ইচ্ছাকৃত ভাবে শরনার্থীদের পোল্যান্ড সীমান্তের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বেলারুশ। এই অভিযোগ তুলে বেলারুশ সীমান্তে বাড়তি সীমান্তরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করল পোল্যান্ড।
পোল্যান্ডের সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, বেলারুশ সীমান্তে নতুন করে ২ হাজার সীমান্তরক্ষী মোতায়েন করা হবে। সীমান্তরক্ষী বাহিনীর তরফে ১ হাজার জওয়ান চাওয়া হলেও দ্বিগুণ বাহিনী পাঠাবে ওয়ারশ।
পোল্যান্ডের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা পিএপি’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সহকারী মন্ত্রী মাসিয়েজ ওয়াসিক অভিযোগ করেছেন, বেআইনি অনুপ্রবেশে মদত দিচ্ছ বেলারুশ। তিনি জানিয়েছেন, ২ বছর ধরে লাগামছাড়া হারে বেলারুশ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ ঘটে চলেছে। এই সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে।
পোল্যান্ডের অভিযোগ, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার শরনার্থীদের ঢালাও ভিসা দিয়ে থাকে বেলারুশ। তারপর রাষ্ট্রীয় মদতে তাঁদের পোল্যান্ড সীমান্তের দিকে পৌঁছে দেওয়া হয়, যাতে সীমান্ত পেরিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলিতে ছড়িয়ে যেতে পারেন তাঁরা। পোল্যান্ড এই পন্থাকে ‘হাইব্রিড’ যুদ্ধ বলে চিহ্নিত করেছে।
শরনার্থী অনুপ্রবেশ রুখতে বাড়তি বাহিনী মোতায়েনের পাশাপাশি গোটা বেলারুশ সীমান্ত বরাবর লোহার পাঁচিল তৈরি করেছে পোল্যান্ড।
যদিও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের অভিমত, শরনার্থী ঠেকাতে নয়, বরং রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন ঘনিষ্ট বেসরকারি সেনাবাহিনী ওয়াগনারকে ঠেকাতেই বাড়তি সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের জুন মাসে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে সরিয়ে ক্ষমতা দখলের জন্য অভিযান শুরু করেছিল ওয়াগনার বাহিনী। সশস্ত্র অবস্থায় মস্কোর দিকে এগোতে শুরু করে একের পর এক ওয়াগনার কনভয়। যদিও রুশ সেনাবাহিনীর তৎপরতায় সেই অভ্যুত্থানের ছক ভেস্তে যায়। দেশছাড়া হয় ওয়াগনার। বর্তমানে বেলারুশে শিবির বানিয়ে রয়েছেন ওয়াগনার যোদ্ধারা।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা জানাচ্ছেন, আমেরিকা সহ গোটা পশ্চিমী বিশ্ব ওয়াগনারের অভ্যুত্থানকে সাজানো নাটক বলে মনে করে। বরং রাশিয়া ছাড়িয়ে ওয়াগনারকে বেলারুশে ঢোকার সুযোগ করে দিতেই গোটাটা ঘটানো হয়েছে। পশ্চিমী জোটের অভিযোগ, বেলারুশকে ঘাঁটি বানিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে অশান্তি পাকানোর ছক কষেছে রাশিয়া। আর সেই দাবার বোড়ে হল ওয়াগনার বাহিনী।
ওয়ারশ’র অভিযোগ, চলতি সপ্তাহে পোল্যান্ড সীমান্ত লাগোয়া অঞ্চলে সামরিক মহড়া চালিয়েছে বেলারুশ। মহড়া চলাকালীন ২টি বেলারুশিয়ান সামরিক হেলিকপ্টার পোল্যান্ড এবং লিথুয়ানিয়ার বায়ুসীমায় প্রবেশ করে। পোল্যান্ডের অভিযোগ, ইচ্ছাকৃত ভাবে প্ররোচনা সৃষ্টি করতে চাইছে মিন্স্ক।
যদিও বেলারুশের তরফে গোটাটাই ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। সেই আবহেই সীমান্তে বাড়তি সেনা মোতায়েনের খবর সামনে এসেছে।
প্রসঙ্গত, রুশ-ইউক্রেন সংঘাতে রাশিয়ার বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে পোল্যান্ড এবং লিথুয়ানিয়া উভয়েই। দুই দেশের তরফেই ইউক্রেনকে সামরিক সাহায্য করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের অপর একটি অংশের মতে, এই বাহিনী মোতায়েনের নেপথ্যে রয়েছে পোল্যান্ডের রাজনীতির নিজস্ব সমীকরণ। অক্টোবর মাসে সাধারণ নির্বাচনের মুখোমুখি হবেন পোল্যান্ডের রাষ্ট্রপতি আন্দ্রেজ ডুডা। নির্বাচনের মুখে বেকায়দায় রয়েছেন তিনি। দেশে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মুদ্রাস্ফীতি এবং বেকারত্ব। সেই অবস্থায় নজর ঘোরানোর জন্যই সীমান্তে বাড়তি বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত।
Comments :0