ANAYAKATHA / SOURAV DUTTA / DHANAYA LAXMI / MUKTADHARA / 6 OCTOBER 2025 / 3rd YEAR

অন্যকথা / সৌরভ দত্ত / বর্তমান সময় প্রেক্ষিত ও সর্বনাশগ্রস্থ বাঙালির ধান্য লক্ষী আঁধারে / মুক্তধারা / ৬ অক্টোবর ২০২৫, বর্ষ ৩

সাহিত্যের পাতা

ANAYAKATHA  SOURAV DUTTA  DHANAYA LAXMI  MUKTADHARA  6 OCTOBER 2025  3rd YEAR

অন্যকথা

মুক্তধারা

বর্তমান সময় প্রেক্ষিত ও সর্বনাশগ্রস্থ বাঙালির ধান্য লক্ষী আঁধারে

সৌরভ দত্ত


ধান্য লক্ষীর আরাধনা বাঙালির ঘরগেরস্থে । সুখ-সমৃদ্ধি ঐশ্বর্যের দেবী।শরতের মেঘ বৃষ্টির ওড়াউড়ি।এর ফাঁক-ফোকর দিয়ে এসে পড়ছে জ্যোৎস্না। টালমাটাল সেই অপরূপ জ্যোৎস্না হেঁটে যাচ্ছে পথঘাট দিয়ে।ছাতিম গাছে ছোট্ট ডালে বসে লক্ষ্মীপেঁচা।হুঁ হুঁ শব্দে বিভোর।নিছক জীবনানন্দীয় চিত্রাভাস।‘ বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী’ কথাটা আজ অনেকটাই ক্লিশে‌ আমাদের জীবন যাপন ঘিরে। বাঙালির আজ সত্যিই সাড়ে সর্বনাশ হয়ে গেছে।জলে ডুবে আছে ধানখেত। সেখানেই চাপ চাপ রক্তের দাগ। আমাদের চারপাশে এইসব হাহাকারের ছবি।ক্রোনি ক্যাপিটালিজম এর দাপটে ধনী আর ও ধনী আর গরিব আরো গরীব হচ্ছে ক্রমশ। শ্রমিকদের উপযুক্ত কাজ নেই।এ রাজ্য থেকে তারা ভিন রাজ্যে পাড়ি জমাচ্ছে । নিয়মিত রোজগার নেই মধ্যবিত্তের।লুটের রাজত্বে সবার পকেট ফাঁকা। উঠোনে আঁকাবাঁকা আলপনা।লক্ষ্মীর শীর্ণকায় পায়ের ছাপ।ফেলে আসা সময়কে দেখতে ইচ্ছে করে। সবজির বাজারে যেন আগুন লেগেছে। দু-বেলা পেট ভরে খেয়ে পরে বেঁচেবর্তে থাকার সব স্বপ্ন শেষ।একেই বলে ধনপ্রাণে মরে যাওয়া।কোজাগরীতে পদ্মের বাজার নেই।যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দিঘি থেকে পদ্ম তুলে আনে । তাদের ঘরেও হাহাকার।এর মাঝেও ডি.জে বা পাওয়ার মিউজিক চালিত ক্যুৎসিত কার্নিভাল আছে,ডাণ্ডিয়া নাচের মহোৎসব আছে। শুধু শিল্প নেই। অবশিল্পায়ন মাথা চাড়া দিচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ব কলকারখানা, জুটমিল বন্ধ। শ্রমিক ছাঁটাই চলছে।কাজের উপযুক্ত মজুরি নেই।কোজাগরী পূর্ণিমায় বাঙালি উৎসবে মাতবে কি করে!ফলের দাম আকাশছোঁয়া।তিস্তার জলে ভেঙে পড়ছে উন্নয়নের সেতু। বন্যা-মহামারীর সংকট চারিদিকে। মৃত্যুমিছিল।এর মাঝে কি করে ধনলক্ষ্মীর আরাধনা করবে রাজ্যের শ্রমজীবী সাধারণ মানুষ।এক সময় লক্ষ্মীর বোকাভাঁড়ে টাকা জমানোর রীতি ছিল।এখন‌ সেসব পাট চুকেছে।নামে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার।লক্ষ্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই।কুমোরের মৃৎ শিল্পের চাহিদা নেই একেবারে। পক্ষান্তরে বাজার দখল করেছে পরিবেশ দূষণকারী বিদেশি পণ্যদ্রব্য। দেশীয় শিল্পের সমূহ সর্বনাশ বাঙালির স্মৃতি- সত্তা-ভবিষ্যতে আঘাত। লোকায়ত সংস্কৃতির প্রতীক শস্যদানা পেষাইয়ের যন্ত্র ঢেঁকি লুপ্ত হয়েছে অধুনা বাঙলার লোকাঙ্গন থেকে।তার বদলে জ্যামাটো,সুইগি,মিশো, ফ্লিপকার্ট এর রমরমা। নাইন্টি নাইন, নাইন্টি এইট, কলকাতা বাজারের বাহুল্য।এখন দুয়ারে রেশন এসেছে।নিম্নমানের চাল,আটা ঘুরপথে বিক্রি বাটা করছে চোরাকারবারিরা। গুদামে গুদামে রেশন‌ দুর্ণীতির চাষ হচ্ছে।আগের মতো হরেক রকম ধান্য শস্যের চাষ অচিরেই বন্ধ হয়েছে।সেসময় কৃষিভিত্তিক সমাজে‌ ধানই ছিল মূল উপজীব্য। বর্তমানের চাষের জমির চরিত্র বদল করে ইমারত, শপিংমল তৈরি হয়েছে।লক্ষ্মীছাড়াদের দৌলতে বাংলার প্রকৃতি, পরিবেশ,বন্যপ্রাণ বিপন্ন। লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা কিংবা জোনাকির সংখ্যা কমেছে।তার বদলে গাছে গাছে এলইডি আলোর রমরমা। মাটির প্রদীপের সলতে নিভতে বসেছে।লন্ঠনের আলো ,টেমির আলোর ব্যবহার একেবারেই নেই।একটা বদলে যাওয়া বকচ্ছপ মার্কা জীবনযাত্রা। সভ্যতা, সংস্কৃতি, শিল্পের সমূহ সংকটকাল। বৃহৎ পুঁজির দাপটে বাঙালির সুখ-সমৃদ্ধি হারিয়ে যাচ্ছে। আগামীদিনে কর্মক্ষেত্রেও মানুষের প্রয়োজন ফুরিয়ে যাবে এআই এর দৌলতে।বলতে গেলে কোজাগরী উৎসব হয়ে দাঁড়াচ্ছে সর্বনাশ।ভুরি ভুরি মিথ্যা প্রতিশ্রুতি। চাকরি বিক্রির দালাল চক্র দশচক্রে ভূত।চাকরি হারাদের কান্নায় ক্রমশ ভারী হচ্ছে শরতের হিমেল আকাশ। বেঁকে গিয়েছে শিক্ষিত, বুদ্ধিজীবী সমাজের শিরদাঁড়া।লোনের দায়ে ,দেনার দায়ে সর্বশান্ত বাঙালিকূল। বেকারদের মৃত্যুযন্ত্রণা। বিজয়োল্লাসের মাঝে তামান্নার দগ্ধ দেহ। অনেকগুলো ছেঁড়াফাটা ছবি। রাজ্যের লক্ষ্মীরা ভালো আছে তো?প্রশ্ন করুন নিজেকে। উত্তর পাবেন।তবু ও শরতের শুক্র পক্ষে এই কোজাগরী পূর্ণিমা আসে।পুরনো জিনিসের রেওয়াজ বা প্রথা কমেছে।ফলন কম হওয়ায় নারকেলের প্রচুর দাম।নারকেল নাড়ু,তিলের নাড়ুর চল প্রায় নেই বললেই চলে। সাংসারিক কল্যাণে লক্ষ্মীর পাঁচালি পাঠের জায়গায় রমণীরা ব্লগিং বা ব্যক্তিগত প্রমোশনে ব্যস্ত।চাঁদ সওদাগর,ধনপতি সওদাগরদের নৌকা বা ডিঙিযাত্রার স্বপ্নময় আখ্যান আজ কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে।শিশুরাও সে সব মনোমুগ্ধকর কাহিনি থেকে মুখ ফিরিয়েছে। তার বদলে মোবাইল গেম,ছোটাভিম,ডোরেমনদের হিড়িক। তবু শ্রী লক্ষ্মীর আরাধনায় একচিলতে আনন্দের আশায় বুক বাঁধবে আপামর বঙ্গসমাজ।আর এক টুকরো রুটির জন্য পরিযায়ী শ্রমিকরা হেঁটে যাবে আদিগন্ত পথ।সামান্য মজুরির হাড়ভাঙা পরিশ্রমে ডুবে থাকবে বিদেশ-বিভুঁইয়ে। তবুও, লক্ষ্মী আসবে শিউলি ঝরে পড়বে তার পায়ের উপর।

Comments :0

Login to leave a comment