জনবিচ্ছিন্ন তৃণমূল জেলায় জেলায় অস্ত্র কারখানা তৈরি করেছে। মানসিক চাপে পুলিশ মন্ত্রী কোমায়। দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয়ে জেলের ভাত খাচ্ছে তৃণমূলের একাধিক মন্ত্রী। আগামী দিনে তাঁদের শরিক হবেন আরও বেশ কিছু তৃণমূল নেতা। রবিবার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ক্ষিরপাইয়ের জনসভায় এমন ভাষায় তৃণমূলকে তীব্র আক্রমণ শানালেন যুবনেত্রী তথা সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সদস্য মীনাক্ষি মুখার্জি।
এদিন ক্ষীরপাইয়ের হালদার দিঘীতে জনসভার ডাক দেয় সিপিআই(এম)। তৃণমূলের সন্ত্রাসে বিদ্ধস্ত চন্দ্রকোণা-১ ব্লকের ৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মানুষ এদিন কার্যত স্রোতের মতো এসে মিশেছিলেন হালদার দিঘীর ময়দানে। গ্রামীণ এলাকার পাশাপাশি ক্ষীরপাই এবং রামজীবনপুর পৌরসভা অঞ্চলের সাধারণ মানুষও হাজির হন জনসভায়। এই সভা থেকে লুঠেরাদের হঠিয়ে মানুষের পঞ্চায়েত গড়ার ডাক উঠে আসে।
দীর্ঘদিন পরে এই এলাকায় কয়েক হাজার মানুষের সভা করলেন বামপন্থীরা। সভা ঘিরে ক্ষীরপাই এবং রামজীবনপুর সংলগ্ন এলাকাগুলিতে সাধারণ মানুষের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। একইসঙ্গে সভা বানচাল করার লক্ষে তৃণমূলের তৎপরতাও ছিল নজিরবিহীন। ভোর রাত থেকেই গ্রামে গ্রামে তৃণমূলী দুষ্কৃতিদের জমায়েত লক্ষ করা যায়। কিন্তু সেই সমস্ত হুমকি উপেক্ষা করেই ৯-১০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে হালদার দিঘীর জনসভায় এসেছেন চন্দ্রকোণা-১ ব্লকের মানুষ। শীতের মরসুমে সন্ধ্যা নামার পরেও বাম নেতৃবৃন্দের বক্তব্য শুনতে দেখা গিয়েছে গ্রামীণ জনতাকে। হালদার দিঘী সংলগ্ন বাড়ির ছাদগুলি এবং গাছের ডালে ডালে তিল ধারণের জায়গা ছিলনা।
এদিনের সমাবেশের মূল বক্ত ছিলেন মীনাক্ষি মুখার্জি। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে তৃণমূলের অবস্থা বিষহীন সাপের মত। চরম জিঘাংসায় ছোবল মারতে চেয়েও পারছে না। তার কারণ তাঁদের কোমর ভেঙে গিয়েছে। রাজ্যের তৃণমূল সরকারের বড় বড় মাথারা দুর্নীতির দায়ে জেলে। নিয়ম করে কয়েদীদের জন্য বরাদ্দ খাবার খেতে হচ্ছে তাঁদের। অপরদিকে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় গ্রামে গ্রামে চেনা কায়দায় ত্রাসের রাজত্বও চালাতে পারছে না তৃণমূল। গ্রামের মানুষকে চোখ রাঙানোর চেষ্টা করলেই গণরোষ তৈরির পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। পরিস্থিতি সামলাতে গ্রামে গ্রামে বোমা-বন্দুকের কারখানা গড়তে শুরু করেছে তৃণমূলের ভোট মেশিনারির মতব্বররা। তাঁরা ভাবছে, বোমা কিংবা গুলি ছুঁড়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভের বিষ্ফোরণ ঠেকানো যাবে। তাই চপ শিল্পের বদলে জেলায় জেলায় বোমা শিল্পের দেখা মিলছে।
মীনাক্ষি মুখার্জি অভিযোগ করেন, বর্তমানে রাজ্য পুলিশ দুষ্কৃতিদের ব্যক্তিগত দেহরক্ষীতে পরিণত হয়েছে। খুনী এবং ডাকাতদের সুরক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি হকের দাবিতে আন্দোলন করা প্রতিবাদীদের উপর আক্রমণ নামিয়ে আনছে পুলিশ। সবটা হচ্ছে পুলিশমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির নির্দেশে। প্রতিবাদী চাকরিপ্রার্থীর হাতে কামড় বসিয়ে দলদাসত্বের নজির সৃষ্টি করেছে এরাজ্যের পুলিশ প্রশাসন।
এছাড়াও এদিনের সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম) পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য অশোক সাঁতরা এবং জেলা কমিটির সদস্য বিদ্যুত রায় এবং এরিয়া কমিটির সম্পাদক বিপ্লব রায়।
চন্দ্রকোণা-১ ব্লকের ৬টি গ্রাম পঞ্চায়েতেই দীর্ঘদিন ধরে দখলদারি চালিয়ে আসছে তৃণমূল। বহু জায়গায় দীর্ঘ ১১ বছর কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারেননি বামপন্থীরা। সিপিআই(এম)’র হয়ে সক্রিয় ভাবে রাজনীতি করার ‘অপরাধে’ প্রহ্লাদ রায় এবং আজেদ আলিকে পিটিয়ে খুন করেছিল তৃণমূল কর্মীরা। গোটা নভেম্বর জুড়ে সন্ত্রাসের সেই আঁতুরঘরগুলিতে গ্রাম জাগাও জাঠা সংগঠিত হয়েছে। ভয়ের আগল ভেঙে লালঝান্ডার স্রোতের সাক্ষী থেকেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ আলপথ। সেই প্রতিস্পর্ধার রেশ বজায় রেখেই রবিবারের জনসভায় অংশগ্রহণ করেছে চন্দ্রকোণা। রবিবার সকালেও গোপালপুর এলাকায় পিকেট তৈরি করে সমাবেশে আসতে চাওয়া মানুষকে রুখতে চেয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু গণ প্রতিরোধে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয় তৃণমূলী বাহিনীর সদস্যরা।
Comments :0