প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি সামনে আসার পর রাজ্য সরকার আদালতে বললো, টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়া হয়েছে, এমন প্রমাণ এখনও সামনে আসেনি। প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িয়ে তৎকালীন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য সপরিবারে জেলে গিয়েছেন। তাঁরা এখন জামিনে মুক্ত আছেন। এই মামলায় কয়েকশো কোটি টাকা বেআইনি লেনদেন হয়েছে বলে ইডি আদালতকে জানিয়েছে। মানিক ভট্টাচার্য ছাড়াও কমপক্ষে ১১ জন জেলে গিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায়।
অথচ মঙ্গলবার এই মামলার শুনানির সময় সরকারের যুক্তি, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে পর্ষদের কোন আধিকারিক টাকা নেননি। তাছাড়া টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়া হয়েছে একথা প্রমাণিত হয়নি। ফলে চাকরি বাতিলের প্রশ্ন উঠছে কেন? মঙ্গলবার টেট প্রাথমিকে ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের মামলায় রাজ্য সরকারের তরফে এই সওয়ালই করা হল কলকাতা হাইকোর্টে।
এদিন অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্ত আদালতে বলেছেন, ২০১৬ সালের টেট শিক্ষক নিয়োগের আগে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে, ইন্টারভিউ নেওয়া হয়েছে। তবে অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট হয়নি। এজি বলেছেন, কারোর নম্বর বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে তার চাকরি বাতিল হতে পারে না। টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়া হয়েছে সেই অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। ফলে চাকরি বাতিল হবে কেন? এজি বলেছেন, শিক্ষা পর্ষদ ১ লক্ষ ২৫ হাজার প্রার্থীর পরীক্ষা নিয়েছে তাঁদের মধ্যে ৪২ হাজারের কিছু বেশি প্রার্থীকে নিয়োগ করেছে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে প্রাথমিক টেটের ৩২ হাজার শিক্ষককের চাকরি বাতিলের নির্দেশ হয়েছিল। সেই নির্দেশের ওপর স্থগিতাদেশ রয়েছে। মঙ্গলবার সেই মামলার শুনানি শুরু হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রত কুমার মিত্রের এজলাসে এই মামলার শুনানির প্রথমে রাজ্য সরকার তার সওয়াল শুরু করেছে। এর আগে এই মামলা শুনানির কথা ছিল বিচারপতি সৌমেন সেনের এজলাসে। বিচারপতি সেন গত ৭ এপ্রিল এই মামলা থেকে সরে দাঁড়ান। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এজলাসে এই মামলা শুনানি নির্দিষ্ট করেছেন। এদিন ডিভিসন বেঞ্চ বলেছে, হাইকোর্টে গ্রীষ্মের ছুটির পর আগামী ১২ জুন ফের শুনানির জন্য রাখা হবে।
২০১৬ সালের প্রাথমিক নিয়োগে ইন্টারভিউ থেকে শুরু করে অ্যপ্টিটিউড টেস্ট নিয়ে অস্বচ্ছতার অভিযোগ উঠেছিল। অভিযোগ ছিল, প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত নন এমন প্রার্থীরা শিক্ষকপদে চাকরি পেয়েছেন। তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এই নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল করে নির্দেশ দিয়েছিলেন ৪ মাস এই শিক্ষকরা স্কুলে যাবেন। এর মধ্যেই এই শিক্ষক পদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করবে এবং নিয়োগ বিধি মেনে ইন্টারভিউ নিতে হবে। এই ৩২ হাজার শিক্ষক নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন বলেও কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল। এই নির্দেশের পর শিক্ষকদের একটি অংশ ডিভিসন বেঞ্চে মামলা দায়ের করেছিলেন। বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিসন বেঞ্চ তার নির্দেশে চাকরি বাতিলের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করে ওই শিক্ষকদের নতুন করে ইন্টারভিউ দিতে হবে বলে জানিয়েছিল। ডিভিসন বেঞ্চের এই নির্দেশের বিরোধিতা করে শিক্ষকদের একটি অংশ সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন। ২০২৩ সালে শীর্ষ আদালত নিয়োগ বাতিলের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করে মামলাটি পুনরায় শুনানির জন্য কলকাতা হাইকোর্টে পাঠিয়ে দিয়েছিল।
primary recruitment
প্রাথমিকের নিয়োগে টাকা নিয়ে চাকরির প্রমাণ নেই, দাবি রাজ্যের!

×
Comments :0