ঘটনার সূত্রপাত অন্ধ্রপ্রদেশে। ওডিশার কোরাপুট জেলার সোরাডা গ্রামের বাসিন্দা এডে সামুলু এবং তাঁর স্ত্রী এডে গুরু। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় ১৩০ কিলোমিটার দূরে অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমের সাঙ্গিভালাসার এক হাসপাতালে গুরুকে ভর্তি করেন সামুলু। তাঁর অবস্থার অবনতি হওয়ায় চিকিৎসকরা সামুলুকে স্ত্রীকে বাড়ি ফেরত নিয়ে যেতে বলেন। সেই মতো একটি অটোরিক্সা করে বাড়ি ফিরছিলেন তাঁরা। মাঝরাস্তায়, ভিজিয়ানগরমের কাছে প্রাণ হারান এডে গুরু। বাকি পথ মৃতদেহ বয়ে নিয়ে যেতে অস্বীকার করেন অটোচালক। তাঁকে ২হাজার টাকা দেওয়ার পরে কানাকড়িও অবশিষ্ট ছিলনা সামুলুর কাছে।
অগত্যা স্ত্রীর মৃতদেহ কাঁধে নিয়েই হাঁটতে শুরু করেন সামুলু। সেই দৃশ্য দেখে ভিজিয়ানগরম থানায় খবর দেন স্থানীয়রা। এরপর থানার ইন্সপেক্টর টিভি তিরুপতি রাও এবং সাব ইন্সপেক্টর কিরণ কুমার নাইডু ব্যক্তিগত উদ্যোগে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে অ্যাম্বুলেন্সের বন্দোবস্ত করেন। তাতে চড়েই অবশেষে বাড়ি ফেরেন গুরু এবং সামুলু।
এই ঘটনা থেকেই দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রকৃত চিত্র স্পষ্ট। ২০২২ সালে দাঁড়িয়েও অ্যাম্বুলেন্সের মতো জরুরি পরিষেবা দেশের গরীব মানুষের নাগালের বাইরে। ঘটনাচক্রে ভুক্তভুগীদের অধিকাংশই আদিবাসী, তপশিলী জাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর সম্প্রদায় ভুক্ত। ২০২৩ সালের ৫ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গেও একই ঘটনা ঘটেছিল। জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে মৃত স্ত্রীর দেহ কাঁধে চড়িয়ে হেঁটেই বাড়ি ফিরতে হচ্ছিল ক্রান্তির বাসিন্দা বাবা-ছেলেকে। তাঁদের সাহায্য করার অপরাধে গ্রেপ্তার হতে হয় এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্তাকে। বিগত কয়েক বছরে দেশের আরও বেশ কিছু প্রান্ত থেকে উঠে এসেছে একই ছবি। ২০১৬ সালে কালাহান্ডির দানা মাঝির ঘটনা আলোড়ন ফেলেছিল বিশ্ব জুড়ে।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, দেশের স্বাস্থ্যক্ষেত্রের এই বুনিয়াদি সমস্যার সমাধানে প্রয়োজন সরকারি বরাদ্দ বৃদ্ধি। সেই পথে না হেঁটে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ঢালাও বেসরকারীকরণ করে চলেছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার। তারফলে স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্রমেই দেশের সিংহভাগ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের মতো অধিকাংশ রাজ্যও কেন্দ্রের এই পথের পথিক। ব্যতিক্রম কেবলমাত্র কেরালার মতো হাতেগোনা কয়েকটি রাজ্য। তারফলেই প্রায় নিয়মিত এই ধরণের ঘটনার কথা সামনে আসছে।
Comments :0