KASHMIRI JOURNALIST ARREST

পাঁচ মিনিটের জন্য আসুন বলে ডেকে গ্রেপ্তার সাংবাদিক

জাতীয়

Kashmir improsonment of journalists press freedom bengali news uapa

পাঁচ মিনিটের জন্য আমাদের অফিসে আসুন বলে কাশ্মীরের এক সাংবাদিককে ডেকে পাঠিয়ে গ্রেপ্তার করলো এনআইএ। গ্রেপ্তারির খবর পরিবারের কারোকে না জানিয়েই মঙ্গলবার তাঁকে চালান করা হয়েছে দিল্লিতে। এনজিওকে সন্ত্রাসবাদের জন্য অর্থ দেওয়ার অভিযোগে ইরফান মেহরাজকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওই একই মামলায় কাশ্মীরের মানবাধিকার কর্মী খুররম পারভেজকেও গ্রেপ্তার করে জেলে রেখে দিয়েছে এনআইএ।

ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ইরফান মেহরাজ টিসিএল লাইভের সম্পাদক। ক্যারাভান ম্যাগাজিন, আর্টিকেল ১৪, আল জাজিরার মতো জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সংবাদ মাধ্যমে কাশ্মীরের পরিস্থিতি তুলে ধরতেন। দিল্লিতে ২০২০ সালের ৮ অক্টোবর করা এক এফআইআরের ভিত্তিতে ইরফানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে এনআইএ জানিয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে অসংখ্য ধারায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। 

এরমধ্যে সন্ত্রাসবাদী কাজের জন্য তহবিল গঠন, সন্ত্রাসবাদী কাজের জন্য ষড়যন্ত্র, সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সদস্যপদ সংক্রান্ত অপরাধ, সন্ত্রাসবাদী সংগঠনকে সমর্থন ইত্যাদি। পাশাপাশি দানবীয় ইউএপিএ ধারাতেও অভিযোগ দায়ের করে দেওয়া হয়েছে। যাতে একটানা বছরভর অন্তত জেলে রেখে দেওয়া যায়।

ইরফানের বাবা মেহরাজ উদ্দিন ভাট একটি নিউজ পোর্টালকে জানিয়েছেন, এনআইএ যখন ইরফানকে ফোন করে তখন সে একটা খবর সংগ্রহের কাজে ছিল। এনআইএ’র আধিকারিকরা তাঁকে বলেন, শ্রীনগরে তাদের চার্চ লেনের অফিসে পাঁচ মিনিটের জন্য আসতে সোমবার বিকেলে। পরে আমরা জানতে পারি তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং মঙ্গলবার দিল্লি পাঠানো হবে।

ভাট বলেছেন, আমার ছেলে নির্দোষ। তাঁর কাজই তাঁর সম্পর্কে জোরালোভাবে কথা বলবে। আমার পূর্ণ বিশ্বাস আছে, সত্যের প্রতিষ্ঠা হবে এবং ও ন্যায়বিচার পাবে। অন্যদিকে, এনআইএ জানিয়েছে, বিভিন্ন এনজিও হাওয়ালা চ্যানেলের মাধ্যমে জম্মু-কাশ্মীরে অর্থ পাচার করছে কাশ্মীর উপত্যকায় সন্ত্রাসবাদী কাজের জন্য। এনআইএ এই ঘটনায় অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে বলেও জানানো হয়েছে।

এর আগেই একবার এনআইএ জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়েছিল ইরফানকে। জম্মু-কাশ্মীর কোয়ালিশন অব সিভিল সোসাইটি নামের ওই মানবাধিকার সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণেই এই জিজ্ঞাসাবাদ চালানো হয়েছিল। ওই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত থেকে মানবাধিকার নিয়ে গবেষণার কাজ করতেন ইরফান। জম্মু-কাশ্মীর কোয়ালিশন অব সিভিল সোসাইটি সংগঠনের বিরুদ্ধেও সন্ত্রাসবাদ বিরোধী তদন্তের মুখে পড়েছিল। সংগঠনের আহ্বায়ক পরিচিত মানবাধিকার কর্মী খুররম পারভেজকে ২০২১ সালে গ্রেপ্তার করা হয়। যা নিয়ে দুনিয়াজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়।

 
জার্মান সরকারি সংবাদ সম্প্রচার সংস্থা ডয়েস ভেলে-তেও গত দুই বছর ধরে নিয়মিত সংবাদ পাঠিয়েছেন। তাঁকে একাধিকবার সন্ত্রাসবাদ বিরোধী মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তদন্তকারী সংস্থা। ২০২০ সালে যখন তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়, সেই সময় তাঁর বৈদ্যুতিন সরঞ্জামগুলি বাজেয়াপ্ত করে এনআইএ। কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে জাতীয়, আন্তর্জাতিক স্তরের সংবাদ মাধ্যমে লাগাতার ইরফানের পাঠানো প্রতিবেদন প্রকাশিত হতে থাকে। যাতে কাশ্মীরের প্রকৃত ছবি উঠে আসে। 

বিশ্লেষকদের মতো আন্তর্জাতিক মহলে কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে মোদী সরকারকে যে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়, তার অন্যতম কারণ ইরফানের মতো কাজ করছেন যেসব সাংবাদিক, চিত্র সাংবাদিকরা। কাশ্মীরের সংঘাতের খবর, সরকারের দমনপীড়ন, মানুষের প্রতিবাদ- বিক্ষোভের খবর লাগাতার ইরফানের মাধ্যমে জেনেছে দেশ-দুনিয়া। একইভাবে সামাজিক রাজনৈতিক অর্থনৈতিক টালমাটাল পরিস্থিতির খবরও উঠে এসেছে ইরফানের প্রতিবেদনে।

 
সাংবাদিক ইরফান মেহরাজকে গ্রেপ্তারির সমালোচনা করেছে মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশন। এক বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিয়া আকর প্যাটেল বলেছেন, সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে সাংবাদিক ইরফান মেহরাজকে গ্রেপ্তার হাস্যকর। এই ঘটনা কাশ্মীরে দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসা মানবাধিকার লঙ্ঘনের আরও একটি উদাহরণ। জম্মু-কাশ্মীরে সংবাদ মাধ্যম এবং নাগরিক সমাজের ওপরেও এই আক্রমণ, যা দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসছে। কাশ্মীরে মতপ্রকাশের অধিকার ক্রমশ কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে।

ইরফান মেহরাজের মতো মানবাধিকার কর্মীদের উৎসাহিত এবং রক্ষা করা প্রয়োজন, নির্যাতন করা নয়। এই নির্যাতন এখনই বন্ধ করতে হবে। যেসব সাংবাদিক এবং মানবাধিকার কর্মী মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলি সামনে তুলে আনছেন, তাদের দমনপীড়নের নীতি ভারতের সরকারকে ছাড়তে হবে বলেও মন্তব্য করেছে অ্যামনেস্টি।

 

Comments :0

Login to leave a comment