বিজেপি’র জনসভায় মোদীর ব্যাখ্যা, দেশের ঐতিহ্য, পরম্পরা বলতে ‘সনাতন ধর্ম’-কে বোঝায়। তিনি বলেছেন, ‘‘বিরোধীরা দেশের ঐতিহ্য, পরম্পরার বিরোধী। তাঁরা দেশের সাধারণ মানুষের ক্ষতি চান।’’
বিজেপি বিরোধী দলগুলির সমন্বয় মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’ গড়ে ওঠার পর্ব থেকে টানা আক্রমণে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে মোদীকে। বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ’র বৈঠক প্রায় উঠে গিয়েছিল। ‘ইন্ডিয়া’-র চাপে শরিকদের ডাকতে হয়েছে মোদীকে। বিরোধী মঞ্চকে আক্রমণ করতে নেমে মোদী এমনও বলেছেন যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দেশকে পরাধীন করেছিল। ফলে ‘ইন্ডিয়া’ শব্দ মানেই দেশের পক্ষে হিতকর নয়। এমনকি সংবিধান থেকে দেশের নাম ‘ইন্ডিয়া’ হটাতে তৎপরতাও শুরু হয়েছে সরকারি স্তরে। জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে ‘ইন্ডিয়া’ বাদ দিয়ে কেবল ‘ভারত’ ব্যবহার হয়েছে।
বৃহস্পতিবারের আক্রমণ মোদীর ‘ইন্ডিয়া’ বিরোধী ধারাবাহিকে নতুন সংযোজন। এবার সরাসরি ধর্মের পরিচয়কে হাতিয়ার করেছেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের প্রচারক। ‘সনাতন ধর্ম’ বিতর্ক শুরু হয়েছে তামিলনাডুর সরকারে আসীন ডিএমকে নেতা উদয়নিধি স্ট্যালিনের বক্তব্য থেকে। এর আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদের বৈঠকে মোদী ‘সনাতন ধর্ম’ ঘিরে ‘আক্রমণের যোগ্য জবাব’ দেওয়ার ডাক দেন। পালটা ব্যাখ্যা দেন ডিএমকে নেতা এবং তামিলনাডুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন।
স্ট্যালিন বলেন, ‘‘সনাতন ধর্মের নামে অমানবিক প্রথা চাপানো হয়েছে যুগের পর যুগ। দলিত, আদিবাসী মহিলাদের খাটো করে দেখা হয়েছে। যাঁরা জাত বিভাজনের প্রচারক তারাই ধর্মীয় উপাসনাস্থলে মহিলাদের ঢুকতে বাধা দেয়।’’ তিনি বলেন, ‘‘উদয়নিধি’র মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। তিনি কারও ওপর হামলা চালাতে বলেননি। বাস্তব হলো একদিকে চন্দ্রযান হচ্ছে, আরেকদিকে জাতের নামে বিভাজন চলছে। তারই অবসান চাওয়া হয়েছে।’’
এদিন সাগরে ফের ’ইন্ডিয়া’-কে অহঙ্কারি বা ‘ঘমন্ডিয়া’ বলেছেন মোদী। ‘‘ওদের জোটের নাম ইন্ডিয়া নয়। ওটা ঘমন্ডিয়া জোট। ওরা সনাতন ধর্ম এবং সংস্কৃতিকে ধ্বংস করতে বিদ্ধপরিকর।’’
ধর্মনিরপেক্ষ দেশের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘বিরোধীরা ভারতীয় জীবনধারা এবং পরম্পরার ঘোর বিরোধী। সনাতন ভাবধারা বহু ভারতীয়কে অনুপ্রাণিত করে। সেটাকেই ধ্বংস করার চক্রান্ত চলছে। সরাসরি সনাতন ধর্মকে শেষ করার কথা বলা হচ্ছে। এটা বেশিদিন চলতে দেওয়া যায় না। এর প্রতিরোধ হওয়া প্রয়োজন। আজ এরা সনাতন ধর্মকে নিশানা করছে। কাল এরা আমাদের আক্রমণ করবে। সমস্ত সনাতনী এবং যাঁরা দেশকে ভালোবাসেন, তাঁদের সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। এই ধরণের মানুষকে আমাদের রুখতে হবে।’’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আরএসএস’র চিরপরিচিত ছকে ‘হিন্দুধর্ম আক্রান্ত’ ভাবাবেগ তৈরিতে সচেষ্ট হয়েছেন মোদী। মধ্য প্রদেশেরই ভোপালে প্রথম জনসভা করবে ‘ইন্ডিয়া’। অক্টোবরের গোড়ায় হবে সেই সভা। বছরের শেষে বিধানসভার ভোট হিন্দি বলয়ের এই রাজ্যে। কংগ্রেস যদিও এই বিতর্ক থেকে দূরে রয়েছে। দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খারগে বলেছেন যে কংগ্রেস সব ধর্মকেই সম্মান করে।
Comments :0