রাজ্যে নতুন করে করোনা আক্রান্তের খবর মিলেছে। কলকাতায় এক জন এবং মগরাহাটে দুজনের শরীরে মিলেছে করোনার ওমিক্রন ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট। তবে কি কয়েক বছর আগের সেই ভয়াবহ ছবি আবার ফিরে আসবে? সম্প্রতি সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ে নতুন করে কোভিড সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। এ বার সেই আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে ভারতেও দেখা মিলছে নতুন করে কোভিড সংক্রমণের। মাস কয়েক আগে ইউরোপের বেশ কিছু দেশের ক্ষেত্রে পুনরায় সতর্কবার্তা জারি হওয়ার পরেই ফের মাথা চাড়া দিয়েছে ভারতেও। করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ল পশ্চিমবঙ্গেও। ভারতের প্রধান শহরগুলিতে কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দিল্লি, মুম্বাই এবং বেঙ্গালুরুতে নতুন সংক্রমণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। ওই রাজ্যের প্রশাসন বলছে যে আতঙ্কের কোনও কারণ নেই। হাসপাতালগুলিকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে সুরক্ষা পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। দিল্লি স্বাস্থ্য দপ্তরের তথ্য অনুয়ায়ী দিল্লিতে ২৩ জন নতুন কোভিড-১৯ আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। যা প্রায় তিন বছরের মধ্যে প্রথম উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী পঙ্কজ সিং বলেছেন, যে সকল রোগীর অবস্থা স্থিতিশীল। হালকা, ফ্লুর মতো লক্ষণ রয়েছে তাদের। তিনি আরও বলেন যে একটি বিশেষ পর্যবেক্ষণ দল গঠন করা হয়েছে এবং সমস্ত হাসপাতালকে বিছানা, অক্সিজেন এবং ওষুধ পর্যাপ্ত রাখতে বলা হয়েছে।
কর্ণাটকে, ৩৫ জন সক্রিয় করোনা সংক্রমণের মধ্যে ৩২ জনই বেঙ্গালুরু থেকে। নয় মাস বয়সী একটি শিশু কোরোনা পজিটিভ হয়েছে। বাণী বিলাস হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে তার। স্বাস্থ্য আধকারিক বলছেন যে গত ২০ দিন ধরে কোভিড সংক্রমণের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
হরিয়ানায় চারটি নতুন কোভিড-১৯ আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। যার মধ্যে গুরগাঁও এবং ফরিদাবাদে দুটি করে রোগী রয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ সাম্প্রতিক বিদেশ ভ্রমণের করেননি। রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরতি সিং রাও বলেছেন যে স্বাস্থ্য বিভাগ জননিরাপত্তা এবং প্রস্তুতি নিশ্চিত করার জন্য পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তিনি আরও বলেছেন, আক্রান্তদের মধ্যে দুইজন পুরুষ এবং দুইজন মহিলা রয়েছেন। তাদের শরীরে হালকা লক্ষণ রয়েছে এবং নিয়মিত চিকিৎসা তত্ত্বাবধানে হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। মন্ত্রী আরও বলেন যে এই মুহূর্তে আতঙ্কের কোনও কারণ নেই। রাজ্যের হাসপাতালগুলিতে বেড এবং জরুরি চিকিৎসা সামগ্রী, অক্সিজেন, ভ্যাকসিন প্রস্তুত রাখতে বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই—তবে সতর্ক থাকুন। চিকিৎসকরা বলছেন যে বর্তমান নতুন ভ্যারিয়্যান্ট সম্ভবত জেএন ১ নতুন প্রকরণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হালকা লক্ষণ দেখা দেয়। তবুও, মাস্ক পরা, স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখার পরামর্শ দেন।
সংবাদ সংস্থার খবর বলা হয়েছে, নয়ডায় প্রথম কোভিড রিপোর্ট ধরা পড়েছে। নয়ডার সেক্টর ১১০’র করোনা আক্রান্ত ওই মহিলাকে হোম আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। তাঁর পরিবারের সদস্যদের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধ নগরের প্রধান চিকিৎসাক আধিকারিক সিএমও নরেন্দ্র কুমার জানিয়েছেন, ভারতের সাম্প্রতিক সময়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণের সংখ্যা বৃদ্ধির মধ্যে উত্তর প্রদেশের নয়ডায় এটিই প্রথম ঘটনা। তিনি আরও জানান যে, মহিলাটি কয়েকদিন আগে ট্রেনে সফর করেছিলেন। এর আগে, ঋষিকেশ এইমস-এ তিনটি কোভিড-১৯ রোগীর খবর পাওয়া গিয়েছিল, যা দেশজুড়ে সাম্প্রতিক সময়ে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধিতে আরও একধাপ এগিয়েছে। সংবাদ সংস্থার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ঋষিকেশ এইমস’র পরিচালক মীনু সিং জানিয়েছেন যে, তিনজন রোগীর মধ্যে একজনকে ইতিমধ্যেই হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আরেকজন রোগী স্থানীয় বাসিন্দা। তাঁকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। আরেকজন বদ্রীনাথ যাত্রার জন্য এখানে এসেছিলেন গুজরাট থেকে। ডাঃ সিং আরও বলেছেন যে কোভিডের এই রূপটি খুব ক্ষতিকারক নয়, তবে মানুষের সতর্ক থাকা উচিত।
ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপোলো হাসপাতালের ইন্টারনাল মেডিসিনের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডাঃ সুরঞ্জিত চ্যাটার্জী বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিক্ষিপ্ত কেস দেখা যাচ্ছে, যা বিরল। এমনকি বর্তমান কেসগুলিও খুব সহজেই মোকাবিলা করা হচ্ছে। সংবাদ সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, গত তিন বছরে এই প্রথম দিল্লিতে ২৩টি কোভিড কেস দেখা গিয়েছে। তবে সবক’টিই মৃদু সংক্রমণ, আক্রান্তের বাড়াবাড়ি রকমের সমস্যা হয়নি। কোনও মৃত্যুও ঘটেনি। ১৯শে মে পর্যন্ত, ভারতে সক্রিয় কোভিড-১৯ কেসের সংখ্যা ২৫৭।
মহারাষ্ট্র, কর্নাটক,অন্ধ্রপ্রদেশ এবং দিল্লির বিভিন্ন জায়গা থেকে আরও বেশি নতুন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা পাওয়া গিয়েছে। দিল্লিতে নতুন করে ২৩ আক্রান্ত। অন্ধ্রপ্রদেশে শেষ ২৪ ঘন্টায় চার জন, তেলেঙ্গানায় একজন এবং বেঙ্গালুরুতে নয় মাসের শিশুও কোভিড আক্রান্ত হয়েছে। ইতিমধ্যেই কর্নাটক, তামিলনাড়ু, গুজরাট, দিল্লি, হরিয়ানা, রাজস্থান এবং সিকিমে আক্রান্তের হদিশ মিলেছে। এবার করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ল পশ্চিমবঙ্গে। কলকাতায় ১ জন। এবং মগরাহাটে করোনা আক্রন্ত হয়েছেন ২ জন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট ২নম্বর ব্লকে এক কিশোর ও এক তরুণী কোভিড সংক্রমিত হয়েছেন। জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের সূত্র অনুযায়ী, শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে আসেন ২ জন। তাদের নমুনা পরীক্ষায় কোভিড পজিটিভ রিপোর্ট ধরা পড়ে। স্বাস্থ্যজেলার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, এনিয়ে এখনও আতঙ্কের তেমন কিছু নেই। ওই দু’জন সুস্থই রয়েছেন, তাঁদের বাড়িতেই রয়েছেন। পরিস্থিতি আতঙ্কের নয়।
Covid-19
দেশে বাড়ছে করোনা, রাজ্যে সংক্রমিত তিন

×
Comments :0