‘‘মানুষ যখন রাজ্য জুড়ে হকের দাবিতে, চোর তাড়াতে পথে নামছে, যুবরা যখন কাজের দাবিতে পথে নামছে তখন ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে হাঙ্গামা তৈরি করছে তৃণমূল এবং বিজেপি।’’ হাওড়ার সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলনে একথা বললেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
সেলিমের কথায়, গ্রামে শহরে মানুষ যখন চুরির বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিরুদ্ধে তখন রাজ্যে সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়ানো হচ্ছে। গতকাল রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় রামনবমীর মিছিলে তৃণমূল এবং বিজেপির বিভিন্ন স্তরের নেতাদের একসাথে দেখা গিয়েছে। সেই প্রসঙ্গ টেনে সেলিম এদিন বলেন, ‘‘তৃণমূল এবং আরএসএস’এর যৌথ বাহিনী হইহই করে রাম নবমীর নাম করে রাস্তায় নেমেছে। গ্রামের মানুষ যখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাগছে তখন পঞ্চায়েত ভোটের আগে ফের সাম্প্রদায়িক বিভাজন করতে চাইছে বিজেপি এবং তৃণমূল।’’ সেলিম আরও বলেন, ‘‘রাজ্যে দাঙ্গা লাগাতে চাইছে তৃণমূল এবং বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রী যদি জেনেই থাকেন যে এই ধরনের মিছিল থেকে কোন অশান্তি হতে পারে তাহলে তাঁর নিজেদের দলের নেতাদের কেন আরএসএস’এর সঙ্গে মিছিলে যেতে বলেছিলেন?’’
হাওড়ার ঘটনার পিছনে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মমতা ব্যানার্জি। সেই প্রসঙ্গ টেনে সেলিম বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলছেন পুলিশ শিথিলতা দেখিয়েছে। পুলিশমন্ত্রী তো তিনি নিজেই, পুলিশের শিথিলতার দায় তিনি এড়িয়ে যেতে পারেন না। হাওড়ায় যখন বামেরা নবান্ন অভিযানের মিছিল করতে গেছিল তখন পুলিশের বিশাল বাহিনী রোবোকোব, জল কামান নিয়ে আক্রমণ করেছিল। আর যখন সাম্প্রদায়িক হিংসার এই মিছিল হচ্ছে তখন কেন পুলিশ আগাম ব্যবস্থা নেয়নি? পুলিশের ইনটেলিজেন্স কী করছিলো?
২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকেই প্রতিবছর রাম নবমী উৎসবকে কেন্দ্র করে রাজ্যে সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা সামনে আসছে। সেলিম বলেন, ‘‘রাজ্যের সংস্কৃতির ইতিহাসে উৎসব নতুন নয়। কিন্তু এই ধরনের উৎসব আমরা কখনও দেখিনি। উৎসব মানে কোন উপাসনা কেন্দ্রে বা মণ্ডপে মিলিত হয়ে তা পালন করা, প্রার্থনা করা। কিন্তু আরএসএস রাম নবমীর নামে মসজিদের দিকে অস্ত্র হাতে নিয়ে এগিয়ে যায়। পুলিশ আটকায়নি কেন?’’
শুক্রবারের সাংবাদিক সম্মেলনে সেলিম জানিয়েছেন আগামী ২ এপ্রিল হাওড়ার শিবপুরে শান্তি মিছিল করা হবে। দাঙ্গাবাজ তৃণমূল এবং বিজেপি বিরোধী সবাইকে আমরা শান্তির জন্য সঙ্গে চাই।
রেড রোডে মুখ্যমন্ত্রীর ধর্না নিয়েও সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর শাসক দলকে নিশানা করেছেন সেলিম। উল্লেখ্য মমতা বৃহস্পতিবার ধর্না শেষ হওয়ার সময় বলেন যে তিনি কোন ভাবে বিজেপি বিরোধী জোট ভাঙতে দেবেন না। এদিন জবাবে সেলিম বলেন, ‘‘সরকারি টাকায় দলীয় কর্মসূচি হচ্ছে। ওটা আসলে মমতা কার্নিভাল। ২০১৯ সালে যখন ধর্নায় বসেছিলেন তখন চন্দ্রবাবু নাইডু, তেজস্বী যাদবরা এসেছিলেন। কিন্তু এবার কেউ আসেননি। আসলে কেউ চোরেদের সাথে থাকতে চায় না।’’
রাজ্যের দাবি আদায়, বঞ্চনার বিরুদ্ধে লোকসভায় এবং রাজ্যসভায় তৃণমূল সাংসদদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক।
এদিন সেলিম বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে ধর্না। কিন্তু বিজেপির দুর্নীতি, আদানি, লোলিত মোদীদের নিয়ে কোন কথা তিনি বলেননি। উল্টে সিপিআই(এম), গণশক্তির বিরুদ্ধে কথা বলে গিয়েছেন। সরকারি কর্মচারিদের তিনি চোর বলেছেন।’’ শুক্রবারও ১০০ দিনের টাকা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি তুলেছেন সেলিম।
Comments :0