Darjeeling Tourists

মিরিকেই আটকে তিনশোর বেশি, বাসে ফেরানো হচ্ছে পর্যটকদের

জেলা

তিস্তা বাজার এলাকায় ধসে আটকে পড়া গাড়ি সরানোর চেষ্টা যাত্রীদের। ছবি: রাজু ভট্টাচার্য

অনিন্দিতা দত্ত: শিলিগুড়ি

ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে সমগ্র পাহাড় বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। প্রভাব পড়েছে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি পাহাড় লাগোয়া সমতলের শিলিগুড়িতে। 
শিলিগুড়ি সহ সংলগ্ন এলাকাতেও শনিবার রাত থেকেই অবিরাম বৃষ্টি পড়ছে। পাশাপাশি রাতভর বৃষ্টির জেরে রবিবার পাহাড় সহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সোমবারও শহরে সকাল থেকেই দফায় দফায় বৃষ্টি হয়েছে। 
এদিন শহরে শিলিগুড়িতে পর্যটকের আনাগোনা ছিল। চলতি উৎসবের মরশুমে সিকিম সহ দার্জিলিঙ পাহাড়ের হোটেল ও হোমস্টেগুলির সবই প্রায় বুকিং শেষ হয়ে গিয়েছিল। তবে উত্তরের প্রাকৃতিক বিপর্যয় পর্যটকদের মনে অনেকটাই আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। তিস্তা নদীর গ্রাসে চলে গেছে বাংলা—সিকিম লাইফ লাইন ১০নম্বর জাতীয় সড়ক। জাতীয় সড়কের জায়গায় জায়গায় একাধিক ধস নেমেছে। পরিস্থিতি ঠিক কবে নাগাদ স্বাভাবিক হবে তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। 
রবিবার রাতেই পাহাড়ের পর্যটকদের কলকাতায় ফিরিয়ে নিয়ে যাবার জন্য রাত্রিকালীন বাস পরিষেবা চালু করা হয়েছে এনবিএসটিসি’র তরফে। জানা গেছে, রাতে ১০টি বাসে প্রায় ছয় শতাধিক পর্যটককে কলকাতার দিকে ফেরানো হয়েছে। এছাড়াও শিলিগুড়িতে আটকে থাকা প্রায় ৭০ পর্যটকদের জন্য শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট হোটেলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। 
প্রবল বৃষ্টিতে মহানন্দা নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত শিলিগুড়ি সংলগ্ন পোড়াঝাড় এলাকার প্রায় সহস্রাধিক গ্রামবাসীরা ত্রাণ শিবিরে রয়েছেন। ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর থেকেই পাহাড়ের বহু এলাকা বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছে। ফলে পরিস্থিতি আরো জটিল হচ্ছে। 
পরিস্থিতির জেরে বড় ক্ষতির আশঙ্কায় পর্যটন ব্যবসায়ীরা। বহু বুকিং বাতিল হচ্ছে। ট্যুর অপারেটররাও চিন্তিত। এই মরশুমে নাথুলাতে তুষারপাত হয়েছে। উৎসবের ছুটিতে পাহাড়ে বেড়াতে এসে পর্যটকরা বিপদের সম্মুখীন হয়েছেন। কিন্তু যেভাবে পাহাড় ধস বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে এবং পাহাড়ি রাস্তার অবস্থা বিপজ্জনক হয়েছে তাতে আতঙ্কে পর্যটকরা। 
অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি বছরের আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে এমনিতেই বুকিং কমই ছিলো। উৎসবের সময়ে পাহাড়ে পর্যটকদের ঢল নামার আশা ছিল। কিন্তু প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে সব হিসেবই বদলে গেছে। সূত্রের খবর শুধুমাত্র মিরিকেই তিন শতাধিক পর্যটক আটকে রয়েছেন। জোরবাংলোতে ১৩০জন, তাবাকোশিতে ৭০জন, গুরদুংয়ে ৪০জন, বিজনবাড়িতে ৩৮জন, সিটং—এ ২০জন, রিম্বিকে ২৮জন পর্যটক আটক পড়েছেন। এছাড়াও সুখিয়াপোখরিতে কিছু সংখ্যক পর্যটক আটকে পড়েছেন বলে খবর মিলেছে। 
হিমালয়ান হসপিটালিটি ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সম্পাদক সম্রাট সান্যাল জানান, গত দুই মাস ধরে দফায় দফায় ধসের কারণে ক্ষতির মধ্যে দিয়েই চলেছি আমরা। মাত্র ৪০ শতাংশ বুকিং হয়েছিল। শারদোৎসবের সময় থেকেই বুকিং হতে শুরু করেছিলো। কিন্তু এতো বড় বিপর্যয় ফের আরো বড়সড় ক্ষতির মুখে ঠেলে দিয়েছে। উত্তরের পর্যটনে বড় রকমের প্রভাব পড়বে এই বিপর্যয়ে। একদিনেই প্রায় ৪০ কোটির ক্ষতি হয়েছে। আগামীতে ক্ষতি আরো বাড়বে। 
অ্যাসোসিয়েশন ফর কনজারভেশন অ্যান্ড ট্যুরিজমের আহ্বায়ক রাজ বসু বলেন, এই বড় ধাক্কা সামলানো খুবই মুশকিল। এই বিপর্যয়ের পরে পর্যটকরা আর পাহাড়মুখো হতে চাইছেন না। 
ইস্টার্ন হিমালয়া ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে দেবাশিস মৈত্রও একই সঙ্কটের কথা জানিয়েছেন। 
এদিকে ধস বৃষ্টি বিপর্যয়ের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা হয়েছে পাহাড়ে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকদের। শনিবার রাতের পর রবিবার পার করে সোমবার ভয়াবহ অভিজ্ঞতা নিয়েই পাহাড় থেকে নামছেন পর্যটকরা। পেটে খিদে আর তৃষ্ণায় গলা শুকিয়ে কাঠ হয়েছে। ফেরার পথে চোখের সামনে দেখেছেন ধ্বংস চিহ্ন। আতঙ্কিত হয়েছেন। 
কলকাতার কোন্নগরের বাসিন্দা সুদীপ বসু, হাওড়ার বাসিন্দা সুকান্ত দাস, বারুইপুরের পিঙ্কি চক্রবর্তী সহ অনেকেই জানালেন তাঁদের অভিজ্ঞতা। বললেন, সিকিম থেকে নামার সময় গাড়ির লম্বা লাইনে আটকে থাকতে হয়েছে। চোখে দেখলাম রাস্তায় বড় বড় ধস পড়ে রয়েছে। তিস্তার ভয়ঙ্কর রূপ দেখলাম। চোখের সামনে দৃশ্যগুলো ভাসছে। অনেকে আবার পাঙ্খাবাড়ির রাস্তা দিয়ে নেমে এসেছেন। মৃত্যুর খবরে খুব ভয় পেয়েছি। এখন শান্তিতে বাড়ি ফিরব। এনবিএসটিসি’র বাস ছাড়াও বেসরকারি বাসে চেপেও বহু পর্যটক ফিরে গেছেন নিজেদের গন্তব্যস্থলের দিকে। এনবিএসটিসি’র ম্যানেজিং ডিরেক্টর দীপঙ্কর পিপলাই জানান, বিভিন্ন ডিপো থেকে বাস এনে কলকাতার উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত বাস চালানো হচ্ছে। পাহাড় থেকে পর্যটকদের ঘুরপথে শিলিগুড়ি পৌঁছাতে প্রায় রাত হয়ে যাচ্ছে। সেই কারনে রাতের বাসের চাহিদাই বেশি।

Comments :0

Login to leave a comment