Post Editorial

লিঙ্গ বৈষম্য ও পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত

উত্তর সম্পাদকীয়​

অশোক ভট্টাচার্য


সারা বিশ্বে আলোচনা বা চর্চার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখন লিঙ্গ বৈষম্য দূর করা ও মহিলাদের ক্ষমতায়ন। নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক অমর্ত্য সেনই প্রথম জিডিপিকে অগ্রগতির একমাত্র মাপকাঠি হিসাবে মান্যতা না দিয়ে, বিশেষ গুরুত্ব দেন শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য, ও নারী-পুরুষ সমানাধিকারের মতো বিষয়গুলিকে। অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের সক্ষমতার ধারণার ওপর ভিত্তি করে রাষ্ট্র পুঞ্জের বার্ষিক মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন প্রকাশ হতে শুরু করে। তিনি গণতন্ত্রকে কেবলমাত্র নির্বাচনের মধ্যে আবদ্ধ না রেখে চেয়েছেন আলোচনা ভিত্তিক গণতন্ত্র, যেখানে থাকবে নাগরিকদের যুক্তি নির্ভর মত বিনিময়ের সুযোগ, থাকবে সামাজিক ও জন পরিসরের সুবিধা। তিনি দেখিয়েছেন মেয়েদের কেবলমাত্র গ্রহীতা বা ও নির্দেশ পালন করলেই চলবে না, তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত করতে হবে। ভালো মন্দের ক্ষেত্রে মেয়েদের একটি নিজস্ব বক্তব্য থাকতেই পারে। এর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাশীল হতে হবে ।
অমর্ত্য সেন দেখিয়েছেন শিক্ষা ও নিজস্ব রোজগার মেয়েদের সক্ষমতাবাড়ায় । এতে পরিবারের ভেতরে ও বাইরে তাদের অবদানের স্বীকৃতি বৃদ্ধি পায় এবং তাদের কণ্ঠস্বরের জোর বাড়ে। অধ্যাপক অমর্ত্য সেন তার ‘তর্ক প্রিয় ভারত' গ্রন্থে নারী পুরুষের লিঙ্গ বৈষম্যের নানা রূপের কথা লিখেছেন । তিনি লিখেছেন বস্তুত এটি বহুবিধ সমস্যার একটি মিশ্র রূপ। কখনো কখনো বিভিন্ন বৈষম্যগুলিকে পরস্পরের থেকে অ-সংশ্লিষ্ট আকারে দেখা যায় ৷ তিনি আরও লিখেছেন নানান সামাজিক কারণ নারী উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করে বা তাদের বিভিন্ন ধরনের বঞ্চনার শিকার হতে বাধ্য করে। তিনি যে নানা রূপের বৈষম্যের কথা বলেছেন তার মধ্যে রয়েছে-১) প্রাণে বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে বৈষম্য। ২) জন্মদান সংক্রান্ত বৈষম্য। ৩) অসম সুযোগ সুবিধা। ৪) মালিকানা স্বত্বের বৈষম্য। ৫) পরিবারের সুযোগ সুবিধার ও ঘরের কাজকর্মের অসম বণ্টন। ৬) পরিবারের মধ্যে হিংসা ও শারীরিক অত্যাচার।
তার লেখা থেকে জানা যায় ১৯৮৬ সালে ভারতে নিখোঁজ নারীর সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৭০ লক্ষ। এর বিরাট অংশ বাবা-মায়ের সম্মতিতে কন্যা ভ্রুণ হত্যা বা পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে পরিবারের মেয়েদের হত্যা। ভারতে গত কুড়ি বছরের ৪৭ লক্ষ মায়ের মৃত্যু হয়েছে সন্তান প্রসব কালে। ২০২৩ সালে দেখা গিয়েছে ভারতে পুরুষদের মধ্যে সাক্ষরতার হারছিল ৮৫ শতাংশ। একই সময়ে মহিলাদের মধ্যে এই হার ছিল ৭০ শতাংশ। রাষ্ট্রপুঞ্জের এক তথ্য থেকে ভারতে লিঙ্গ সাম্যের নির্ণয়নে এখনো পর্যন্ত পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে মাত্র ৩৭ শতাংশ। ভারতের সংসদে নির্বাচিত মহিলা সাংসদদের সংখ্যা ১৫ শতাংশের নিচে।|
নারীদের উপার্জন থেকে শুধু নারীরাই লাভবান হয় না, এর মধ্যে দিয়ে সৃষ্টি হয় সামাজিক সুফল । অথচ স্বামী বা পরিবারের পুরুষ সদস্যদের অনুমতি ছাড়া নারীরা বাইরে কাজ করতে পারে না। এমনকি পরিবারের বহু সিদ্ধান্ত স্ত্রীর সাথে কোনও পরামর্শ না করে স্বামী এককভাবে নিয়ে থাকে। অথচ পরিবারে এমন অনেক সমস্যা থাকে যা স্বামী স্ত্রী আলোচনার মাধ্যমে নিরসন হতে পারে। যাকে অমর্ত্য সেন বলেছেন সহযোগিতামূলক বা কো- অপারেটিভদ্বন্দ বা কনফ্লিক্ট। যে দ্বন্দ্ব সহজভাবে নিরসিত হতে পারে। এ প্রসঙ্গে নরেন্দ্রনাথ মিত্রের এক পো দুধ গল্পের উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে।
এ প্রসঙ্গেই আসতে চাইছি আমাদের দেশের সংবিধানের ৭৩ তম সংশোধনীর বিষয়ে। ১৯৯২ সালে এই ঐতিহাসিক সংশোধন হয়। সংবিধানে যুক্ত করা হয় একটি নতুন তফসিলি, একাদশ তফসিল । ভারতের ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে সৃষ্টি হয় সংবিধান স্বীকৃত স্থানীয় সরকার বা গ্রামের সরকার, যেখানে আমাদের দেশের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ বসবাস করে। এই সংশোধনীতে পাঁচ বছর পর পর ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত গঠন যেমন আইনগতভাবেবাধ্যতামূলক করা হয়েছে, তেমনিভাবে বাধ্যতামূলক করা হয় তিনটি স্তরে মহিলাদের জন্য এক তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষণ। যার মধ্যে আছে তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা। আছে এদের মধ্যেও মহিলাদের জন্য এক তৃতীয়াংশ আসনের সংরক্ষণের ব্যবস্থা। আছে উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রস্তুতিতে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত সদস্যের মতামত প্রদানের ব্যবস্থাও। আছে গ্রাম পঞ্চায়েত ও গ্রাম স্তর পর্যন্ত গ্রাম সভা ও গ্রাম সংসদ গঠন করার ব্যবস্থাও। তিনটি স্তরের, প্রধান, সভাপতি ও সভাধিপতি পর্যন্ত মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থাও রয়েছে। এ কথা অবশ্যই স্বীকার যোগ্য ৭৩তম সংবিধান সংশোধন ও মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণ, মহিলাদের ক্ষমতায়িত করতে এবং লিঙ্গ বৈষম্য সঙ্কুচিত করতে সামান্য হলেও সহায়ক হয়েছে। পঞ্চায়েত পরিচালনা ও গ্রামের উন্নয়নমূলক কাজে মহিলারা আজ অনেক বেশি দৃশ্যমান হচ্ছে। পুরুষ নারীদের মধ্যে অনেকেই স্বীকার করবেন লিঙ্গ বৈষম্য বা লিঙ্গভিত্তিক ধারণা মহিলাদের সুযোগ সীমিত করে ।
বিগত রাজ্য সরকারের সময় থেকে পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েতে মহিলাদের আসন সংরক্ষণ এক-তৃতীয়াংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। সাম্প্রতিককালে কেন্দ্রীয় সরকার দেশের প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতকে নারী বান্ধব ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিকল্পনা প্রস্তুত করাকে বাধ্যতামূলক করেছে। পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকারের সময় ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। যখন সংবিধানের ৭৩ তম সংশোধন হয়নি। একই সময়ে পশ্চিমবঙ্গে ভূমি সংস্কারের মাধ্যমে কৃষক, বর্গাদার, খেতমজুরদের আয় বা উপার্জন বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল। এতে গ্রামের পুরুষ মহিলা উভয়েই উপকৃত হয়েছিল এবং তাদের মধ্যে অধিকারবোধ জেগে উঠেছিল। গরিব মহিলা, কৃষক, পঞ্চায়েত সদস্য, সকলেই পেতো সম্মান ও মর্যাদা। কারুর বিরুদ্ধে ছিল না কোনও দুর্নীতির অভিযোগ। গ্রামে কৃষক ও মহিলাদের ছিল শক্তিশালী গণসংগঠন। পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা নিয়ে ২০২৪ সালে কলকাতার স্টিগমাফাউন্ডেশন নামে একটি গবেষণা ভিত্তিক সংস্থা একটি সমীক্ষার কাজ হাতে নেয়। তারা পাঁচটি জেলার ৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতে ৪৫ জন সদস্যের মধ্যে, যাদের মধ্যে ছিল ২৩ জন মহিলা, ২২ জন পুরুষ গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য। এদের মধ্যে ৬ জন মুসলমান, বাকিরা হিন্দু। পুরুষ পঞ্চায়েত সদস্যের বয়স ৪০ বছরের বেশি। মহিলা সদস্যরা অপেক্ষাকৃত কম। সকলে মিলে বয়সের গড় ৩৬.৬ বছর। ৫ জন পঞ্চায়েত প্রধান মহিলা এবং ৪ জন পুরুষ। পুরুষ পঞ্চায়েত সদস্যরা কেউ ব্যবসায়ী, বড় কৃষক বা সরকারি কাজের সাথে জড়িত হতে পারে ঠিকাদারও। ১৭ জন মহিলা পঞ্চায়েত সদস্য গৃহিণী। তারা কেউ কোনও লাভজনক সংস্থার আয়ের সাথে যুক্ত নয়।
তাদের কাছে প্রশ্নের উত্তরে অনেক কিছু জানা যায়। যেমন পুরুষরা দীর্ঘকাল ধরে কোনও রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত। তুলনায় মহিলারা অনেক কম সময় ধরে রাজনীতিতে যুক্ত আছে। একজন মাত্র মহিলা সদস্য বলেছেন তিনি স্বেচ্ছায় রাজনীতিতে এসেছেন, বাকিরা স্বামী বা পরিবারের পুরুষ সদস্যের নির্দেশে রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছেন। পুরুষ ও মহিলা সকল পঞ্চায়েত সদস্যরা জানিয়েছেন, পরিবারের সমস্ত গৃহস্থালি কাজ মহিলারাই করেন। তবে মহিলাদের এই কাজ সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে অবমূল্যায়ন করা হয়, বা হালকা ভাবে নেওয়া হয়। সকলেই মনে করেন পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে মজুরি বৈষম্য আছে ৷
৪৫ জন পঞ্চায়েত সদস্যের মধ্যে ১৩ জন মনে করেন গ্রামে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা রয়েছে, যা খুবই উদ্বেগের। যদিও মহিলা পঞ্চায়েত সদস্যরা জোরালোভাবে জানিয়েছেন, পারিবারিক সহিংসতা, মানসিক নির্যাতন, যৌন নির্যাতন, লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য, গ্রামের বিভিন্ন পরিবারের মধ্যে রয়েছে। ৪৫ জন সদস্যই বলেছেন গ্রামে বিভিন্ন পরিবারে মদ্যপানের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে পারিবারিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে, যা খুবই ক্ষতিকারক।
মহিলা পঞ্চায়েত সদস্যদের কাছে ৫টি শীর্ষ দাবি হলো শিক্ষার অধিকার, চলাফেরার স্বাধীনতা, আর্থিক স্বাধীনতা, নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা, প্রতিবাদ করার অধিকার একজন মহিলা পঞ্চায়েত সদস্য বলেছেন আমরা পুরুষদের মতো সমস্ত অধিকার পেতে চাই। এইভাবে আমরা পুরুষদের মতো কাজ করতে চাই। এক মহিলা পঞ্চায়েত সদস্য জানিয়েছেন তিনি গ্রাম পঞ্চায়েতের সভায় পারিবারিক সহিংসতার বিষয়ে উত্থাপন করতে পারেননি, কারণ বেশিরভাগ আলোচনা, তহবিল ও অর্থ বরাদ্দ নিয়ে হয়। অনেক সভায় মহিলা সদস্যরা মাতৃত্বকালীন সমস্যা, সেলফহেল্প গ্রুপ, স্যানিটেশন, নিয়ে আলোচনা করতে চাইলেও অ্যা জেন্ডাতে তা অন্তর্ভুক্ত করতে দেওয়া হয়নি। গবেষণাটিতে দেখা গেছে যখন নারীরা স্বাস্থ্যসেবা ও আয় সম্পর্কিত সিদ্ধান্তে অংশগ্রহণ করে, তখন তারা আরও বেশি প্রজনন স্বাস্থ্যের সুফল পান। অর্থনৈতিক নিরাপত্তার সুকার্যকারিতা অনুভব করেন। গ্রামের স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে স্ত্রীরা স্বামীর উপর নির্ভরশীল, বিবাহের ক্ষেত্রে মেয়েরা থাকে সামাজিক ও পারিবারিক রীতি-নীতির দ্বারা প্রভাবিত। গবেষণায় দেখা গেছে নারীদের ক্ষমতায়ন বা লিঙ্গ সাম্য অগ্রগতির জন্য শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠানিক সংরক্ষণ, আইনগত বাধ্যবাধকতা যথেষ্ট নয়। গভীর আদর্শগত পরিবর্তন ছাড়া তা সম্ভব নয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় মহিলারা নির্ভরশীল থাকে পার্টি বা পঞ্চয়েতে পুরুষ আধিক্যে গঠিত কোনও কমিটির নির্দেশ বা সিদ্ধান্তের উপর । সংরক্ষিত আসন যখন অসংরক্ষিত হয়ে সাধারণ হয়, তখন পূর্বের বিজয়ী মহিলা প্রার্থীকে পুনরায় প্রার্থী পদের বিষয়টি বিবেচনার মধ্যে নেওয়া হয় না। সেক্ষেত্রে পুরুষ প্রার্থীরাই প্রাধান্য পায়।
মহিলা, পুরুষ সমস্ত পঞ্চায়েত সদস্যরা মনে করেন একটি সামগ্রিক অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পরিকল্পনার জন্য নারীবান্ধব গ্রাম পঞ্চায়েত আবশ্যিক।
গবেষণা পত্রটিতে আরও দেখা গেছে মেয়েদের মধ্যে স্বসিদ্ধান্ত প্রায় অনুপস্থিত। পুরুষদের ব্যক্তিগত কর্তৃত্ব শারীরিক স্বায়ত্ত শাসন নিয়ে উদ্বেগ জানায়। বিশেষ করে পিতৃতান্ত্রিক গ্রামীণ পরিবেশে। রাজনীতিতে যোগদানের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে একটি লিঙ্গ বৈষম্য দেখা যায়। ২৩ জন মহিলা সদস্যের মধ্যে ১৭ জন বলেছেন তাদের রাজনীতিতে যোগদান স্বামীর সিদ্ধান্তে। ১৩ জন মহিলা উত্তর দাতা বলেছেন তাদের যেকোনও কাজে পরিবারের অনুমতির প্রয়োজন হয়। রাজনৈতিক আলোচনা ও কর্মকাণ্ডে মেয়েদের স্বাধীন স্থানের জন্য এখনো লড়াই করতে হয়। বিকেন্দ্রিকতা স্বত্ত্বেও বেশিরভাগ গ্রাম পঞ্চায়েতে নারী উন্নয়নের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয় না। প্রাতিষ্ঠানিক ও সাংস্কৃতিক বাধা নারীর অধিকার ও সুযোগের প্রবেশাধিকার সীমিত করে। পঞ্চায়েতের নারী সদস্যের উপর থাকে পুরুষ সদস্যদের আধিপত্য। ভারতের রাজনৈতিক দলগুলিতে মহিলা সদস্য এবং নেত্রীদের অংশ কম।
সংরক্ষণের ফলে পঞ্চায়েতে মহিলা নির্বাচিত প্রতিনিধি যথেষ্ট সংখ্যায় থাকলেও, সংসদ, বিধানসভা, রাজনৈতিক দলে এমন কোনও আইনের বাধ্যবাধকতা নেই। ফলে সার্বিকভাবে মহিলাদের পুরুষদের মতো সমান অধিকারের সম্ভাবনা কম। গবেষণা পত্রটিতে এসব বিষয়ও রয়েছে।
অমর্ত্য সেন অবাধ যুক্তিপূর্ণ আলোচনা, সামাজিক কথোপকথন এবং আলোচনা ভিত্তিক গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ভোটে কোনও একজনকে নির্বাচিত করা গণতন্ত্রের অন্যতম একটি অঙ্গ হতে পারে। কিন্তু তা একমাত্র অঙ্গ নয়। জনপরিসর এবং যুক্তি, গণতন্ত্রকে সজীব ও সচল করতে পারে। এর জন্য চাই কথোপকথন ও আলোচনা ভিত্তিক গণতন্ত্র। অমর্ত্য সেন চান চিন্তার বিস্তার। চিন্তার বিস্তার সামাজিক চয়নের উৎকর্ষ বাড়ায়, চিন্তা ভাবনার বিস্তার ঘটায়, গণতন্ত্রের অনুশীলন জোরদার করে।
মেয়েদের ক্ষমতায়ন এবং তাদের নিজস্ব সক্রিয় উদ্যোগ লিঙ্গ অসাম্য কমাতে পারে, বলেছেন অমর্ত্য সেন। মহিলাদের ক্ষমতায়ন হলে, শিশু মৃত্যু কমে, শিশুদের অপুষ্টি কমে, কমে মহিলাদের অপুষ্টিও। মা ক্ষমতাশালী হলে কন্যা সন্তান ও তার প্রাপ্য পায়।
লিঙ্গ সাম্যের প্রশ্ন, কেবলমাত্র কিছু প্রাতিষ্ঠানিক বা আইনগত বাধ্যবাধকতার ওপর নির্ভর করে না, নির্ভর করে জনপরিসর, আলোচনা ভিত্তিক গণতন্ত্র ও চিন্তার বিস্তারের ওপর।
 

Comments :0

Login to leave a comment