HOUSING SCAM

সমীক্ষক দলের উপর খবরদারি চালাচ্ছে তৃণমূল নেতারা

রাজ্য

CPIM west bengal panchayat election TMC BJP যোগ্য হলেও পাকা বাড়ি তৈরির টাকা পাচ্ছেন না গ্রাম বাংলার মানুষ

সমীক্ষা করতে বাড়িতে ঢুকেছেন বিডিও অফিসের কর্মীরা। পাশে এসে দাঁড়ালেন স্থানীয় এক তৃণমূল নেতা। 


বাড়ির মালিককে প্রশ্ন করছেন সমীক্ষকরা। জবাব দিচ্ছেন সেই তৃণমূল নেতা। বাড়ির মালিকের কোনও প্রশ্নে সন্দেহ হয়েছে সমীক্ষক দলের। তিনি প্রশ্ন করলে কিছুটা ধমকের সুরে জবাব দিচ্ছেন সেই তৃণমূল নেতাই। 


সমীক্ষাকারী দলের কাজে এইভাবেই খবরদারি চালাচ্ছে তৃণমূলের নেতারা। পূর্ব মেদিনীপুরের অনেক ব্লক এলাকার গ্রামগুলিতে আবাস যোজনার জন্য তথ্য তালাশে গিয়ে এই অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরছেন বিডিও অফিসের কর্মীরা, আশা কর্মীরা। 
তাঁদের আরও কি উপলব্ধি? 


জেলার তমলুক এলাকার এক বিডিও অফিসের কর্মী বলেন,‘‘সমীক্ষার কাজ শেষ করে বাড়ি ফেরার পর একের পর এক ফোন আসতে থাকে। ফোনগুলি কখনও এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য বা শাসকদলের নেতারা করেন। আবার আবাস যোজনা তালিকায় নাম থাকা কোনও ব্যক্তি বাড়িতেও পৌঁছে যান। বাড়ি পৌঁছে ওই ব্যক্তি স্থানীয় শাসক দলের নেতার নাম করে বলেন অমুক বলে দিয়েছেন আমার নামটা যেন তালিকায় থাকে।’’


২০১৮ সালে দারিদ্র সীমার নিচে বসবাসকারীদের আবাস যোজনার তালিকায় আনতে একটি তালিকা তৈরি হয়েছিল। সেই তালিকাতে যাঁদের নাম ছিল না তাঁরা সাদা কাগজে আবেদন করেছিলেন। পরে একটি অ্যাপ’র মাধ্যমে সমীক্ষা হয়েছিল বাড়ি বাড়ি। সেই সমীক্ষার পরে চূড়ান্ত তালিকা হয়েছিল। এক একটি গ্রাম পঞ্চায়েতে গড়ে ৫০০ থেকে ৫৫০ জনের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। 


তবে এই তালিকা নিয়েও ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে প্রথম থেকেই। এলাকার পঞ্চায়েত এবং প্রধানরা নিজেদের পছন্দমত এবং দলীয় লোকেদের নাম সেই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। এই অভিযোগ নিয়ে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতে বিক্ষোভ চলেছে। এলাকায় এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ছিলোই। মাঝে আবাস যোজনার প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ বন্ধ হয়ে। তালিকায় নাম থাকা ব্যক্তিদেরও ঘরের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। আবার এই প্রকল্পের পুনরায় সমীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। সেই সমীক্ষা চলছে ২০১৮ সালের চূড়ান্ত তালিকার ভিত্তিতেই। 


এই সমীক্ষা মূলত করছেন বিডিও অফিসের কর্মী, গ্রাম পঞ্চায়েতের কর্মচারীরা। তাঁদের সাথে যুক্ত হয়েছেন এলাকার আশা কর্মীরা। কিন্তু এই জেলায় সমীক্ষকদের মানসিক হেনস্তার ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ সমীক্ষাকারীদের।


নন্দকুমার এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আশা কর্মী বলেন,‘‘বিডিওর নির্দেশ রয়েছে মোট ১৭ দফা নির্ণায়ক অনুযায়ী সমীক্ষা সঠিকভাবে করার। নির্ণায়ক গুলির মধ্যে কয়েকটি যেমন রয়েছে পাকা বাড়ি, ১০ হাজার টাকা মাসিক আয়, মোটরবাইক বা টোটো এগুলি থাকলে সেই ব্যক্তি এই প্রকল্পের যোগ্য নন। আবার মৃত, উদ্বাস্তু অথচ তাদের নাম তালিকা রয়েছে সেই সমস্ত ব্যক্তিরাও এই প্রকল্পে আওতাধীন নয়। কিন্তু যখন সমীক্ষা করতে যাচ্ছি সঠিক কথা বলছেন না অনেকেই। এক প্রকার তাঁদের বাড়ির ভেতরে ঘুরে ঘুরেই এই সমস্ত বিষয়গুলি দেখা হয়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এলাকার প্রভাবশালী শাসকদলের নেতারা পৌঁছে যাচ্ছেন। তারাই বলে দিচ্ছেন, এইটা বাড়ি বা এইটা নেই এমন সমস্ত কথা। সরাসরি অভিযোগ করার সাহসও হচ্ছে না। যা করার সমীক্ষার ফর্মেই করতে হচ্ছে আমাদের। কিন্তু চূড়ান্ত তালিকা যখন বেরোবে তখন আমাদের নিরাপত্তা কি হবে তা ভেবেই চিন্তা হচ্ছে।’’


পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এক বিডিও বলেন,‘‘নির্ণায়কগুলি অনুযায়ী সমীক্ষা করতে বলা হয়েছে। যদি কোথাও কোনও হুমকি অথবা প্ররোচনা আসে তাহলে অভিযোগ করতে বলা হয়েছে।’’
কিন্তু বিডিও-দের কথাতেও ভরসা পাচ্ছেন না সমীক্ষকরা। তাদের কথায়,‘‘এখন অভিযোগ করে দিলে হয়তো ব্যবস্থা গ্রহণ হবে। কিন্তু ভবিষ্যতে আমাদের পরিবারের নিরাপত্তা থাকবে কি?’’ 


এই সমীক্ষার সময়ে সিভিক পুলিশও এক প্রকার তৃণমূলের নেতার ভূমিকা নিচ্ছে। জেলার সমস্যা প্রবণ এলাকাগুলিতে সমীক্ষকদের সঙ্গে একজন করে সিভিক পুলিশ থাকছে। তবে সিভিক পুলিশ এলাকার হওয়ার ফলে তারাও সমীক্ষক দলকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করছেন অনেকে।


এই সমীক্ষার বিষয়ে এলাকার মানুষের বক্তব্য কি? নন্দকুমার ব্লকের সাওরাবেরিয়া জালপাই গ্রাম পঞ্চায়েতের শেখ আশু আলি গায়েন বলেন,‘‘তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও আবাস যোজনার ঘর পাইনি, একাধিকবার আবেদন করেছি গ্রাম পঞ্চায়েতে। এবারেও দুয়ারে সরকারে আবেদন করেছি। কিন্তু ঘর আসেনি। অথচ যাদের পাকা বাড়ি আছে তারা কেবল শাসক দলের লোক হওয়ায় তাদের আবাস যোজনার টাকা ঢুকেছে।’’
 

Comments :0

Login to leave a comment