ত্রিশ বছর আগে খুন হয়েছিলেন বাবা মঙ্গল হাঁসদা। পুত্র রাজেশ হাঁসদাও জমির লড়াইয়ের সেই ময়দানে খুন হলেন জমি মাফিয়াদের হাতে। বিহারের মাধোপুরা জেলায় মুরলিগঞ্জ ব্লকে কমরেড রাজেশ হাঁসদাকে গুলি করে হত্যা করেছে জমি মাফিয়ারা।
কমরেড মঙ্গল হাঁসদার লড়াইকে স্মরণ করে শোকবার্তা জানিয়েছে সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটি। জমি মাফিয়া এবং এলাকার পরিচিত অপরাধীদের নামে এফআইআর দায়ের হয়েছে। ১ নভেম্বর মাধোপুরা জেলা সদরে পুলিশ সুপারিন্টেন্ডেন্টের দপ্তরের সামনে অপরাধীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে সিপিআই(এম)।
কমরেড মঙ্গল হাঁসদাকে খুনের খবর পেয়ে মঙ্গলবারই মাধোপুরায় যান সিপিআই(এম) বিহার রাজ্য সম্পাদক অবধেশ কুমার। পৌঁছান পার্টির নেত্রী রামপরী দেবী সহ পার্টির নেতানত্রীরা। মুরলিগঞ্জে কমরেড হাঁসদার দেহ নিয়ে বিশাল মিছিলও হয়।
অবেধেশ কুমার জানিয়েছেন, ‘‘লড়াই করেই জমির অধিকার রেখেছেন এই এলাকার আদিবাসী এবং দলিত বহু পরিবার। জমি মাফিয়ারা হুমকিও দিয়ে চলছিল বেশ কয়েক বছর ধরে। তারাই খুন করেছে কমরেড রাজেশ হাঁসদাকে। লড়াইয়ের ময়দানেই নিহত হয়েছেন তিনি। গত তিন দশক ধরে এখানকার প্রায় তিনশো একর জমিতে ভূমিহীন পরিবারগুলি রয়েছে, চাষ করছে প্রতিদিন লড়াই করে।’’
১৯৯২ সালে জমির লড়াইয়েই শহীদ হয়েছিলেন মঙ্গল হাঁসদা। তাঁরই পুত্র রাজেশ। কোসি নদীর কাছে মুরলিগঞ্জের এই তিনশো একর জমির দখল রাখতে শহীদ হলেন চারজন। কমরেড মঙ্গল হাঁসদার সঙ্গেই খুন করা হয়েছিল সিপিআই(এম)’র আরেক কর্মী কপিলেশ্বর সদাকে। তখন সরকারি সিলিং বহির্ভূত এই জমির দখল নিতে লড়াই করেছিলেন আদিবাসী এবং দলিত বহু পরিবারের মানুষ। এখন জমির দখল রাখতে খুন হতে হচ্ছে।
মুরলিগঞ্জের এই এলাকার কাছ দিয়ে গিয়েছে নতুন রাস্তা। তারপর জমির দাম বেড়েছে চড়চড়িয়ে। জমি মাফিয়াদের তৎপরতাও বেড়েছে বহুগুন।
অবধেশ কুমার বলেছেন, ‘‘বিহার জুড়ে এমন সিলিং বহির্ভূত জমিতে বসবাসরত পরিবারগুলির পাট্টার দাবিতে লড়াই করছে সিপিআই(এম)। কয়েকমাসের মধ্যে একাধিক জেলায় এই দাবিতে হয়েছে আন্দোলন। এদের উচ্ছেদ করে বিপুল মুনাফা কামাতে নেমেছে নব্য ধনীরা। গরিব ভূমিহীনদের বসতি এবং জীবিকার লড়াই চলবে। সেই লড়াইকে আরও জোরালো করে দিলেন কমরেড রাজেশ হাঁসদা।’’
সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন যে কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি সরকার গঠনের পর থেকে রাজ্যে উচ্ছেদ অভিযান বেগ পায়। নীতীশ কুমার বিজেপি’র সহযোগী থেকেছেন দীর্ঘদিন। উত্তর প্রদেশের মতো তাঁর প্রশাসন বুলডোজার নামিয়ে সরকারি খাস জমিতে বসবাসরত গরিব মানুষকে উচ্ছেদ করতে থাকে। তার বিরুদ্ধে আন্দোলনও চলতে থাকে। নীতীশ কুমার এখন আরজেডি এবং কংগ্রেসের জোটে রয়েছে। সমর্থন নিয়েছেন বামপন্থীদের। সরকারি স্তর থেকে বুলডোজারের দাপট কিছুটা কমেছে। কিন্তু এলাকায় এলাকায় নতুন ধনী বর্গ তৈরি হয়েছে। নানা ব্যবসায় টাকা খাটায় এরা। জমির দাম বাড়লে এরাই সিলিং বহির্ভূত জমি থেকে উচ্ছেদে তৎপর হয়ে উঠছে।
অবধেশ কুমার বলেছেন, ‘‘পুলিশ, প্রশাসন এবং রাজনৈতিক স্তরে নব্য ধনী বর্গের প্রভাব প্রচুর। ফলে দীর্ঘমেয়াদী লড়াই চালাতে হচ্ছে আদিবাসী, দলিত মানুষের অধিকারের জন্য।’’
Comments :0