প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এখন শয়নে স্বপনে একমাত্র চিন্তা বিরোধীদের মঞ্চ ইন্ডিয়াকে কীভাবে কতটা আক্রমণ করে আগামী লোকসভা নির্বাচনে নিজের গদি রক্ষা করতে পারেন।
গদি তথা ক্ষমতার মোহ তাঁকে এতটাই গ্রাস করে ফেলেছে যে দেশের সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে গরিব নিম্নবিত্তের মানুষের কথা তাঁর মাথা থেকে উবে গেছে। দেশের আমজনতা কি খাচ্ছেন, কি পরছেন, কি কাজ করছেন, কত রোজগার করছেন সেসব নিয়ে তাঁর বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই, বলা ভালো মাথা ঘামানোর সময়ই নেই।
কেউ কি স্মরণ করতে পারবেন ক্ষমতায় আসার পর সাধারণ মানুষের নিত্য ব্যবহারের জিনিসের ধারাবাহিক মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কোনোদিন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন? যদি করে থাকেন শেষ কবে করেছেন? প্রধানত দু’টি বিষয় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ-ভাবনার আওতার বাইরে থাকে। একটি হলো মানুষের রুজি রোজগারের সঙ্কট। অন্যটি জীবনধারণের ক্রমাগত ব্যয় বৃদ্ধি।
মোদী জমানার প্রধানতম বৈশিষ্ট্য হলো জীবনধারণের ন্যূনতম প্রয়োজনীয় উপাদানগুলির অস্বাভাবিক হারে মূল্যবৃদ্ধি আর বিপরীতে মানুষের আয়ের সুযোগের সঙ্কোচন। মোদ্দা কথা মানুষের আয় বাড়ছে না অথচ ব্যয় ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।
আয়-ব্যয়ের এই ক্রমবর্ধমান ঘাটতি সামাল দিতে না পেরে মানুষের জীবন যাত্রার মানের অবনতি ঘটছে। পারিবারিক ও সাংসারিক জীবনে অনটন বাড়ছে। বাড়ছে দুঃসহ যন্ত্রণা, নিরাপত্তাহীনতা ও বিপন্নতা।
পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় বিকাশ অর্থনীতির একটি স্বাভাকি প্রবণতা মূল্যবৃদ্ধি। অবশ্য এই প্রবণতার সঙ্গে সঙ্গত করে মানুষের রুজি রোজগার বৃদ্ধির প্রবণতা।
মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে তাল রেখে যদি মানুষের আয় বাড়ে তাহলে পারিবারিক সঞ্চয় না বাড়লেও এবং জীবনযাত্রার মানের উন্নতি না হলেও অন্তত অবনতি হয় না। কিন্তু মোদী জমানা ধ্রুপদী পুঁজিবাদী বিকাশকে বিপথে চালিত করে ক্রোনি ক্যাপিটালিজমের দিকে ঠেলে দিয়েছে যাতে বিকাশের যাবতীয় সুফল মুষ্টিমেয় কিছু পছন্দের পুঁজিপতির ভোগে লাগতে পারে।
যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় মূল্যবৃদ্ধি ঘটে সেই ব্যবস্থাপনাতেই শ্রমজীবীদের আয় বৃদ্ধির সংস্থান থাকে যাতে মূল্যবৃদ্ধিকে অতিক্রম করা যায়। কিন্তু মোদী সরকারের অর্থনীতি মূল্যবৃদ্ধি পণ্য-পরিষেবার মৃল্য বাড়িয়ে শিল্পপতি-ব্যবসায়ীদের মুনাফা বৃদ্ধির সুযোগ দেয় কিন্তু সেইসব পণ্য যারা উৎপাদন করে বা যারা পরিষেবা দেয় সেই শ্রমজীবীদের মজুরি বাড়িয়ে বাড়তি মুনাফার ভাগ দেয় না।
তাই এই জমানায় অতীতের যে কোনও জমানার তুলনায় কর্পোরেট মুনাফা তথা মালিকের সম্পদ সর্বাধিক হারে বাড়ছে। বিপরীতে শ্রমজীবী সাধারণ মানুষের আয় থমকে আছে। এর অনিবার্য পরিণতি সম্পদ ও আয় বৈষম্য। মোদী জমানায় আয় ও সম্পদ বৈষম্য বিশ্বের যে কোনও দেশের থেকে সর্বাধিক হারে বেড়েছে ভারতে। অতীতে কখনও এত উচ্চ হারে বৈষম্য বাড়েনি।
সরকার যে ধারাবাহিক মূল্যবৃদ্ধিকে স্বাগত জানায় তার অন্যতম প্রমাণ মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে কোনও কার্যকরী পদক্ষেপ নেয় না। তাৎক্ষণিকভাবে কিছু পদক্ষেপ নিলেও তার প্রভাব অচিরেই উবে যায়। মূল্যবৃদ্ধি দেশের সব নাগরিকদের উপর বর্তালেও তার আঘাত হয় ভিন্ন ভিন্ন। যাদের আয় যত কম তাদের উপর আঘাত তত বেশি।
তেমনি খাদ্যদ্রব্যের এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্য জিনিসের দাম বৃদ্ধির আঘাত সর্বাধিক আসে গরিব ও নিম্নবিত্তদের উপর। কারণ এই অংশের মানুষের আয়ের সবটাই প্রায় ব্যয় করতে হয় খাদ্যের ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের পেছনে।
সচ্ছল পরিবারের আয় বেশি থাকার মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কা তারা সহজেই সামালে নিতে পারে। এক্ষেত্রে সরকারের প্রধানতম কর্তব্য হলো খাদ্যদ্রব্য ও সাধারণের নিত্যব্যবহার্য পণ্য ও পরিষেবার মূল্য স্থিতিশীল রাখা।
এটা কোনও কঠিন কাজ নয়। সরকার চাইলে এটা অনায়াসেই করতে পারে। কিন্তু মোদীরা সেটা কোনও অবস্থাতেই করবে না কারণ তাতে আদানি-আম্বানির মুনাফা একটু কমে যাবে।
Comments :0