল্লির জামা মসজিদে আর্য সমাজের গোটা বিশ্বের প্রধান স্বামী শ্রদ্ধানন্দকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল জুম্মার নামাজের পর খুদবা দেওয়ার জন্য। এরপর স্বামী শ্রদ্ধানন্দ তাঁর বক্তব্যে আরও বেশি করে হিন্দু-মুসলমান ঐক্যের ওপরে জোর দেন। এতে ইংরেজরা আরও ক্ষিপ্ত হয়, ভয়ও পায়। এবং ১৩ এপ্রিল জালিয়ানওয়ালাবাগ সমাবেশের ওপর হামলা চালায়।
অন্যদিকে খিলাফৎ আন্দোলন, যা এক সময়ে সংগঠিত হয়েছিল পুরোপুরি মুসলমানদের ধর্মীয় বিষয়ে হলেও, এই আন্দোলন হিন্দু মুসলমানের ঐক্যকে জোরদার করেছিল। খিলাফৎ ব্যবস্থাকে ইংরেজরা ভেঙে ফেলতে উদ্যত হয়েছিল। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ব্রিটিশ-ইন্ডিয়া- যেখানে মুসলমানেরা বেশি সংখ্যায় বাস করতেন- তাঁদের সংগঠন খিলাফৎ কমিটি চিত্তরঞ্জন দাস, মহাত্মা গান্ধী ও নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোসকে সভাপতির আসন গ্রহণ করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। শুধু তাই নয়, অন্যান্য বহু প্রতিষ্ঠিত ভিন্ন ধর্মের মানুষকে এই সংগঠনের অংশীদার করা হয়েছিল। এই ধারা বজায় রেখে যখন হিন্দুত্ববাদী শক্তি ও মুসলিম লিগ দ্বি-জাতি তত্ত্ব নিয়ে কার্যকরি ভূমিকা পালন করতে শুরু করে তখন দেশপ্রেমিক মুসলমানরা এই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে শুধুমাত্র দ্বি-জাতি তত্ত্বের বিরোধিতা করেননি, তাঁরা সংগঠিতভাবে মুসলিম লিগের দেশভাগের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধেও সোচ্চার হয়েছিলেন।
যেসব মুসলমান যাঁরা ঐক্যবদ্ধ ও ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের জন্য লড়াই করতে জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন, তাঁদেরকে কোণঠাসা করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ইংরেজরা। এই প্রসঙ্গে আল্লাহ বকস-এর নাম উল্লেখযোগ্য। তিনি ছিলেন সিন্ধুর একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ। ব্রিটিশ সরকারের দমন নীতির প্রতিবাদ করেছিলেন, দ্বি-জাতি তত্ত্বের বিরোধিতা করেছিলেন। ফলে তিনি ইংরেজদের রোষে পড়েছিলেন প্রবলভাবে। পড়ে আততায়ীর হাতে নিহত হন তিনি, যার পেছনে মুসলিম লিগের হাত ছিল বলে বক্তব্য অনেক ইতিহাসবিদদের। আল্লাহ বকসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহাসিক অবদান ছিল মুসলিম লিগ কর্তৃক প্রচারিত দ্বি-জাতি তত্ত্ব এবং পাকিস্তানের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে ভারতীয় মুসলমানদের সংগঠিত করা। মুসলিম লিগের বিভাজনমূলক রাজনীতিকে চ্যালেঞ্জ ও বিরোধিতা করার জন্য ভারতের আন্দোলনরত মুসলিমদের একটি ছাতার তলায় এনেছিলেন। আজাদ মুসলিম সম্মেলন (স্বাধীন মুসলিম সম্মেলন) ছিল তার মস্তিষ্কপ্রসূত।
যাই হোক ১৯৪০ সালের ২৭-২৯ এপ্রিল দিল্লিতে অল ইন্ডিয়া আজাদ মুসলিম কনফারেন্সের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। মানুষের বিপুল অংশগ্রহণ এবং কাজের চাপের কারণে সম্মেলন একদিন বাড়ানো হয়। সম্মেলনে যুক্ত প্রদেশ, বিহার, মধ্য প্রদেশ, পাঞ্জাব, সিন্ধু, উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ, মাদ্রাজ, ওডিশা, বাংলা, মালাবার, বেলুচিস্তান, দিল্লি, আসাম, রাজস্থান, কাশ্মীর, হায়দরাবাদ এবং স্থানীয় অঞ্চলগুলি থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। ফলে আন্দোলন প্রায় সমগ্র ভারত জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।
সে সময়ে বোম্বে ক্রনিকল, হিন্দুস্থান টাইমস, দ্য ট্রিবিউন— এই ইংরেজি দৈনিকগুলিতে এর নানা বিবরণ প্রকাশিত হয়। সেই বিবরণ অনুযায়ী, উজ্জ্বল পোশাক পরে মুসলিম স্বেচ্ছাসেবকরা বাসে চেপে শহরজুড়ে বড় বড় প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন— এমন দৃশ্য চারদিকে। তাঁরা রব তুলেছেন ‘স্বাধীনতা আমাদের জন্মগত অধিকার’, মুখে দেশাত্মবোধক গান। এক অসাধারণ সাফল্য সবার চোখে মুখে। দ্বিজাতি তত্ত্বের বিরুদ্ধে ভারতের মুসলিমদের লড়াই বিপুল আকার ধারণ করে। এক বিশাল মিছিলের শেষে আল্লাহ বকস সংবাদমাধ্যমকে বলেন, " এই মিছিল বলে দিচ্ছে যে ভারতের মুসলমানদের প্রধান অংশ হিন্দু ভাইদের মতো দাসত্বের বন্ধন ভাঙতে সমানভাবে আগ্রহী।" আল্লাহ বকস সাধারণ মুসলমানদের এই উপলক্ষে আরও বেশি করে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
অপর একটি ইংরেজি দৈনিক লেখে- বিশাল মিছিলটি দুই ডজনেরও বেশি গেট পেরিয়ে চলেছিল। তুর্কমান গেট, চাওরি বাজার, হাউজ কাজী, লাল কুঁয়া এবং চাঁদনি চকের মুসলিম দোকানদাররা তাদের দোকানগুলিকে বান্টিং এবং ছবি দিয়ে সাজিয়েছিলেন এবং বিভিন্ন স্থানে জাতীয় পতাকাও দেখা গিয়েছিল। উঠে এসেছিল খিলাফৎ আন্দোলনের স্মৃতি। মিছিলকারীরা ইনকিলাব জিন্দাবাদ, হিন্দুস্তান আজাদ ধ্বনির সঙ্গে পাকিস্তান মুর্দাবাদ— রব তুলেছিলেন। এরপর জামা মসজিদের বাইরে পার্কে একটি বিশাল জনসভায় পরিণত হয় সেই মিছিল। সম্মেলনে যোগদানের জন্য মুসলিম মহিলাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছিল এবং তাঁদের বিপুল সংখ্যক উপস্থিতি আশা করা হয়েছিল। প্রায় ৫ হাজার মুসলিম মহিলার জন্য বিশেষ বসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। উপস্থিত মুসলিম নেতৃবৃন্দের কথায়, মুসলমানদের এই বিপুল সংখ্যক সমাগম প্রমাণ করেছে তারা হিন্দু ভাইদের থেকে কোনোভাবেই পিছিয়ে নেই এবং ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য সমানভাবে তাঁরা আগ্রহী। হিন্দুস্তান টাইমস লেখে, এই সম্মেলনে মুসলিম সম্প্রদায়ের অবস্থান ও মর্যাদা এবং ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাদের ভূমিকা সম্পর্কে সুদূরপ্রসারী গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়ে আলোচনা হয়।
সম্মেলনে ভারতের মুসলিম নেতৃবৃন্দ ও সমাজকর্মীরা নানা উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, আজকের ভারতীয় সভ্যতা মুসলিম ও হিন্দুদের যৌথ প্রচেষ্টায় সৃষ্ট এবং এর চেতনার ঐক্যকে ব্যাহত করার যে কোনও প্রচেষ্টা হাজার বছরের ইতিহাসের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার শামিল। সভাপতির ভাষণে আল্লাহ বকস বলেছিলেন, আমাদের দেশে আমাদের যে ধর্মবিশ্বাসই হোক না কেন, আমাদের একসাথে বসবাস করা উচিত, এবং তা হওয়া উচিত নিখুঁত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে। মওলানা আবুল কালাম আজাদ তাঁর বার্তায় সাম্প্রদায়িক ঐক্যের ডাক দিয়ে ভারতের সাংবিধানিক অগ্রগতির পথে যে কলঙ্ক দণ্ডায়মান, তা দূর করার জন্য মুসলমানদের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, মুসলিম লিগ দ্বারা সমর্থিত সাম্প্রদায়িকতা এবং সঙ্কীর্ণমনা গোঁড়ামি কোনোভাবেই ছাড় পাওয়ার যোগ্য নয়।
এমএন রায় ইন্ডিপেন্ডেট ইন্ডিয়া সম্পাদনাকালে লিখেছেন, ভারতে জাতির বিভাজনের জন্য যে দেশবিরোধী পরিকল্পনা রচিত হয়েছিল, তার বিরুদ্ধে দেওয়া মুসলিম মতামতকে আমরা স্বাগত জানাই..., বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে এটাই মনে হচ্ছে যে সম্প্রতি দিল্লিতে অনুষ্ঠিত অল ইন্ডিয়া আজাদ মুসলিম কনফারেন্স একটি অত্যন্ত সফল সম্মেলন ছিল। আসফ আলী বলেছিলেন, সম্মেলনের সিদ্ধান্তগুলি সমগ্র সম্প্রদায়ের ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠস্বরকে প্রতিফলিত করবে, এটি হবে কোটি কোটি মুসলমানের সিদ্ধান্ত।
বিশিষ্ট উর্দু কবি শামীম কারহানি তাঁর লেখা উর্দু কবিতা ‘পাকিস্তান চাহানেওয়ালোঁ সে’ (যাঁরা পাকিস্তান চান তাঁদের কাছে)-তে লিখেছেন:-
হামকো বাতলাও তৌ কেয়া মতলব হ্যায় পাকিস্তান কা, জিস জাগা ইস ওয়াক্ত মুসলিম হ্যায়, নাজিস হ্যায় কেয়া হু-জা।
(আমাকে বলুন, পাকিস্তানের অর্থ কী? এই যে ভূমি, যেখানে আমরা মুসলমানরা আছি, একটি অপবিত্র ভূমি?)
নেশ-ই-তোহমত সে তেরে, চিশতি কা সিনা চাক হ্যায় / জলদ্ বল্লা কেয়া জমিন আজমির কি না-পাক হ্যায়।
(তোমার গালি ক্ষতবিক্ষত করেছে সুফি সাধক চিশতীর বক্ষ/ তাড়াতাড়ি বলো, এ কি অপবিত্র আজমীর ?)...
টুকরে টুকরে হো কয়া মুসলিম খাস্তে-দিল হো জায়গা/ নাখল-ই-জামিয়াত সারাসার মুজমহিল হো জায়গা (মুসলিমদের বিভাজনে হতাশ হবে মুসলিম জাতি,/ তাঁরা বিপর্যস্ত হবেন এবং গোটা সম্প্রদায়টাই নুয়ে পড়বে)।
Comments :0