BJP TERROR

শহীদের দেহ ছিনিয়ে নিতে চাইল পুলিশ, রুখল জনতাই

জাতীয়

BJP TERROR TRIPURA CPIM ত্রিপুরা পুলিশের সদর দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ সিপিআই(এম) কর্মী সমর্থকদের

ইট দিয়ে থেঁতলে কমরেড শহীদ মিঞাকে বিজেপি খুন করেছিল বুধবারই। বৃহস্পতিবার তাঁর দেহ সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল ত্রিপুরার বিজেপি সরকারে পুলিশ। যদিও সিপিআই(এম)’র প্রতিরোধে শেষ পর্যন্ত তাঁর দেহ পরিবারের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হয় প্রশাসন।

সিপিআই(এম) ত্রিপুরা রাজ্য কমিটি জানিয়েছে, আগরতলা জিবি হাসপাতালে কমরেড শহীদ মিঞার দেহের ময়নাতদন্ত হয়। বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর পরিবারের সদস্যরা শেষকৃত্যের জন্য দেহ নিতে হাসপাতালে পৌঁছায়। পুলিশ দেহ হস্তান্তর করতে অস্বীকার করে। শহীদ মিঞার পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, দেহ নিতে গেলে তাঁদের সঙ্গে অভব্য আচরণ করা হয়। মারধরেরও অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। পুলিশের একাংশের দাবি, ‘উপর মহল’ থেকে পরিবারের হাতে দেহ তুলে না দেওয়ার বিষয়ে চাপ দেওয়া হয়। বিজেপি’র আশঙ্কা ছিল দেহ নিয়ে মিছিল হলে জনরোষ তীর হতে পারে। সেই ভয় থেকেই পুলিশকে ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ। 

জনতার পথে নামা যদিও ঠেকানো যায়নি। পুলিশি অপদার্থতার বিরুদ্ধে পথে নামেন সিপিআই(এম) ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির সম্পাদক জীতেন্দ্র চৌধুরী সহ   সিপিআই(এম)’র শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। তাঁরা রাজ্য পুলিশের সদর দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। সিপিআই(এম)’র চাপে পুলিশের একাংশ দেহ ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে সক্রিয় হয়। সিপিআই(এম) দেহ নিয়ে অশান্তি করতে পারে, এই দাবি উড়িয়ে দেন ত্রিপুরা পুলিশেরই এক শীর্ষকর্তা। সিপিআই(এম) ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির ফেসবুক পেজের একটি ভিডিওতে এই বৃত্তান্ত তুলে ধরা হয়েছে।  

দীর্ঘদিন পরে বুধবার চড়িলাম আঞ্চলিক কমিটির অফিস খোলার উদ্যোগ নেন সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ। ২০১৮ সাল থেকে এই অফিস অবরুদ্ধ করে রেখেছে বিজেপি। বারবার এই অফিস আক্রান্ত হয়েছে। এই কর্মসূচির আগাম অনুমতিও নেওয়া হয়েছিল সিপাহিজলা জেলা এবং বিশালগড় মহকুমা পুলিশের থেকে। 

বুধবার সকালে সেই কর্মসূচির জন্য চড়িলাম আঞ্চলিক  কমিটির দপ্তরের সামনে জড়ো হন সিপিআই(এম) নেতাকর্মীরা।  সেই সময় তাঁদের চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলে বিজেপির সশস্ত্র বাহিনী। জমায়েত লক্ষ করে ঢিল, পাথর এবং বোল্ডারের অংশ ছোঁড়া শুরু হয়। জমায়েতের ছড়িয়ে থাকা অংশের মানুষকে রাস্তায় ফেলে যথেচ্ছ মারধর করা হয়। সেই তান্ডবের মুখে পড়ে প্রাণ হারান শহীদ মিঁঞা।

কমরেড শহীদ মিঞার দেহ নিয়ে চড়িলামের উত্তরমুড়া গ্রামে তাঁর বাড়িতে পৌঁছায় সিপিআই(এম)’র প্রতিনিধি দল। বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। এদিন শহীদ মিঞার শেষযাত্রায় কার্যত মানুষের ঢল নামে। কমরেড শহীদ মিঞার শেষযাত্রায় জিতেন্দ্র চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। 

ত্রিপুরা রাজ্য পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ জানিয়ে ডিজি’র কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে সিপিআই(এম)’র তরফে। 

এদিন তিপ্রা মোথার একটি প্রতিনিধি দল শহীদ মিঞার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। শোকগ্রস্ত কৃষক পরিবারটিকে যথাসম্ভব সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দেন তাঁরা। ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেসের তরফেও এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করা হয়েছে। 

এদিনের ঘটনার প্রসঙ্গে জিতেন্দ্র চৌধুরী বলেন, তিপ্রা মোথার সভাপতি এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির সঙ্গে আমার ফোনে কথা হয়েছে। উভয়ই এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন। ৫৭ মাস ধরে বিজেপি হাতেগোনা কিছু পুলিশ অফিসারকে নিয়ে রাজ্যে অশান্তি সৃষ্টি করে চলেছে। কিন্তু এভাবে আর চলতে দেওয়া হবে না। সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি আইনের শাসন ফেরাতে ঐক্যবদ্ধ ভাবে আন্দোলনে নামবে। 

বৃহস্পতিবার গোটা ত্রিপুরা জুড়ে অজস্র বিক্ষোভ মিছিল করে সিপিআই(এম)। এদিন অমরপুর, কুমারঘাট, বিলোনিয়া, খোয়াই, উদয়পুর, পানিসাগর, রাজনগর, লংতড়াই ভ্যালি, আগরতলা, কমলপুর, তেলিয়ামুড়া, গন্ডাছড়া প্রভৃতি জায়গা থেকে মিছিলের খবর মিলেছে। এদিন সন্ধ্যাবেলা ত্রিপুরার আইনশৃঙ্খলার অবনতির বিষয়ে রাজ্য পুলিশের ডিজি’র সঙ্গে দেখা করেন জিতেন্দ্র চৌধুরী। 

Comments :0

Login to leave a comment